বঙ্গবন্ধু ও তাঁর আদর্শের শত্রু

বঙ্গবন্ধু পাল্টে দিতে চেয়েছিলেন দেশটা। জনদরদি এই নেতা সারাটি জীবন ব্যয় করেছেন মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির লড়াইয়ে।
কিন্তু রক্তের আখরে লেখা বাংলাদেশের নামটি পছন্দ হয়নি পাকিপ্রেমি কিছু কুলাঙ্গার স্বাধীনতা বিরোধীদের।

স্বাধীনতার পর জন্ম নিলো লুটেরা একটি গোষ্ঠি। পাকিস্তানের দুইশ’ কোটিপতির বিপরীতে বাংলাদেশেই রাতারাতি তৈরি হয়ে গেল দুই হাজার কোটিপতি। চারিদিকে শুরু হলো বিশৃংখলা আর ষড়যন্ত্র।
এদের দমাতে তিনি বারবার হুঁশিয়ার করলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিলেন। ‘লাল ঘোড়া’ দাবড়ানোর ঘোষনা দিলেন তিনি। কিন্তু চোরাই না শোনে ধর্মের কাহিনি। ষড়যন্ত্র আর দুর্নীতি কোনটাই থামলোনা। অতিষ্ঠ হয়ে উঠলেন তিনি। তাঁর অনেক বক্তৃতায় তিনি আক্ষেপ করে বলেছেন, ‘অন্যরা পায় সোনার খনি, আমি পেলাম চোরের খনি’।

দেশের অভ্যন্তরে ও বাইরের নানান ষড়যন্ত্রের প্রেক্ষিতে তিনি রাষ্ট্র কাঠামো ও নীতি পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিলেন। ১৯৭৫ সালে জাতীয় সংসদে বঙ্গবন্ধুর দেয়া একটি অসাধারণ ভাষণে অনেক মূল্যবান কথা পাওয়া যায়।
সেই ভাষণে তিনি বললেন; “আওয়ামী লীগ একটি মাল্টি-ক্লাস পার্টি। আমি তার নামের পাশে কৃষক শ্রমিক লাগিয়েছি বৈকি, কিন্তু দলের চরিত্র এখনও বদলাতে পারিনি। রাতারাতি সম্ভবও নয়। আমার দলে নব্য-ধনীরাও আছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ায়, তাদের লুটপাটের সুযোগ বহুগুণে বেড়ে গেছে।

আমি তাদের সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যই বাকশাল করছি। যদি এই ব্যবস্থা সফল করতে ব্যর্থ হই এবং আমার মৃত্যুঘটে, তাহলে দলকে কব্জা করে ওরা আরও লুটপাটে উন্মত্ত হয়ে উঠতে পারে। এমনকি স্বাধীন বাংলাদেশের মূলমন্ত্র শত্রুপক্ষের নীতি ও চরিত্র অনুসরণ করে আওয়ামী লীগেরও চরিত্র ও নীতি পাল্টে ফেলতে পারে।
যদি তা হয়, সেটাই হবে আমার দ্বিতীয় মৃত্যু। সেজন্য আগেই বলেছি, আমার দল, আমার অনুসারীদের হাতেই যদি আমার এই দ্বিতীয় মৃত্যু ঘটে, তাহলে দীর্ঘদিনের জন্য বিস্মৃতির অন্ধকারে চলে যেতে হবে। আবার কবে ফিরবে তা জানি না”।

দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, স্বাধীনতার অব্যবহিত পর থেকে বঙ্গবন্ধুর সরকার প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে টেকসই কার্যকর পদক্ষেপ এবং বিশাল সাফল্য অর্জনের পথে যখন এগিয়ে যাচ্ছিলেন, তখনই মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শত্রুরা ১৯৭৫-এর নৃশংস রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের মাধ্যমে দেশকে আবার একটি অগণতান্ত্রিক, অনগ্রসর এবং জঙ্গিবাদী-মৌলবাদী দেশে পরিণত করার সর্বাত্মক কৌশল বেছে নেয়।

বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা-সমাজ-রাজনীতি-রাষ্ট্র ইত্যাদি আধুনিক ও অগ্র্রসর দর্শনকে নতুন প্রজন্মের মধ্যে দিতে না পারলে; বিভ্রান্তি ও নষ্ট কৌশল কখনও জাতিকে এগিয়ে নেয়ার পথ সুগম করতে পারে না।
বঙ্গবন্ধুর ‘কারাগারের রোজনামচা’ গ্রন্থে এসব অনেক কিছুই উঠে এসেছে। তা থেকে আমাদের অনেক শিক্ষা গ্রহণের আছে।

এখন যারা দুর্নীতিও করে আবার সারাদিন অনেকবার বঙ্গবন্ধুর নামও উচ্চারণ করে তারা কি করে তাঁর প্রকৃত অনুসারি হয়-? পোস্টারে বঙ্গবন্ধুর ছবি ছোট আর নিজের ছবি বড় করে দিয়ে যারা তার ভক্ত প্রমান করতে চায় তারা আসলে ধান্দাবাজ, নীতি-আদর্শ হত্যাকারি. রাজনীতির নামে লুটেরা একটি পৃথক সম্প্রদায়ে পরিনত হয়েছে। এরা এখনো লুটেপুটে খাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে।
বঙ্গবন্ধুর মত তাঁর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাও ওই গোষ্ঠির বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। এ লড়াই এতো সহজ না. যতটুকু আমরা ভাবছি। ওদের অবৈধ টাকার পাহাড় আর সংঘবদ্ধ শক্তির সাথে এই যুদ্ধে জয়ী হতেই হবে। নাহলে আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে হারিয়ে ফেলবো, পরাজয় ঘটবে আমাদের রক্তে অর্জিত সেই বাংলাদেশের স্বপ্ন। কিন্তু বাঙালি পরাজিত জাতি নয়, বীরের জাতি। তাই সেই বিজয় ছিনিয়ে আনতে আসুন সবাই শপথ করি, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সাথে যারা গাদ্দারি করে তাদেরকে বর্জন করি। আর এটাই হোক জাতীয় শোক দিবসের ঘোষনা। ( লেখক: সিনিয়র সংবাদকর্মী ও কলাম লেখক। সাবেক সভাপতি-ঈশ^রদী প্রেসক্লাব)।