কোভিড-১৯ এর কারণে সৃষ্ট প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলায় মানুষের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে তারুণ্যের শক্তিতে করোনা দুর্যোগের শুরু থেকে বগুড়ায় একাধিক ইতিবাচক কর্মকান্ড পরিচালনা করার মধ্য দিয়ে বর্তমানে বগুড়ায় এক ভরসার নাম হয়ে উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুক ভিত্তিক একটি গ্রুপ ‘করোনা ও বগুড়া পরিস্থিতি’।
মার্চের শেষভাগে গণমাধ্যমকর্মী এবং যুব সংগঠক রাকিব জুয়েলের উদ্যোগে সম্পূর্ণ অপরিচিত এই প্রাণঘাতি ভাইরাস কে মোকাবেলার লক্ষ্যে সাধারণ মানুষ যেন তথ্যবিভ্রান্তিতে অযথা গুজবের শিকার না হয় সেই লক্ষ্যে তাদের কাছে বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসমূহ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে একটি ফেসবুক ভিত্তিক পাবলিক গ্রুপ খোলার সিদ্ধান্ত নেয়। পরবর্তীতে রাকিব জুয়েলের সাথে যুক্ত হয়ে গ্রুপটিকে ঘিরে আরো বিস্তর কর্মপরিকল্পনা সাজিয়ে ফেলে তার আরো ৩জন বন্ধু গণমাধ্যমকর্মী মেহেরুল সুজন ও ফরহাদুজ্জামান শাহী এবং প্রকৌশলী সামিউল আলম। বাংলাদেশে যখন প্রথম করোনা সংক্রমণ দেখা গিয়েছিল আসলে প্রতিনিয়ত মিডিয়ায় করোনায় সারাবিশে^র যে ভয়াল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল তা দেখে আগে থেকেই বাংলার সাধারণ মানুষ অত্যন্ত ভীতসন্ত্রস্থ হয়ে পড়েছিল যার কারণে একশ্রেণীর মানুষ করোনাকে পুঁজি করেই নানা গুজব ছড়িয়ে তাদের স্বার্থসিদ্ধিতে মত্ত হয়ে পরেছিল এবং করোনায় বাংলাদেশের পরিস্থিতি নানাদিক থেকেই ভয়াবহ হতে পারে এমন চিন্তা থেকেই খোলা এই গ্রুপ শুরু থেকেই প্রতিহত করেছে সকল ধরনের গুজব এবং সাধারণ মানুষকে যুগিয়েছে সাহস, প্রতিনিয়ত দিয়েছে করনীয় নানা পরামর্শ। রাকিব জুয়েলের নেতৃত্বে প্রতিনিয়ত গ্রুপের আরেক এডমিন গণমাধ্যমকর্মী অরুপ রতন শীলের মাধ্যমে বগুড়াবাসী সময়মতো জানতে পেরেছে করোনার প্রতিদিনের আপডেট এবং করণীয় সকল কিছুর পরামর্শ যার মাধ্যমে বগুড়াবাসী সকলের কাছে খুব গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠে উক্ত গ্রুপটি অল্প কয়েকদিনের মাঝেই। পরবর্তীতে এই গ্রুপের মাধ্যমেই বগুড়ার ১২টি উপজেলা থেকে একঝাঁক তরুণ সেচ্ছাসেবকের অংশগ্রহণে রাস্তায় ঘুরে ঘুরে সকল গুরুত্বপূর্ণ বাজার-হাট, ঔষদের দোকান, নিত্যপ্রয়োজনীয় দোকানসহ মানুষের ভিড় লেগেই থাকে এমন সব জায়গায় সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে রং-তুলি দিয়ে দূরত্ব চিহ্ন অঙ্কন করা হয় এবং যার মাধ্যমে অসংখ্য তরুণ সেচ্ছাসেবক বিভিন্ন উপজেলা থেকে যুক্ত হয়ে যায় উক্ত গ্রুপে। ধীরে ধীরে বগুড়াবাসী সকলের ভরসা ও আস্থায় জায়গায় স্থান করে নেয় ‘করোনা ও বগুড়া পরিস্থিতি’ যার ধারাবাহিকতায় ২২জুলাই পর্যন্ত এই গ্রুপে যুক্ত রয়েছে প্রায় ৫৮ হাজার মানুষ যা সত্যিই অবাক করার মতো। আসলে তরুণরা নাকি সবকিছু করতে পারে তাইতো তাদের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে উক্ত গ্রুপের সাথে পরবর্তীতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার লক্ষ্যে একাত্মতা ঘোষনা করেন বগুড়া জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ এবং জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ এবং দেখতে দেখতেই বগুড়া সদর থেকে উক্ত গ্রুপটি বগুড়ার সকল উপজেলায় ছড়িয়ে পরে উপজেলাভিত্তিক নাম দিয়ে। সঠিক তথ্য প্রদানের পাশাপাশি এই গ্রুপ থেকে খোলা হয় একটি জরুরী হট লাইন নাম্বার (০১৯৫১ ৫০০ ৮০০) যার মাধ্যমে শুরু হয় জরুরী খাদ্য, জেলার যে কোন প্রান্তে যে কোন সময়ে জরুরী চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা এবং ফোন কলের মাধ্যমে নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক সহয়তা প্রদান করার কাজ। