বর্তমানে সমগ্র বিশ^ব্যাপি চলছে মহাযুদ্ধ। নাম করোনা যুদ্ধ। যুদ্ধ বা সমর বলতে রাষ্ট্রীয় ও অরাষ্ট্রীয়গুলোর মধ্যে সুসংগঠিত আবার কখনো কখনো দীর্ঘস্থায়ী সশস্ত্র সংঘর্ষকে বোঝায়। চারিত্রিক দিক দিয়ে এটি প্রচন্ড সহিংস এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ। আর এটি যখন বিশ^ব্যাপি ছড়িয়ে পড়ে তখন তাকে বিশ^যুদ্ধ বলা হয়ে থাকে। যুদ্ধের আরেক রূপ মুক্তিযুদ্ধ বা স্বাধীনতা যুদ্ধ। যেটা আমাদের বাংলাদেশের জন্মলগ্নে ঘটেছিলো। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ এই যুদ্ধ শুরু হয় এবং একই বছর ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
কিন্তু এখন যে যুদ্ধ চলছে তা এর সকলটারই উল্টো। ভারতীয় সিনেমা ‘লুকোচুরি’ তে কিশোর কুমারের গাওয়া সেই বিখ্যাত গান ‘ সিং নেই তবু নাম তার সিংহ/ ডিম নয় তবু অশ্ব ডিম্ব…….।
আমাদের সমাজে ঘোড়ার ডিম বা অশ^ডিম্ব বলে যে প্রবাদ বাক্য চালু আছে এও যেন তাই। ধরা যায়না, ছোঁয়া যায়না, অথচ এ এক অদৃশ্য শক্তির কাছে নতি স্বীকার করে নীরিহ নিরপরাধ মানুষের অকাতরে জীবন বিসর্জন দেওয়ার যুদ্ধ। যার নাম কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাস যুদ্ধ।
কদম ফুলের মত দেখতে শক্তিধর এই ভাইরাস নাকি আল্লাহর সোলজার। আল্লাহ পাক অর্ডার করলেন আর করুণা! ভাইরাস(করোনাভাইরাস) সেখানে গিয়ে হাজির হলো। এবং আক্রমণ শুরু করলো। ইটালির মামুন- মারুফের স্বপ্নের উদ্ধিৃতি দিয়ে বাংলাদেশের বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ মুফতি কাজী ইব্রাহীম এমনটিই বর্ণনা করেছেন ইউটিউব চ্যানেলে। তিনি এর নাম দিয়েছেন করোনা ভাইরাসের ইন্টারভিউ। তিনি বর্ণনা করেছেন,‘‘ ইটালি থেকে আমাকে জানিয়েছে মামুন-মারুফ। সে শত শতবার আমাকে ফোন দিয়ে পায়নি। শেষে আমার পিএসকে দিয়ে আমার সঙ্গে যেগাযোগ হয়। সে আমাকে বল্লো,আমি কাজ শেষে রাত সাড়ে বারোটার দিকে বাসায় ফিরে ঘুমাতে যাই।
আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। কদম ফুলের মত কাঁটা কাঁটা করোনাভাইরাস আমার সামনে আসে। তিনি বলেন, এটা স্বপ্ন, এটা সত্য হতেও পারে নাও হতে পারে। এটার ব্যাপারে আমার কোন দায়-দায়িত্ব নেই। তিনি মামুন মারুফের উদ্ধিৃতি দিয়ে করোনাভাইরাসের উৎপত্তি ও আক্রমণের বিশদ বর্ণনা করেছেন। সে বলেছে, ‘‘ ভাইরাস আমার সাথে কথা বলেছে, — তোমরা কবে এসেছো পৃথিবীতে? – ২৩ অক্টোবর আমরা চীনে যাই। মামুন প্রশ্ন করলো চীন দেশে কেন? চীনা সৈন্য কর্র্তৃক আয়েশা নামক এক মেয়েকে ধর্ষণের বিবরণ দিয়ে বলা হয়েছে। ধর্ষণকারিরা আয়েশার মুখ সেলাই করে দেয় যাতে সে চিৎকার করতে না পারে। তখন আল্লাহ তায়ালা করুণা! (করোনা) সোলজারকে হুকুম করলো তোমরা চীন দেশে যাও। তারা গিয়ে চীনা সৈন্যকে মেরে ফেলে। পাহারাদার ২ সৈনিক মারা যায় । যে ডাক্তার চিকিৎসা করেছিলো সেও মারা যায়। …… ভাইরাস বলছে, কাকে বলছে? মামুন মারুফকে। এরপর তোমরা কোথায় যাবে। ভাইরাস বলে সাউথ এবং নর্থ আমেরিকা যাবো। ….। সে জিজ্ঞাসা করলো এরপর কোথায় যাবা।…… মামুন মারুফ বাংলাদেশ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে করোনাভাইরাস বলে তোমাদের দেশে আমরা আক্রমণ করবোনা। তবে যারা ………তাদেরকে ছাড়বোনা….। (ইউটিউব থেকে সংক্ষিপ্ত আকারে )। সে যাইহোক আপাত দৃষ্টে যা দেখা যাচ্ছে তাতে করোনাভাইরাস কাউকেই ছাড়ছেনা। এ থেকে পরিত্রাণ পাবার কোন পথ এপর্যন্ত কেউই খুঁজে পাচ্ছেনা কেউ।
আমাদের বাংলাদেশে যখন করোনাভাইরাস গত মার্চ মাসের ৮ তারিখে প্রথম আঘাত হানে তখন থেকেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। সারা দেশে লকডাউন ঘোষণা করেন। সারা দেশের মানুষ ঘরবন্দি হয়ে পড়ে। এরপর সাধারণ ছুটি ঘোষণাসহ প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এরপরপরই আসে পবিত্র রমজান মাস। লকডাউনের মধ্যেই সারামাস রোজা পালন শেষে মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর এসে হাজির হয়। আর সর্বনাশটা এখান থেকেই শুরু হয়। লকডাউন উপেক্ষা করে ঢাকায় অবস্থানরত গ্রাম-গঞ্জের মানুষ ঈদ করতে বানের পানির মত ঢাকা ছাড়তে শুরু করে। তারা যাবার সময় করোনাভাইরাসের জীবানু নিজেদের অজান্তেই সঙ্গে করে নিয়ে যায়। ঈদ শেষে পুণরায় তারা ঢাকা কিংবা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। সঙ্গে তাদের সঙ্গি হয় করোনাভাইরাস। সে এক ছ্যাড়াবেড়া অবস্থা।
আবারও আসছে ঈদ। এবার আরো গুরুত্বপূর্ণ ঈদ এজন্য যে, এবারে রয়েছে পশু কোরবানী। আর করোনাভাইরাসের সুচনাতো পশু থেকেই। প্রথম প্রথম শোনা গিয়েছিলো কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাস চীনের ওহান প্রদেশের একটি মার্কেটের বন রুইএর দেহ থেকে ছড়িয়েছে। কিন্তু গত ২৩ জুন সুইডিস টেলিভিশনের একটি খবর থেকে জানা যায়, যে, জার্মানির একটি কসাইখানার অনেক কর্মি কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছে। এই কসাইখানায় কাজ করে ৭ শ কর্মি। পৃথিবীর প্রায় ৮০ টি দেশে বিভিন্ন পশুর গোস্ত এখান থেকে রপ্তানি হয়, তার মধ্যে গরুর গোস্ত উল্লেখযোগ্য। হঠাৎ এতগুলো কর্মি আক্রান্তের বিষয়টি জার্মান সরকার তদন্ত করছে এবং একই সঙ্গে কারখানা মনিটরিং থেকে শুরু করে পশুর লালন-পালন পদ্ধতি, পরিবেশও খুঁটিয়ে দেখবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখানে পরিষ্কার যে একটি কোম্পানিতে বড় ধরণের সমস্যা দেখা দিয়েছে, বিধায় সরকার পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিষয়টির ওপর তদন্তে নেমেছে। বর্তমানে বিশে^র নানা দেশে গবাদি পশুর খাবারে নানাধরণের ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে ভালো উৎপাদন পেতে। এসব ওষুধের পাশর্^ প্রতিক্রিয়া কি তা জেনে শুনেও অনেকে এর ব্যবহার করছে। সুইডিস টেলিভিশনের ঐ প্রতিবেদক রহমান মৃধা বলেন,‘‘ আমি সুইডেনের দোকানে ঢুকলে প্রথমে খুঁজি একোলজি খাবার, কারণ সেটা ন্যাচারাল বাকি খাবার যা আসছে সাউথ আমেরিকা বা ইউরোপের অন্যন্য দেশ থেকে সে খাবারের ওপর আমার কোন ধারণা নেই। সেক্ষেত্রে আমি যা খাচ্ছি জানিনা এর মধ্যে শতকরা কতভাগ ন্যাচারাল।
এদিকে আর কিছুদিন পরই গোটা মুসলিম বিশে^ কোরবানির ঈদ। সারা বিশে^ লাখো লাখো গবাদি পশু কোরবানি করা হবে। এর মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশই গরু। এসব গরুর চাহিদার কথা মাথায় রেখে বহু খামারি গরু মোটাতাজা করে। পেশাদার ও সৎ খামারিরা সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে অর্থাৎ প্রাকৃতিক উপায়ে গরু হৃষ্টপুষ্ট করে।
অন্য দিকে এক শ্রেণির অসাধু খামারি বিভিন্ন নিষিদ্ধ ওষুধ প্রয়োগ করে গরু মোটাতাজা করে থাকে। তারা ষ্টেরয়েডগ্রুপের ওষুধ যেমন, ডেকাসন, ওরাডেক্সন, প্রেডনিসোলন ইত্যাদি সেবন করিয়ে অথবা ডেকাসন ষ্টেরয়েড ইনজেকশন দিয়ে গরুকে মোটাতাজা করে। এছাড়া হরমোন প্রয়োগ যেমন, ট্রেনবোলন, প্রোজেস্টিন, টেস্টোস্টেরন করেও গরুকে মোটাতাজা করে। বাংলাদেশ এবং ভারতে এর চর্চা বেশি হয়ে থাকে। এর ফলে এই সকল পশু থেকে করোনার জীবানু ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা অমুলক নয় বলেই মনে করা যেতে পারে। (চলবে) (লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট)।
এবাদত আলী
সাংবাদিক ও কলামিস্ট
সদস্য পাবনা প্রেসক্লাব।