নওগাঁ প্রতিনিধি : গত বছরের প্রবল বন্যায় নওগাঁর রাণীনগরের ছোট যমুনা নদীর নান্দাইবাড়ি-কৃষ্ণপুর বেরিবাঁধ ভেঙ্গে গেলেও এক বছরে মেরামত করেনি কেউ। এছাড়া নদীর পানি বাড়ার সাথে সাথে স্থানীয়দের মধ্যে বাড়ছে আতংক। ফলে যে কোন মুহুর্তে প্রবল বন্যায় ওই এলাকা প্লাবিত হয়ে প্রতি বছরের মতো বতসবাড়ি ও ফসলহানিসহ বড় ধরণের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা ।এদিকে নদীর পানি ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাওয়ায় ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে ইতি মধ্যে নান্দাই বাড়ী এলাকার কয়েকটি পুকুর ডুবে প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকার মাছ ভেসে গেছে।
জানা গেছে, নওগাঁর ছোট যমুনা নদী জেলার রাণীনগর উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে আত্রাই নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। প্রায় ৮০ দশকে রাণীনগর উপজেলার গোনা ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন সময়ের চেয়ারম্যান আহাদ আলী প্রামানিক খাদ্যের বিনিময়ে কর্মসূচির আওতায় নান্দাইবাড়ী এলাকায় প্রায় ৭ কিলোমিটার রাস্তা কাম বেরিবাঁধ নির্মান করেন। এরপর থেকে প্রায় ৪০ বছর ধরে বাঁধটি সংস্কার করা হয়নি। ফলে তৎকালীন সময়ে নির্মিত বাঁধের দুই পাশের মাটি ভেঙ্গে বেড়িবাঁধ বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। প্রতিবছর ওই স্থানে বাঁধ ভেঙ্গে রাণীনগর এবং আত্রাই এলাকার হাজার হাজার হেক্টর জমির ধানসহ বিভিন্ন ফসল ও চাষকৃত মাছ ভেসে যায়। এছাড়া শত শত বসতি ভেঙ্গে পরে। ফলে কোটি কোটি টাকার ক্ষতির কবলে পরেণ দুই উপজেলার বাসিন্দারা। গত ২০১৮ সালে বন্যায় নান্দাইবাড়ী-কৃষ্ণপুর বেরিবাঁধ ভেঙ্গে গেলে নওগাঁ-আত্রাই পাকা সড়কের রাণীনগর সিমানার মিরাপুর, ঘোষগ্রা, কৃষ্ণপুরসহ প্রায় ৫ জায়গায় ভেঙ্গে যায়। ওই বছরই বন্যায় রাণীনগর উপজেলার প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমির ধান বন্যার পানিতে তলে যায়। প্রতি বছর একই স্থানে ধারাবাহিক ভাবে বাঁধ ভেঙ্গে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হলেও নতুন করে বাঁধ নির্মানে কিম্বা সংস্কারের উদ্যোগ নেয়নি কেউ। গত বছর একই স্থানে বাঁধ ভেঙ্গে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলে নষ্ট হয়। প্রতি বছর ভেঙ্গে যাওয়া অংশ মেরামত করলেও গত বছরে ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধ এখনো মেরামত করা হয়নি। বর্তমানে ভারী বৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে নদীর পানি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যে কোন মুহুর্তে প্রবল বন্যায় ওই এলাকার বতসবাড়ি প্লাবিত হয়ে প্রতি বছরের মতো বড় ধরণের ক্ষতির আশঙ্কায় আতংকিত হয়ে পরেছেন স্থানীয়রা।
নান্দাই বাড়ী,মালঞ্চি এলাকার মোয়াজ্জেম হোসেন,আবু বক্কর,মোতালেব হোসেন,আজিজুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,প্রতি বছর বাঁধ ভেঙ্গে প্রায় ৫০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পরে। কোটি কোটি টাকার ক্ষতি সাধিত হয়। আবার কিছুটা হলেও বাঁধ সংস্কার করে বসতি ও ফসল রক্ষার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু গত বছর বাঁধ ভেঙ্গে গেলেও এখন পর্যন্ত কেউ মেরামত করেনি। ফলে চলতি বছরে বন্যা হলে ফসলহানী ও বসতির ব্যপক ক্ষতি হবে বলে জানান তারা। আবু বক্কর জানান,নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গত সপ্তাহে ভাঙ্গা অংশ দিয়ে পানি ঢুকে ইতি মধ্যে আমার তিনটি পুকুরসহ নান্দাইবাড়ীর প্রায় ৮টি পুকুরের প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকার মাছ ভেসে গেছে। ফসল ও বসতি রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে বাঁধ মেরামতের দাবি জানিয়েছেন তারা।
রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মামুন বলেন,বুধবার বিকেলে বাঁধের ভেঙ্গে যাওয়া অংশ পরিদর্শন করেছি। এব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে যে কোন মূল্যে ভাঙ্গা অংশ মেরামত করার জন্য সংশ্লিষ্ঠদের জানিয়েছি। আশা করছি খুব শীঘ্রই বাঁধটি মেরামত হবে।
এ ব্যাপারে নওগাঁ জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান খাঁন বলেন, নান্দাইবাড়ী-কৃষ্ণপুর বেরিবাঁধটি সংস্কারের জন্য ৩৯ লক্ষ টাকা ব্যয় ধরে টেন্ডার দেয়া হয়েছে। গত জুন মাসের ২১ তারিখ থেকে কাজ শুরু করার কথা।কিন্তু নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ঠিকাদার কাজ শুরু করতে পারেনি। তবে পানি কমে যাওয়ার সাথে সাথে বাঁধটি সংস্কার করা হবে।