বৈশি্বক মহামারি করোনাভাইরাস সমগ্র বিশে^র ২১৩ টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। বলতে গেলে সারা বিশে^র কতিপয় যুদ্ধংদেহি পরাক্রমশালী দেশও আজ করোনা কবলিত। অত্যাধুনিক সমরাস্ত্রের বাহাদুরি আজ হার মানতে বাধ্য হচ্ছে ক্ষুদ্রকণাবিশিষ্ট করোনা নামক এক অদৃশ্য শত্রুর নিকট। একের পর এক নগর-মহানগর ও গ্রাম-গঞ্জের অগণিত মানুষকে রাক্ষুসি কায়দায় গ্রাস করে চলেছে লাগামহীনভাবে। এ এক বৈশি^ক যুদ্ধ। একতরফা করোনিক যুদ্ধ।
এই যুদ্ধে বাংলাদেশও জড়িয়ে পড়ে গত মার্স মাসের প্রথম সপ্তাহে। তখন থেকেই বাংলাদেশও করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। আর এই যুদ্ধের প্রধান ও প্রথম কাতারের সৈনিক হিসেবে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে চলেছেন দেশের ডাক্তার সমাজ। করোনাভাইরাস একটি মহামারি । এই মহামারিকে রুখতে তাই ডাক্তার, নার্স, মেডিকেল টেকনিশিয়ান, ওয়ার্ড বয়, আয়া, পিয়ন, পরিচ্ছন্নকর্মি, মাঠ পর্যায়ে ডিপ্লোমা ডাক্তার, পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা, ফার্মাসিস্ট, স্বাস্থ্য সহকারি, পরিবার কল্যাণ সহকারিগণকে প্রথম কাতারের সৈনিক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
এই সকল সৈন্যদের সুবিধা-অসুবিধা দেখ ভালের সকল দায়-দায়িত্ব যুদ্ধ পরিচালনাকারি হিসেবে দেশের প্রধানমন্ত্রীর। আর বর্তমানে করোনাযুদ্ধকালে আমাদের বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, সর্বকালের সর্ব শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের নায়ক ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। সেসময়ের পূর্ব-পাকিস্তানের সাড়ে সাত কোটি মানুষ বঙ্গবন্ধুর ওপর আস্থাশীল থেকে তারই আহবানে সাড়া দিয়ে পাকিস্তানি সৈন্যদেরকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করে বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন স্বার্বভৌম দেশ হিসেবে বিশ^ দরবারে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আজ পঞ্চাশের দশকে এসে করোনাভাইরাস নামক সৈন্যের আক্রমণ থেকে দেশবাসিকে রক্ষার জন্য করোনা যুদ্ধ পরিচালনা করছেন তারই কন্যা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এই অপ্রত্যাশিত মরণ যুদ্ধ মোকাবিলার জন্য ডাক্তার ও নার্সদেরকে এক সঙ্গে থেকে যুদ্ধ পরিচালনার জন্য ঢাকার বিভিন্ন হোটেল বুক করা হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোভিড-১৯ রোগিদের চিকিৎসা কাজে জড়িত চিকিৎসকদের থাকা-খাওয়া বাবদ দুই মাসে ২০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে বলে পত্রিকায় খবর বের হয়েছে। দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনে গত ২৯ জুন সংখ্যায় নিজামুল হক বিপুল ও মাহবুব মমতাজী এই খবরটি পরিশেন করেন। খবর পরিবেশনের পর হতেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তা ভাইরাল হয়। প্রতিবেদকদ্বয় আরো উল্লেখ করেন, ‘‘এই তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে জানা যায় এটি ১ মে থেকে চালু করে ডিএমসিএইচ কর্তৃপক্ষ। এই হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য ১৫২ জন চিকিৎসক, নার্স, অন্যান্য স্টাফ এবং আনসারসহ প্রায় ২ হাজার কর্মি নিয়োগ দেয়। যেহেতু এরা কোভিড-১৯ রোগিদের সেবায় নিয়োজিত, তাই তাদের বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে ডিউটিতে দেওয়া হয়। প্রতিটি গ্রুপ সাত দিন ডিউটি করে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে যায়। তারপর পরিবারের সাথে এক সপ্তাহ কাটিয়ে আবার ডিউটিতে ফেরে। এই চিকিৎসক, নার্স ও অন্য ষ্টাফদের থাকা ও খাওয়ার জন্য ঢাকা মেডিকেল কর্তৃপক্ষ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ৩০টি হোটেল ভাড়া করে। তাদের যাতায়াতের জন্য ভাড়া করা হয় বেশ কিছু মাইক্রোবাস।
