রাজশাহীর বাগমারার কাচারীকোয়ালীপাড়া ইউনিয়নের পানি উন্নয়নর বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ দায়সারা ভাবে সংস্কারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। কাজ শেষের তিনদিনের মধ্যেই বিভিন্ন স্থানে ধ্বস ও ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে। বন্যার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাঁধ ভেঙে যাওয়ার আশংকা করা হচ্ছে। তবে ঠিকাদারের দাবি, এক বছরের মধ্যে বাঁধের কোনো সমস্যা হলে তা তিনি ঠিক করে দিবেন। স্থানীয় তদারিকের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তির অবহেলার জন্য এমনটি হতে পারে বলে জানিয়েছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড রাজশাহীর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে কাচারীকোয়ালীপাড়া ইউনিয়নের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কালিকাপুরের কিছু অংশ থেকে মানসিংহপুর পর্যন্ত এক কিলোমিটার বাঁধে মাটির কাজ শুরু হয়। বাঁধটিতে মাটি ফেলে সংস্কারের জন্য ৬৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ঢাকার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ‘আলম অ্যান্ড ব্রাদার্স’ কাজটি পেলেও রাজশাহীর ঠিকাদার সিজার হোসেন কাজটি দেখভাল করেন। এদিকে গত মে মাস থেকে কাজ শুরু হলেও থেমে থেমে চলতি মাসের প্রথমে কাজটি দায়সারাভাবে শেষ করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় অর্ধশত ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, বাঁধে দায়সারা ভাবে মাটি ফেলা হয়েছে। বাঁধের নিচ থেকে মাটি কেটে ফেলা হয়েছে বাঁধে। মাটি ফেলার পর সেগুলো বসানোরও কোনো চেষ্টা করা হয়নি। আবার অনেক স্থানে শুধুমাত্র কোদাল দিয়ে আগের মাটি আলগা করে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয়রা কয়েক দফা বাঁধা দিয়েও লাভ করতে পারেননি। তাঁদের অভিযোগ, কাজটি স্থানীয় ভাবে দেখভাল করছেন মকছেদ আলী নামের একজন আওয়ামী লীগ নেতা। তিনি ঠিকাদারের প্রতিনিধি ও সাব ঠিকাদার হিসাবে কাজটির তদারকি করছেন। এ কারণে লোকজন সুষ্ঠুভাবে কাজটি সম্পন্ন করার দাবি জানালেও কোনো ফল পায়নি। মকছেদ আলী নিজেকে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতা দাবি করে বলেন, ঠিকাদারের কাছ থেকে তিনি কাজটি চুক্তিতে নিয়েছেন এবং সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করেছেন। তবে ফাটল ও ধ্বসের বিষয়টি তাঁর জানা নেই বলে জানিয়েছেন। এদিকে কাজ শেষের পরেই বাঁধের বিভিন্ন স্থানে ফাঁটল ও ধ্বসের সৃষ্টি হয়েছে। মানসিংহপুর এলাকার নাককাটি বিলের মাঝামাঝি স্থানে বিলের অংশে তৈরি হয়েছে ফাটলের। আরও কয়েকটি স্থানে মাটি সরে গেছে বাঁধ থেকে। সরেজমিনে গত রোববার গিয়েও এর সত্যতা দেখা যায়। স্থানীয় শতাধিক ব্যক্তি এই প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ করে বলেন, সরকারি ৬৭ লাখ টাকার অর্ধেকও ব্যয় করা হয়নি বাঁধ সংস্কারে। দায়সারা ভাবে কাজ শেষ করা হয়েছে। বন্যার পানি যেভাবে বাড়ছে তাতে বাঁধ ভেঙে যাওয়ার আশংকা করছেন। এতে এলাকা প্লাবিত হওয়া ছাড়াও ফসল এবং মাছের ক্ষতি হবে। এলাকাবাসীর অভিযোগ বাঁধটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে আবারো বরাদ্দ বাড়িয়ে পুনরায় বরাদ্দ নেওয়ার জন্য দায়সারাভাবে কাজ করা হয়েছে। কাচারীকোয়ালীপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মজিদ অভিযোগ করে বলেন, দায়সারাভাবে বাঁধের কাজ করা হয়েছে। অনেক স্থানে ফাটল ও ধ্বসের সৃষ্টি হয়েছে। এই কারণে হুমকীতে পড়েছে বাঁধটি। কাজের স্থানীয় ঠিকাদার সিজার হোসেন বলেন, কয়েকদিন আগে কাজটি শেষ হয়েছে। তবে ফাটলের বিষয়টি জানা নেই, এরকম হতে পারে। এক বছর পর্যন্ত জামানত থাকবে। বাঁধের কোনো অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা ঠিক করে দেওয়া হবে। তবে কাজটির কিছু অংশ স্থানীয় মকছেদ নামের এক ব্যক্তিকে তদারকির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল বলে স্বীকার করেন। কাজটির তদারককারী কর্মকর্তা পানি উন্নয়ন বোর্ড রাজশাহীর উপসহকারী প্রকৌশলী আমজাদ হোসেন বলেন, এরকম অভিযোগ বিষয়ে জানা নেই। তবে কাল-পরশু সরেজমিনে দেখার জন্য যাবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।