প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বন্যা শেষ হলে সময়মতো কার্যকর পুনর্বাসন কর্মসূচি হাতে নিয়ে সেগুলো বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, কোভিড-১৯ ও বন্যা যেহেতু একসঙ্গে এসেছে, এ কারণেই একটু বেশি ‘কেয়ারফুল’ থাকতে হবে। চলমান বন্যা পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হলে বন্যাদুর্গতদের সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। সব মন্ত্রণালয়ের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী মাঠেই থাকবেন, মানুষের পাশে থাকবেন। গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের আলোচ্যসূচির বাইরে অনির্ধারিত আলোচনাকালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের অবহিত করেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, পুনর্বাসন প্রোগ্রামগুলো যেন খুব ভালো হয়, খুব ইফেকটিভলি ও টাইমলি হয়, সেটার বিষয়ে মন্ত্রিসভা বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী জোর দিতে বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী বন্যা দীর্ঘায়িত হলে যে কোনো পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের, বিশেষত মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের তাদের কর্মস্থলে থাকাকালীন সর্বদা প্রস্তুত থাকতে বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী একই সঙ্গে কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণের ক্ষেত্রে সরকারি কর্মকর্তাদের সজাগ থাকতেও বলেছেন।
মন্ত্রিসভার ভার্চুয়াল বৈঠকে গণভবন প্রান্ত থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করেন। চলতি বছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে (এপ্রিল থেকে জুন) মন্ত্রিসভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৭১ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘কানাডার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেডিকশন আছে যে বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বঙ্গোপসাগরসহ কতগুলো সাগরের কথা বলেছে, সেখানে পানির উচ্চতা এই সময়টাতে বেড়ে যাচ্ছে। সাগরের পানির উচ্চতা বেড়ে গেলে সেক্ষেত্রে পানি নামার ফ্লো কমে যাবে। ভাদ্র মাসের প্রথম থেকে হয়তো একটু লংগার পিরিওড পানি স্ট্যাগার হয়ে থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে আমাদের প্রিপারেশন রাখতে হবে।’ যেখানে বন্যাকবলিত মানুষের জন্য পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র নেই, সেখানকার স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসায় বন্যাকবলিত মানুষ যাতে আশ্রয় নিতে পারে, সেই ব্যবস্থা করার বিষয়েও প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নিজেই বন্যা পরিস্থিতি ও ত্রাণ কার্যক্রম তদারক করছেন।’
খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ত্রাণসামগ্রীর মজুত সম্পর্কে তাদের পূর্বপ্রস্তুতি রয়েছে। তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের মজুতে প্রচুর ত্রাণসামগ্রী রয়েছে, ফলে ত্রাণ বিতরণে কোনো সমস্যা হবে না।’
এদিকে দুটি সামরিক শাসনামলে জারি করা যে অধ্যাদেশগুলো এখনো আইনে পরিণত হয়নি, সেগুলোকে আইনে পরিণত করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগকে আগামী তিন মাস সময় দেওয়া হয়েছে। গতকাল মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার বলেন, ‘মন্ত্রিসভার পক্ষ থেকে যে নির্দেশনা আসছে সেটা হলো, যত অধ্যাদেশ আছে, যেগুলোকে আইনে পরিণত করতে হবে বলে আগে থেকেই সিদ্ধান্ত ছিল, তা তিন মাসের মধ্যে ফাইনাল করে নিতে হবে। আইনমন্ত্রী মহোদয়ও এ বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন।’
মন্ত্রিসভায় মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড আইন অনুমোদন:
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড আইন, ২০২০’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টেও যে আদেশে সামরিক শাসন আমলের সমস্ত আইনকে অবৈধ ঘোষণা করেছিল, তার আলোকে বিদ্যমান মাদ্রাসা শিক্ষা অধ্যাদেশ, ১৯৭৮-কে সময়োপযোগী করার জন্য প্রস্তাবিত আইনটিতে কিছু সংশোধনী আনা হয়েছে। আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, খসড়া আইনে ১৯৭৮ সালের অধ্যাদেশের অধীনে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের পূর্ববর্তী কার্যক্রমকে আইনি সুরক্ষা দেওয়ার জন্য অনুচ্ছেদ ২৮ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যাতে এর আগের কোনো কার্যক্রমকে অবৈধ বলে চ্যালেঞ্জ করা না যায়। তিনি আরো বলেন, প্রস্তাবিত আইনে দুটি বড় পরিবর্তন করা হয়েছে। খসড়া আইনে বোর্ড কর্মচারীদের সরকারি কর্মচারী করা এবং তাদের অবসর গ্রহণের বয়স অন্যান্য শিক্ষাবোর্ডের মতো ৬০ বছর নির্ধারণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রিসভা বাংলাদেশের অর্থায়নে নেপালের লুম্বিনিতে একটি বৌদ্ধমন্দির স্থাপনের জন্য বাংলাদেশ সরকার ও লুম্বিনী উন্নয়ন ট্রাস্টের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির খসড়া অনুমোদন করেছে।