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে বিনা চিকিৎসায় যেন কেউ কষ্ট না পায় লকডাউন পরিস্থিতি থেকে এখন পর্যন্ত উপোরোক্ত হটলাইনের মাধ্যমে ২৪ ঘন্টা যুক্ত থেকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন গরীবের ডাক্তার খ্যাত বগুড়া সদর উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: সামির হোসেন মিশু আর যা নিশ্চিত করেছে ‘করোনা ও বগুড়া পরিস্থিতি’। শুধু তাই নয় লকডাউনে খেঁটে খাওয়া মানুষগুলো যখন কর্মহীন হয়ে পরে তখন নি¤œবিত্ত থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত অসংখ্য পরিবারে রাতের আঁধারে বিভিন্ন সেচ্ছাসেবকের মাধ্যমে এই গ্রুপের তরুণ সংগঠকরা পৌঁছে দিয়েছেন খাদ্যসামগ্রী। বগুড়া সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রউফ, যুবলীগ নেতা শুভাশীষ পোদ্দার লিটনসহ শতাদিক ব্যক্তিবর্গের সমন্বিত প্রচেষ্টায় এবং জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার সদস্যবৃন্দের মনিটরিং এ ‘করোনা ও বগুড়া পরিস্থিতি’ এখন পর্যন্ত প্রায় দেড় হাজার পরিবারে পৌঁছে দিয়েছে খাবার যেখানে ছিলনা কোন ফটোশেসন ছিল শুধু বিপদে আত্মমানবতার সেবায় নিজেদের নিয়োজিত রাখার আকুল প্রচেষ্টা। শুধু তাই নয় জেলা পুলিশের সহযোগিতায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেয়া, উক্ত গ্রুপে জুম ভিডিও কনফারেন্সে একজন চিকিৎসকের উপস্থাপনাতেই প্রতিদিন বিএমএ, স্বাচীপ এবং গাইনী ডাক্তারদের সংগঠন ওজিবি’র বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের যুক্ত করে সাধারণ মানুষকে বিনামূল্যে বিভিন্ন প্রশ্নের আলোকে চিকিৎসা পরামর্শ প্রদান, প্রতিদিন রাত ৯ টায় জেলার বিভিন্ন উপজেলার মাঠপর্যায়ের চিকিৎসক এবং গণমাধ্যমকর্মীর উপস্থিতিতে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে নানা তথ্যসমৃদ্ধ আলোচনার আয়োজন, প্লাজমা ও এন্টিবডি টেস্টসহ কোভিড রিলেটেড গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করা, ওএমএস, টিসিবিসহ জেলা প্রশাসন, খাদ্য বিভাগ,স্বাস্থ্য বিভাগ ও পুলিশ বিভাগের বিভিন্ন ত্রান বিতরন কর্মসূচি ও গুরুত্বপূর্ণ আয়োজনে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণের দায়িত্ব পালনসহ গভীর রাত থেকে শুরু করে যেকোন সময়ে কোভিড আক্রান্ত মৃত ব্যাক্তির গোসল ও দাফন-কাফন এবং কবরস্থান জনিত সব ধরনের সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে গ্রুপের সদস্যরা। শুধু তাই নয় উপরিউক্ত কাজগুলি ছাড়াও সম্পূর্ণ সেচ্ছাশ্রমে এই গ্রুপের সদস্যরা প্রতিনিয়ত করে যাচ্ছে এমন হাজারো ইতিবাচক ও অনুকরণীয় কার্যক্রম যাতে শুধু বগুড়া নয় সারাদেশে দল,মত নির্বিশেষে সকলের প্রশংসা কুড়িয়েছে শূণ্য থেকে শুরু করা মানবতার সেবায় নিয়োজিত একঝাঁক তরুণ সংগঠকের ফেসবুক ভিত্তিক এই গ্রুপ ‘করোনা ও বগুড়া পরিস্থিতি’। উক্ত গ্রুপের প্রধান সমন্বয়ক গণমাধ্যমকর্মী রাকিব জুয়েলের সাথে কথা বললে তিনি জানান, চলমান দুর্যোগ মোকাবিলায় সর্বস্তরের নানা শ্রেণীপেশা ও বয়সের মানুষের সমন্বিত প্রচেষ্টার কোন বিকল্প নেই । সেকারনে করোনা ও বগুড়া পরিস্থিতির প্রত্যাশা ও অঙ্গিকার চলতি যুদ্ধের শেষ দিন পর্যন্ত সকলে মিলে এ জেলার মানুষদের সব ধরনের সহায়তা প্রদান করে এ যুদ্ধ জয় করার। পাশপাশি এটি জেলার সম্মুখ একটি ক্ষেত্র হিসেবে পরবর্তি সময়গুলোতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে সামনে এগিয়ে চলবে বলে তারা বিশ^াস করেন। সেই সাথে তিনি শুরু থেকে এখন পর্যন্ত তাদের পাশে থেকে যারা নিরলসভাবে এই গ্রুপের মাধ্যমে মানুষের সেবায় কাজ করে যাচ্ছে সেই সকল সাহসী ও বীর সেচ্ছাসেবকদের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা জানান এবং সকলের কাছে দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করেন সকল ভাল কাজের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার জন্যে।