ইয়ানূর রহমান : করোনা ভাইরাস সংক্রমণে যশোরের ২২ টি এলাকায় রেডজোন ঘোষণা
হলেও সফলতা আসেনি। বর্তমানে রেডজোনে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
নিয়ন্ত্রণহীন করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে গত ১৫ জুন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংক্রান্ত কমিটির সভা
অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যশোর জেলাকে রেডজোন, ইয়োলো জোন ও
গ্রিনজোনে ভাগ করা হয়। প্রথমে ১৭ টি এলাকা রেডজোনের আওতাভুক্ত করা হয়।
পরে বাড়িয়ে ২২ টি এলাকায় রেডজোন ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। রেডজোন
এলাকাগুলো হলো-যশোর পৌর শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ড (ঘোপ), ৪ নম্বর ওয়ার্ড (পুরাতন কসবা থেকে শুরু করে পালবাড়ি), ৬ নম্বর ওয়ার্ড (পোস্ট অফিস পাড়া থেকে শুরু করে রেলস্টেশন), সদর উপজেলার উপশহর, আরবপুর ইউনিয়ন, শার্শা ইউনিয়ন , বেনাপোল পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ড, ঝিকরগাছা পৌসভার ২ নম্বর ওয়ার্ড , ৩ নম্বর ওয়ার্ড চৌগাছা পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড, কেশবপুর পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড, অভয়নগর উপজেলার চলিশিয়া , পায়রা ,বাগুটিয়া ইউনিয়ন, পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ড, ৪ নম্বর ওয়ার্ড , ৫ নম্বর ওয়ার্ড, ৬
নম্বর ওয়ার্ড ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড। ২১ জুন থেকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে রেডজোন এলাকা লকডাউন করে দেয়া হয়। কিন্তু জনগণ পূর্বের মতো চলাচল করতে থাকে। পরিস্থিতি এমন দেখে মনে হয় নামমাত্র লকডাউন চলছে। স্থানীয় প্রশাসন জনপ্রতিনিধি ও লকডাউনে থাকা মানুষের মধ্যে সমন্বয়হীনতা এখনো আছে। কী করতে হবে আর হবে না এসব বিষয়ে জানেই না এ জোনের আওতাভুক্তরা। তাছাড়া তাদের
খাদ্য সামগ্রী সরবরাহে বিশেষ কোনো ব্যবস্থা পরিলক্ষিত হচ্ছে না।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রোববার পর্যন্ত যশোর জেলায় মোট করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৭৪৬ জনে। সুস্থ হয়েছে ২৪০ জন। এছাড়া ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। সিভিল সার্জন অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত তথ্য কর্মকর্তা ডা. রেহেনেওয়াজ জানিয়েছেন, রেডজোন ঘোষণার সময় যশোর শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে করোনায় আক্রান্ত রোগী ৪ জন থেকে বেড়ে ১৭ জন, ৩ নম্বর ওয়ার্ডে ৭ জন থেকে
বেড়ে ১৯ জন। ৬ নম্বর ওয়ার্ডে ৫ জন থেকে বেড়ে ২১ জন, উশহর ইউনিয়নে ৩ জনথেকে বেড়ে ৭ জন, আরবপুর ইউনিয়নের ৬ জন থেকে ৯ জন, শার্শা ইউনিয়নে ১০ জনথেকে বেড়ে ১৮ জন , বেনাপোল পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডে ২ জন থেকে বেড়ে ৪ জন,
ঝিকরগাছা পৌসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডে ২ জন থেকে ৫ জন, চৌগাছা পৌরসভার ৬নম্বর ওয়ার্ডে ২ জন থেকে ৭ জন, অভয়নগর উপজেলার চলিশিয়া ইউনিয়নে ১০ জনথেকে বেড়ে ১১ জন, বাগুটিয়া ইউনিয়নে ৫ জন থেকে বেড়ে ৬ জন, পৌরসভার ২ নম্বর
ওয়ার্ডে ৩ জন থেকে বেড়ে ৭ জন, ৪ নম্বর ওয়ার্ডে ১ জন থেকে বেড়ে ৯ জন, ৫নম্বর ওয়ার্ডে ১৪ থেকে বেড়ে ৩৭ জন, ৬ নম্বর ওয়ার্ডে ২০ জন থেকে বেড়ে ৪৮জন ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ২ জন থেকে বেড়ে ৭ জন দাঁড়িয়েছে। সূত্র জানায়,রেডজোনের কোথাও কোথাও সরকারের স্বাস্থ্য বিধি মানছেন না কেউ। সামাজিকদূরত্ব বজায় রাখার নিয়মের বালাই নেই। ওইসব এলাকায় করোনায় আক্রান্ত নতুন
রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকিও হুমকির মধ্যে পড়ছে। রেড জোনঘোষণার পরও ওইসব এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়েনি।
আগের মতোই প্রায় স্বাভাবিকভাবেই সব কার্যক্রম চলছে।
যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন জানিয়েছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষস্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলবে ততদিন করোনা সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা বাড়তেই থাকবে। রেডজোন এলাকায় প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চললেও মানুষের
মাঝে কোনো ভীতি নেই। তারা করোনাকে পরোয়া না করে ইচ্ছামতো চলাফেরা করছেন।
একপ্রকার তারা লকডাউন মানছেন না। এতে করে পরিস্থিতি বেসামাল। সিভিল সার্জন জানান, রেডজোন ঘোষণার ২১ দিন পর্যন্ত ওই এলাকায় সব ধরনের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক গণজমায়েত নিষিদ্ধ থাকবে। যশোরের
সহকারী কমিশনার মাহমুদুল হাসানকে প্রধান করে একটি মনিটরিং টিমও রয়েছে। রেডজোনের চিত্র তারা দেখভাল করবেন। রেডজোন এলাকার লকডাউন কঠোরতার বিষয়ে জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। পরবর্তী ব্যবস্থা তারা গ্রহণ করবেন ।
যশোরের জেলা প্রশাসক শফিউল আরিফ জানান, রেডজোনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নিয়মিত অভিযান চলছে। আইন না মানার বিষয়ে অনেকের জরিমানাও করা হচ্ছে।
পুলিশ র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্য সদস্যরা প্রতিনিয়ত টহলে যাচ্ছে।
মানুষকে সচেতনতায় বিভিন্ন প্রচার চালানো হচ্ছে। জেলা প্রশাসক আরো জানান, সবচেয়ে বড় কথা মানুষ সচেতহন না হলে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ সম্ভব না।