নাসিম উদ্দীন নাসিম
চলনবিল অধ্যুষিত নাটোরের দুর্গম দুলশী গ্রামের বিরল একটি প্রাচীন বৃক্ষ কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এই বৃক্ষের সঠিক পরিচয় বা বয়স জানেন না কেউ। প্রবীনদের কারো কারো মতে দুই অথবা তিন’শ বছরের বেশী সময় আগে অচিন এই বৃক্ষটির জন্ম হয়েছে। সমান্তরাল ভূমি থেকে একটু উঁচুতে এই বৃক্ষ যেন পাহাড়ের ওপর ঠাঁই দাঁড়িয়ে ডানা মেলে রয়েছে। সম্প্রতিকালে বয়ে যাওয়া ভয়াবহ ‘আ¤পা’ ঝড়ও প্রবীন এই অচিন বৃক্ষকে নড়াতে পারেনি। প্রাচীনতম এই বৃক্ষ দেশের অন্য কোথাও আছে কিনা স্থানীয়দের কারো জানা নেই। অচিন এই বৃক্ষের রয়েছে ফলও। খেতে সুসাদু।
স্থানীয়রা জানায়, ফলটি খেতে খিরের সাদের মত লাগে। ফলের বিচি রয়েছে। কিন্তু বিচি থেকে কোন চারা গজায় না। ফলে জন্ম নেয়ার পর থেকে একাই শত শত বছর ধরে কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে বৃক্ষটি। সম্প্রতি এক প্রবাসী গবেষক এই বৃক্ষকে ‘সফেদা প্রজাতির বলে মন্তব্য করেছেন।
বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ২ থেকে টি এলাকায় এই বৃক্ষ রয়েছে। এই বৃক্ষ এলাকার মানুষদের প্রশান্তি দিয়ে চলেছে দীর্ঘকাল ধরে। এই বৃক্ষের নিচে বসে অনেকেই প্রশান্তির নির্মল বাতাস উপভোগ করতে ছুটে আসেন এখানে। বৃক্ষের চারিদিকে ছড়িয়ে পড়া শেকড়ের ওপর শুয়ে বসে সময় কাটান
পথিক সহ স্থানীয়রা। কৃষি ও বনবিভাগসহ উদ্ভিদ প্রেমিক বা বৃক্ষ গবেষকদের কেউ প্রাচীনতম এই বৃক্ষ নিয়ে কখনও মাথা ঘামাতে চাননি। তবে নাটোরের সাবেক জেলা প্রশাসক সাহিনা খাতুন এই বৃক্ষের আদিঅন্ত জানার চেষ্টা করেন। এই বৃক্ষ নিয়ে গবেষনার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তিনি এই বৃক্ষের টানে বেশ কয়েকবার এই এলাকায় পরিদর্শন করেন। স্থানীয়রা এই গাছকে খিরির গাছ বলেই জানেন। তবে সম্প্রতি গবেষক, জনপ্রতিনিধি ও সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ পর্যটক আগমনের কারণে স্থানীয়রা বিরল প্রজাতির প্রাচীন এই গাছ নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। গাছটির চারা তৈরি ও সংরক্ষনসহ এলাকার উন্নয়ন হবে এমন প্রত্যাশা করছেন এলাকাবাসী।নাটোর জেলা সদর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে বগুড়া জেলার সীমান্ত নন্দিগ্রাম উপজেলার রনবাঘা হাট পেরিয়ে যেতে হয় দুর্গম এই দুলশী গ্রামে। সিংড়া উপজেলার ১ নং সুকাশ ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের গ্রাম দুলশী। এই গ্রামে প্রবেশ মুখেই সমান্তরাল ভুমি থেকে পাহাড়ের মত প্রায় ১৫ থেকে ২০ ফুট উঁচুতে কালের সাক্ষী হয়ে ডানা মেলে দাঁড়িয়ে আসে প্রাচীন এই অচিন বৃক্ষ। গোড়া থেকে গাছটির উচ্চতা প্রায় ৫০ ফুট। চারিদিকের আয়তন প্রায় ১৫০ স্কয়ার ফুট। এই বৃক্ষের গোড়া থেকে প্রকৃতিগতভাবে অসাধারণ কারুকাজ সজ্জিত শেকড় বহন করছে। যা প্রাচীন যুগের সাক্ষী হিসেবে বহন করছে। এই বৃক্ষের শেকড়ের ওপর বসে পথিক কিছু সময় প্রকৃতির নির্মল বাতাস খেয়ে প্রশান্তি নিয়ে গন্তব্যে ফিরে যান।