সংশ্লিস্ট সুত্রে জানা গেছে , চিকিৎসক, নার্সসহ অন্য স্টাফদের খাওয় বাবাদ জনপ্রতি প্রতিদিন ৫০০ টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়। থাকা, খাওয়া ও যাতায়াতের তিন খাতে মে ও জুন মাসে ২০ কোটি টাকার বরাদ্দ চেয়ে ডিএমসিএইচ কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাবনা পাঠায়। প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য ¯া^াস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো হয় অর্থ মন্ত্রণালয়ে। সেই প্রস্তাবটি গত সপ্তাহে অনুমোদন দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। কিন্তু অনেকেই বলছেন এই হিসাবটি বেশ অস্বাভাবিক। এজন্যই এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা হচ্ছে। চিকিৎসা কাজে নিয়োজিত একাধিক চিকিৎসকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাদের কাউকে রাখা হয়েছে রাজধানীর রিজেন্সি হোটেলে, কাউকে রাখা হয়েছে গুলশানের লেকশোর হোটেলে এবং কাউকে রাখা হয়েছে লা ভিঞ্চিতে। আর নার্স ও স্টাফদের রাখা হয়েছে নগরীর অন্যান্য হোটেলে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চিকিৎসক জানান, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হোটেল গুলোতে যথাযথ সেবা পাওয়া যায়নি। আর যাতায়াতের ক্ষেত্রে তাদের বিভিন্ন সময়ে ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে। বিশেষ করে তাদের আনা-নেওয়ার জন্য যেসব মাইক্রোবাস ভাড়া করা হয়েছিলো তার বেশিরভাগই ছিলো নন এসি। পিপিই পরে গাড়িতে বসা যেতনা গরমের জন্য। তাছাড়া গাড়ি প্রায়ই এক ট্রিপ নেওয়ার পর দ্বিতীয় ট্রিপ দিতোনা। তখন তাদের সিএনজিতে করে যাতায়াত করতে হয়েছে ঝুঁকি নিয়ে।’’
এসব কথা জানতে চাইলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একে এম নাসিরউদ্দিন গতকাল বাংলাদেশ প্রতিবেদককে বলেন, ‘‘কীভাবে এত টাকা খরচ হলো তার হিসাব বলছি।‘‘ চিকিৎসক, নার্স, আয়া, আনসারসহ অন্যান্য স্টাফ মিলিয়ে প্রায় ২ হাজার লোক কোভিড রোগিদের চিকিৎসায় নিয়োজিত। তাদের থাকা খাওয়া ও যাতায়াতের জন্য আমরা ৩০টি হোটেল ভাড়া করেছি। গাড়ির ব্যবস্থা করেছি। আমরা এনএসআইএর মাধ্যমে হোটেলের সঙ্গে চুক্তি করেছি। তিনি বলেন, প্রত্যেকের প্রতি দিনের খাবারের জন্য ৫০০ টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এখানেই হিসাব করেন ২ হাজার লোকের খাবারের বিল কত আসে।’’ কিন্তু হোটেলগুলোর ভাড়া এবং গাড়ির ভাড়া কত সে বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি।’’
জাতীয় সংসদের অধিবেশনে এ নিয়ে সংসদে বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের বাংলাদেশ প্রতিদিন এ প্রকাশিত ‘ ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসক –স্বাস্থ্যকর্মিদের থাকা- খাওয়ার খরচ ২০ কোটি টাকা শীর্ষক খবর উদ্ধৃত করে স্বাস্থ্য খাতে অপচয় ও দুর্নীতি নিয়ে সংসদে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজে স্বাস্থ্যকর্মিদের খরচ ২০ কোটি টাকার মত হয়েছে। যার মধ্যে খাবার খরচই প্রায় অর্ধেক। কত টুকু প্রয়োজন ছিলো, কতটুকু অপচয় ও দুর্নীতি হয়েছে এখন পর্যন্ত জানিনা। তিনি থোক বরাদ্দের ব্যাপারে যথার্থতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সমন্বয় কমিটি গঠনের দাবি জানান। গতকাল ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বাজেট অধিবেশনে অংশ নিয়ে তিনি এ দাবি জানান। (চলবে) (লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট)।
এবাদত আলী
সাংবাদিক ও কলামিস্ট
সদস্য পাবনা প্রেসক্লাব।
মোবাইল ফোন নং ০১৭১২২৩২৪৬১ ঊসধরষ: বনধফধঃধষর ১৯৭১ @ মসধরষ .পড়স তারিখ: ০৩ /০৭/২০২০.