মো. আখলাকুজ্জামান, গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি.
পচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করায় নাটোরের গুরুদাসপুরে তিন বন্ধুকে দুই বছরের ডিটেনশন ও ছয় মাস সশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়েছিল। মুজিব হত্যার ৪৪ বছর কেটে গেলেও তাদের কেউ খোঁজ রাখেনি। মাঝে মধ্যে মন্ত্রী এমপি আমলারা নির্যাতিত তিন বন্ধুর ভাগ্যোন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে তারা কিছুই পাননি। অথচ তারাই উত্তরবঙ্গের মধ্যে প্রথম জীবন বাজি রেখে মুজিব হত্যার বিচার চেয়ে প্রতিবাদ করেছিলেন। বিনিময়ে পেয়েছেন কষ্ট, লাঞ্চনা আর ভৎসনা।
তৎকালীন ছাত্রলীগের ঘনিষ্ঠ এই তিন বন্ধু প্রবীর কুমার বর্মন (৬৬), নির্মল কর্মকার (৬৩) ও অশোক কুমার পালকে (৬৬) ১৯৭৫ সালে “রক্তের বদলে রক্ত চাই, মুজিব হত্যার বিচার চাই” স্লোগানে পোস্টারিং ও লিফলেট বিতরণ করার অপরাধে আটক করে নির্মমভাবে অত্যাচার করা হয়েছিল। তাদের পরিবারকেও রাখা হয়েছিল হুমকির মুখে। টানা ২৯ মাস কারাভোগের পর ১৯৭৭ সালে তাদের মুক্তি দেওয়া হয়।
গুরুদাসপুর পৌর সদরের চাঁচকৈড় বাজারপাড়া মহল্লায় পরিবার পরিজন নিয়ে ওই তিন বন্ধুর বসবাস। মুজিব আদর্শের সৈনিক প্রবীর বর্মন বলেন, কষ্ট সয়ে অসুস্থ স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে কোনোমতে বেঁচে আছি। ছোট ভাইয়ের ইলেক্ট্রিক দোকানে কর্মরত থেকে তার ছেলেকে বিএ ও দুই মেয়েকে এমএ পাশ করলেও চাকরি জোটেনি।
আরেক বন্ধু নির্মল কর্মকার বলেন, মেয়েকে এমএ পাশ করালেও অর্থাভাবে দুই ছেলেকে আইএ পাশের পর আর পড়াতে পারিনি। ছেলে দুজন একটি রঙের দোকান চালায়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে তাদের অভাব অনটনও বাড়ছে। অপর বন্ধু অশোক কুমার পাল বলেন, গান শিখিয়ে যা মাইনে পাই তা দিয়েই কোনোমতে সংসার চলে। বড় মেয়ে এমএ ও ছোট মেয়ে বিএ পাশ করলেও তাদের চাকরি হয়নি।
তিন বন্ধু বলেন, তাদের স্বপ্ন ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার বিচার বাস্তবায়ন হওয়া। তারা দুঃখ ভরা মনে বলেন, মুজিব হত্যার ৪৪ বছর কেটে গেলেও তাদের কোনো খোঁজখবর নেওয়া হয়নি। দেওয়া হয়নি কোনো রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। বঙ্গবন্ধুর দল আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় এলেও তাদের কষ্টের পাপ মোচন হয়নি। মুজিব হত্যার প্রতিবাদ করায় নানাভাবে নির্যাতনের শিকার তিনবন্ধু জীবদ্দশায় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।