অনেক দুর দুরান্ত থেকে এখন দর্শনার্থীরাও এখন এই বৃক্ষ দেখতে আসছেন। বাংলার জৈষ্ঠ মাসে এই বৃক্ষে ফল ধরে। ছোট বড় সব বয়সী মানুষ এর ফল খান। দেখতে আগুর ফলের মত এবং পাকলে তা অত্যন্ত সুস্বাদু লাগে খেতে। খির তৈরি করলে যেমন স্বাদ হয়, এই ফলের স্বাদও তেমনি বলে জানান এলাকাবাসী। স্থানীয়রা তাই এই বৃক্ষের নাম দিয়েছেন ‘খিরির গাছ’।
জেলা বন বিভাগ জানে না গাছটি সঠিক কোন গোত্রের, কোন জাতের। গাছটির ইংরেজি বা বৈজ্ঞানিক কোন নাম পাওয়া যায়নি।
নরওয়ে প্রবাসী এক বৃক্ষ গবেষক নাটোরের এই গাছটি সবচেয়ে প্রাচীন বলে মন্তব্য করলেও গাছটির সঠিক নাম জানাননি। তবে তিনি গাছটি ‘সফেদা জাতের’ বলে মন্তব্য করেন তিনি। সম্প্রতি জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে বৃক্ষটি ‘মানিক বৃক্ষ’ নামে একটি নামফলক দিয়েছে।
এই বৃক্ষের গোড়া থেকে প্রকৃতিগতভাবে অসাধারণ কারুকাজ সজ্জিত শেকড় বহন করছে। যা প্রাচীন যুগের সাক্ষী হিসেবে বহন করছে। এই বৃক্ষের শেকড়ের ওপর বসে পথিক কিছু সময় প্রকৃতির নির্মল বাতাস খেয়ে প্রশান্তি নিয়ে গন্তব্যে ফিরে যান। অনেক দুর দুরান্ত থেকে এখন দর্শনার্থীরাও এখন এই বৃক্ষ দেখতে আসছেন। বাংলার জৈষ্ঠ মাসে এই বৃক্ষে ফল ধরে। ছোট বড় সব বয়সী মানুষ এর ফল খান। দেখতে আগুর ফলের মত এবং পাকলে তা অত্যন্ত সুস্বাদু লাগে খেতে। খির তৈরি করলে যেমন স্বাদ হয়, এই ফলের স্বাদও তেমনি বলে জানান এলাকাবাসী। স্থানীয়রা তাই এই বৃক্ষের নাম দিয়েছেন ‘খিরির গাছ’।
স্থানীয়রা জানান, প্রাচীন এই বৃক্ষ নিয়ে নানা রকম গল্প প্রচলিত রয়েছে। এলাকাবাসীসহ আশেপাশের মানুষদের বিশ্বাসের একটি বড় জায়গা জুড়ে রয়েছে এই খিরির গাছ। আবুল কালাম ও লাইলী বেগম জানান, বহু বছর আগে এক ব্যক্তি এই গাছটি কেটে ফেলার উদ্দোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু উদ্দোগ নেয়ার দু’দিনের মাথায় আব্দুল হক নামের ওই ব্যক্তি মারা যান। তখন থেকেই এলাকার মানুষ এই গাছটির ওপর একটি বিশ্বাস স্থাপন করেছে। দূর-দূরান্ত থেকে অনেক মানুষ এই বৃক্ষটি পরিদর্শন করতে আসেন। অনেকেই এখানে এসে শিরনি রান্না করে বিতরণ করেন।
সত্তোরর্ধ বয়সী মোকছেদ আলী জানান, এই গাছ তিনি শিশু কালে যে অবস্থায় দেখেছেন, এখনও তাই দেখছেন। গাছটি ঠিক কত বছর আগে জন্ম হয়েছে তার দাদাও তাকে বলতে পারেনি। গাছটিতে ফল ধরে অত্যন্ত সুস্বাদু হয়। জৈষ্ঠ মাসে এই ফল পাকে। সব বয়সের মানুষ এই ফল খান। আগুরের মতন দেখতে এবং পাকলে তা অত্যন্ত সুস্বাদু লাগে খেতে। খির রান্না করলে যেমন সাদ হয় তেমন লাগে।
আব্দুর রহিম বলেন, এই গাছের ফল খিরের মত সাদ হয় বলে স্থানীয়ভাবে সবাই গাছটিকে খিরের গাছ বলেই জানে। এই ফলের বিচি মাটিতে পড়ে থাকলেও কোন চারা বা গাছ জন্মায়না। এই গাছের পাশেই রয়েছে ৫৪ বিঘা আয়তনের একটি বিশাল পুকুর বা জলাশয়। এই পুকুরটিরও গভীরতা অনেক। এই পুকুর থেকে মাটি তুলে খিরির গাছের গোড়ায় দেয়া হয়েছে।
এখানকার এই প্রাচীন বৃক্ষের চারিদিকে প্রাচীর দিয়ে বৃক্ষটির রক্ষার দাবী দীর্ঘদিনের। সরকারী কর্মকর্তাসহ জনপ্রতিনিধিদের অনেকেই এই এলাকাকে সৈন্দর্য্য বর্ধনের প্রতিশ্র“তি দিলেও কোন অগ্রগতি নেই। তবে সম্প্রতিকালে জেলা পুলিশের উদ্দোগে ‘বৃক্ষ মানিক নামকরণ করে বৃক্ষের পাশে একটি নামফলক দিয়েছে। নাম ফলকটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের সময় স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ।