কোরবানি শুধু নিজের পক্ষ থেকে ওয়াজিব হয়। সন্তানাদি মাতা-পিতা ও স্ত্রীর পক্ষ থেকে ওয়াজিব হয়না।
তবে তাদের পক্ষ থেকে করলে তা নফল কুরবানী হবে।
কিন্তু যদি তাদের সম্পদ থাকে তাহলে তাদের উপরেও কোরবানি ওয়াজিব।
# যার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয় সে যদি কোরবানির নিয়তে পশু ক্রয় করে সে পশু কোরবানি করা তার ওপর ওয়াজিব হয়ে যায়।
# মৃত ব্যক্তির নামে কোরবানি করা যেতে পারে।
তার সন্তানগণ যদি নিজের খুশিতে কোন মৃত ব্যক্তি বা পিতা মাতার নামে সাওয়াব পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে কোরবানি করে তা জায়েজ ।ওই গোস্ত নিজেও খেতে পারবে এবং যাকে ইচ্ছা দিতে পারবে স্বাভাবিক কোরবানির নিয়মে।
# কিন্তু যদি কোন মৃত ব্যক্তি মৃত্যুর পূর্বে কোরবানির জন্য ওসিয়ত করে গিয়ে থাকে তবে সেই কোরবানির গোশত সমস্তই গরীবদের মাঝে বিলিয়ে দেয়া ওয়াজিব।
# সাত জনে শরিক হয়ে যদি একটি গরু অথবা মহিষ অথবা উট কোরবানি করে তবে অনুমান করিয়া গোশত ভাগ করিবে না, বরং পাল্লা দ্বারা ওজন করিয়া সমান সমান ভাগ করবে।
# উল্লেখ্য যে সাতজন হওয়া জরুরী নয় দুইজন বা তিনজন বা চার জন /পাঁচ জন কিংবা ছয় জন কোরবানি দিতে পারবে ,তবে কারো অংশ সাত ভাগের এক ভাগের চেয়ে কম হতে পারবেনা।
# খাঁটি অন্তরে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কোরবানি করতে হবে শুধু গোস্ত খাওয়ার নিয়ত করবে না তাহলে কুরবানী বিনষ্ট হয়ে যাবে।
গোশতের হুকুম ও বণ্টনের নিয়ম:-
কোরবানির গোশত খাওয়া ব্যাপারে
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এরশাদ করেন :-
যাতে তারা তাদের কল্যাণের স্থান পর্যন্ত পৌঁছে
এবং নির্দিষ্ট দিনগুলোতে অর্থাৎ ১০,১১,১২ জিলহজ আল্লাহর নাম স্মরণ করে, তার দেয়া চতুষ্পদ জন্তু জবেহ করার সময়। অতঃপর তোমরা তা থেকে আহার করো এবং অভাবগ্রস্ত কে আহার করাও সুরা হাজ্ব আয়াত (২৮)
অন্যত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এরশাদ করেন কাবার জন্য উৎসর্গীকৃত জন্তুকে আমি তোমাদের জন্য আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন করেছি।
এতে তোমাদের জন্য মঙ্গল রয়েছে সুতরাং সারিবদ্ধ ভাবে বাঁধা অবস্থায় তাদের জবাই করার সময় তোমরা আল্লাহর নাম উচ্চারণ কর।
এবং অতঃপর যখন তারা কাত হয়ে পড়ে যায় তা থেকে তোমরা আহার কর
এবং আহার করাও যে কিছু যাঞ্চা করে না তাকে এবং যে যাঞ্চা করে তাকে।
এমনিভাবে আমি এগুলোকে তোমাদের বশীভূত করে দিয়েছি যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো। এগুলোর গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না
কিন্তু পৌঁছে তার কাছে তোমাদের মনের তাকওয়া সূরা হাজ ৩৬/৩৭ ।
রাসুল সালাম বলেন:-
কুরবানীর গোশত তোমরা নিজেরা খাও ।অন্যকে খাওয়াও এবং সঞ্চয় করে রাখ।
সাহাবীগণ বললেন ইয়া রাসুলাল্লাহ গত বছর তো তিন দিন পর্যন্ত খাওয়ার কথা বলেছিলেন।
রাসুল সালাম বললেন গতবছর মানুষের মধ্যে অভাব-অনটন ছিল তাই আমি আদেশ দিয়েছিলাম যে তোমরা তাদেরকে সাহায্য করো বুখারী হাদিস নম্বর/(৫১৭১) সুতরাং ইহা স্পষ্ট হলো যে
কোরবানির গোশত নিজে খাবে, পরিবারবর্গ কে খাওয়াবে, আত্মীয়-স্বজন কে হাদিয়া তোহফা দেবে এবং গরিব মিসকিনদের কে দান করে দেবে।
মুস্তাহাব তরীকা এই যে তিন ভাগ করে এক ভাগ গরীবদেরকে দান করবে, একভাগ আত্মীয়-স্বজন এবং এক ভাগ নিজে রাখবে।
কোরবানি জবেহকারী ও গোস্ত প্রস্তুতকারীর পারিশ্রমিক পৃথকভাবে দেবে ।কোরবানির গোশত চামড়া, মাথা বা পায়ের দ্বারা দেবে না।
কোরবানির চামড়ার দাম মসজিদ মেরামত বা অন্য কোন নেক কাজে খরচ করা যাবে না ।বরং সম্পন্ন চামড়া কিংবা উহার মূল্য গরীবদের মাঝে বন্টন করে দেবে ।যে সমস্ত মাদ্রাসায় এতিমখানা লিল্লাহ ফান্ড আছে সেগুলোতেও দেয়া যাবে।
কোরবানির জন্তুর বয়স প্রসঙ্গে
# গরু ও মহিষ কমপক্ষে দুই বৎসর হতে হবে
# উটের বয়স কমপক্ষে পাঁচ বৎসর হতে হবে
# বকরি ভেড়া ভেরি দুম্বা কমপক্ষে পূর্ণ এক বছর বয়সের হতে হবে
# তবে ভেড়া ভেরি ও দুম্বার বয়স যদি কম হয় কিন্তু এরূপ মোটা তাজা হয় যে এক বৎসর বয়সীদের মধ্যে ছেড়ে দিলেও তাদের চেয়ে ছোট মনে হয় না তাহলে তার দ্বারা কোরবানি দুরস্ত আছে তবে কমপক্ষে ছয় মাস বয়স হতে হবে।
সূত্র: ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া /বেহেশতী জেওর/ আহকামে যীন্দেগী ।