গত ২৯ মে তারিখে এনডিটিভির অনলাইনে একটি খবর পড়েছিলাম।
তাতে বলা হয়েছিলো,ল্যাব টেকনিশিয়ানের ওপর হামলা চালিয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর রক্তের নমুনা নিয়ে পালিয়েছে এক বানর।
এই ঘটনা ভারতের উত্তর প্রদেশে। ঘটনার বিস্তারিত সম্পর্কে বলা হয়েছে, পশ্চিম উত্তর প্রদেশের মেরঠ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালেআক্রমণ চালায় এক বানর। হুট করে সেখানকার ল্যাব টেকনিশিয়ানের উপর হামলা করে সেখান থেকে তিনজন করোনা রোগীর রক্তের নমুনা রাখা
শিশি ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। সেই সঙ্গে চুরি করে সার্জিক্যাল গ্লাভস ও। ঐ ঘটনার একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে ঘটনা জানাজানি হয়। জানাজানি হবার পর উত্তর প্রদেশে বানরের
দৌরাত্বের কথা স্বীকার করে নেয় কর্তৃপক্ষ ও।
মেরঠ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রধান ডঃ এসকে গর্গ বলেন,এগুলি করোনা পরীক্ষার নমুনা ছিলোনা, তবে করোনা রোগীদের থেকে কিছু রক্তের নমুনা রুটিন টেষ্টের জন্য নেওয়া হয়েছিলো। ঐ চুরি যাওয়া নমুনার মধ্যে কোন লালা রসের নমুনা না থাকায় সংক্রমণ নিয়ে অযথা8 আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলেও আশ^স্ত করেন এই চিকিৎসক।
তবে বাংলাদেশের বানর হলে করোনা রোগীর নমুনা চুরি করে সেখানকার
রীতি অনুসারে তা বালতির মধ্যে ফেলে দিতো। কারণ বানর হলো অনুকরণীয় প্রাণি। যা দেখে তাই করে। টুপিওয়লা ও বানরের কেচ্ছা যারা জানেন, তাদের জন্য বিষয়টি বুঝতে একটু হবে। একবার এক টুপি বিত্রেতা বনের মধ্যদিয়ে যাবার সময় ক্লান্ত হয়ে একটি গাছেরনিচে ঘুমিয়ে পড়ে। জেগে দেখে তার ঝোলায় কোন টুপি নাই।
তাকিয়ে দেখে গাছের ডালে বসা বানরেরা তার টুপি গুলো মাথায় পরে আছে। টুপি ওয়ালা বানরদের দিকে একটি কাঠ-খড়ি ছুঁড়ে মারলো। বানরেরা তাকে অনুকরণ করে শুকনো ডাল তার দিকে ছুঁড়ে মারলো।
টুপিওয়ালা তখন যেই তার মাথার টুপিটি ছুঁড়ে ফেলে তখন বানরগুলো ও তার দিকে সবগুলো টুপি ছুঁড়ে দেয়।
টুপি ওয়ালা টুপি গুলো গুছিয়ে নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দেয়। বাড়ি ফিরে ছেলেদের নিকট মজা করে এই গল্পটি বলে। এর অনেকবছর পর সেই
টুপিওয়ালার ছোট ছেলে টুপি বিক্রি করার জন্য সেই বনের পথ ধরে চলতে
গিয়ে ক্লান্ত হয়ে বাবার মতই সে ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুম থেকে উঠে টুপি না পেয়ে গাছের উপরে তাকায়। দেখে বানরের দল টুপি মাথায় দিয়ে গাছের উপর বসে আছে। ছেলেটি কাঠ-খড়ি ছুঁড়ে মারলো বানরের দিকে। বানরও গাছের ডাল তার দিকে ছঁড়ে মারে। টুপিওয়ালা মাথাচুলকালো, বানরও মাথা চুলকালো। তখন সে মাথার টুপি খুলে ছুঁড়ে
মারলো। হঠাৎ একটা বানর এসে তার গালে ঠাস করে একটা চড় মেরেবল্লো, – এ ছেমরা, কি মনে হরছোস, তোর বাপেই হুদা তোগরে গল্পো হুনায়- মোগো বাপেরা হুনায় না?
বলছিলাম বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার রিজেন্ট হাসপাতালের করোনা টেষ্টের কেলেঙ্কারির কথা। করোনা সনাক্তকরণ পরীক্ষার নামে সেখানে ‘‘ বালতি টেষ্ট ’’ ঘটনা ঘটেছে। করোনা ভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা নাকরেই পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট প্রদান করে আসছিলো হাসপাতালটি।
জানা গেছে ৬ হাজার নমুনা সংগ্রহ করে তা ল্যাবরেটরিতে না নিয়েবালতিতে রাখা হয়। পরবর্তীতে তা বাইরে ফেলে দেওয়া হয়। পরে ১০ থেকে ২০ ভাগ বোগীর রিপোর্ট পরীক্ষা ছাড়াই পজিটিভ ও বাকিগুলো নেগেটিভ বলে চালিয়ে দেয়। অথচ এই ৬ হাজার মানুষের প্রত্যেকের কাছ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা করে নেওয়াা হয়। এতে অনেক রোগী পড়েন মহা বিপদে। এর মধ্যে কেউ কেউ মারাও গেছেন। শুধু তাই নয় রোগীর কাছ থেকে টাকা আদায় করে পরে সেটিকে বিনামূল্যে করা হয়েছে
দেখিয়ে সরকারের কাছে প্রায় দেড় কোটি টাকার বিলও জমা দিয়েছে রিজেন্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এছাড়া তারা করোনা রোগীদের সেবায় নিয়োজিত ডাক্তার, নার্সসহ স্বাস্থ্যসেবাকর্মিদের নি¤œমানের
আগে মোহাম্মদ সাহেদের মালীকানাধীন হাসপাতাল থেকে অনঅনুমোদিত র্যাপিড কিট ও একটি গাড়ি জব্দ করে র্যাব।
এ প্রসঙ্গে র্যাব সদর দপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সরোয়ার আলম বলেন, ঐ গাড়িতে ফ্লাগস্ট্যান্ড ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্টিকার লাগানো ছিলো।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর চোখে ধুলো দিতেই গাড়িটি ব্যবহার করা হতো। এদিনের অভিযানে রিজেন্টের ৮ কর্মকর্তাকে আটক করা হয়।
তিনি বলেন, উল্লিখিত অনিয়মের সঙ্গে হাসপাতালটির চেয়ারম্যানই জড়িত। তিনি নিজেই এসব করেছেন। হাসপাতালের আইসিইউতে গিয়ে দেখা গেছে, যেটা আছে সেটা নরমাল ওয়ার্ডও বলা যায়না।
সেখানে পুরনো কাঁথা-বালিশ থেকে আরম্ভ করে সব আছে। এর যে
ডায়াগনসিস ল্যাব সেখানে কোন মেশিন নেই। ফ্রিজের মধ্যে এক অংশে রি-এজেন্ট আর অন্য অংশে মাছ পাওয়া গেছে। এর যে ডিসপেনসারি সেখানে সব সার্জিক্যাল আইটেম পাঁচ-ছয় বছর আগের, মেয়াদোত্তীর্ণ। হাসপাতালটির মালিকের গাড়ির রেজিষ্ট্রেশনও নেই। এখন পশ্ন হলো ঢাকার রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক কে এই সাহেদ? )।
(চলবে) (লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট)।
এবাদত আলী
সাংবাদিক ও কলামিস্ট
সদস্য পাবনা প্রেসক্লাব।
মোবাইল ফোন নং ০১৭১২২৩২৪৬১