করোনা কালের জীবন ধারা-৩৮

এমনি বেহদ্দ, বেহায়া, বেশরম কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাস তা আর বলে শেষ করা যায়না। সে কারো কথাই শোনেনা। ডাক্তার, কবিরাজ,
হাকিম, ওঝা-বৈদ্য, তান্ত্রিক, ঐন্দ্রজালিক, আলেম-উলামার দোয়া, তাবিজ- কবজ, তেলপড়া, পানি পড়া, কিছুতেই তাকে বিন্দুমাত্র কাবু করতে পারছেনা।
এবার বিজ্ঞানীরা যে ফাঁদ পেতেছে সেই ফঁদে তাকে পড়তেই হবে। ২৭ জুন দৈনিক কালের কন্ঠ লিখেছে, খুব ধুরন্ধর নভেল করোনাভাইরাসকে কি
এবার ফাঁদে ফেলা যাবে মানব শরীরের মধ্যেই? ভাইরাসটির খুব পছন্দের জায়গা আমাদের ফুসফুসেই পাতা যাবে সেই ফাঁদ। এমনটাই দাবি
করলেন একদল চীনা গবেষক। জানালেন, তারা পলিমারের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণা (ন্যানো পার্টিকলস) দিয়ে কৃত্তিমভাবে ফুসফুসের এমন কোষ
বানিয়েছেন, যা আদতে জীবন্ত কোন কোষ নয়। কোভিডের ফাঁদ। সেই ফাঁদের ভিতর ঢুকে পড়লে ভাইরাসটি আর বেঁচে থাকার রসদ পাবেনা। মরে
যাবে। সম্প্রতি এসংক্রান্ত নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে আন্তার্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী ন্যানো লেটার্সে। )।
বিজ্ঞনীরা জানিয়েছেন, গত ছয় মাসের গবেষণায় দেখা গেছে ‘ শরীরে ঢোকার পর ফুসফুসই সবচেয়ে পছন্দের জায়গা সার্স-কভ-২ ভাইরাসের।
মানবদেহের একটি প্রোটিন তাকে ফুসফুসের গায়ে লেগে থাকতে সাহায্য করে। তারই সাহায্য নিয়ে ভাইরাসটি আমাদের ফুসফুসের কোষের মধ্যে ঢোকে। তারপর দ্রুত বংশবৃদ্ধি ঘটায়। একটি কোষে তাদের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেলে তারা সেই কোষের প্রাচির ফাটিয়ে বেরিয়ে ফুসফুসের অন্য কোষ গুলোকেও একইভাবে আক্রমণ করে।
গবেষকরা গবেষণায় দেখতে চেয়েছিলেন, পলিমারের ন্যানো পার্টিকলসকে ফুসফুসের কোষের মত ব্যবহার করলে সার্স-কভ-২ কে আমাদের শরীরের মধ্যে ধোকা দেওয়া যাচ্ছে কিনা। তারা সেই পলিমারের ন্যানো পার্টিকলকে ফুসফুসের জীবন্ত কোষ বলে মনে করছে কিনা। গবেষকরা দেখেছেন, ভাইরাসটি ধোকা খাচ্ছে। ফাঁদে পড়ছে। আর তারপর
বাঁচার রসদ জোগাতে না পেরে মরে যাচ্ছে।
এটা দেখতে গিয়ে গবেষকরা পলিমারের ন্যানো পারটিকলের ওপর ফুসফুসের বা দেহের প্রতিরোধি ব্যবস্থার জীবন্ত কোষের একটি আস্তরণ
দিয়ে দিয়েছিলেন। গবেষকরা দেখেছেন, পলিমারের বাইরে থাকা ফুসফুসের কোষের আস্তরণ দেখেই তা পছন্দ হচ্ছে ভাইরাসটির। (সুত্র: আনন্দ বাজার পত্রিকা)।
কোরিয়ান ইউনিভার্সিটি অব মেডিসিন জানাচ্ছে, মাত্র ১০ মিলিলিটার মাউথওয়াশ দিয়ে ৩০ সেকেন্ড কুলকুচি করুন। তাহলেই করোনার সঙ্গে লড়ার জন্য অনেকটাই প্রস্তুত হতে পারবেন আপনি। এই
মাউথওয়াশ দিয়ে কুলকুুচি করলে লালারসে করোনার জীবাণুর কর্মক্ষমতা অনেকটাই কমবে। ওই বিশ^বিদ্যালয়ের গবেষকরা জানান, ক্লোহেক্সিডাইন মাউথওয়াশ দিয়ে গড়গড়া কুলকুচি করলে করোনা
সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব। জানানো হয়েছে, সার্স কভ-২ জীবাণুর উপস্থিতি মারাত্মকভাবে পাওয়া গেছে লালায়। অন্যের সঙ্গে কথা বলার ক্ষেত্রে
এটা ছড়িয়ে পড়ে ব্যাপকহারে। তাই এই জীবাণু যাতে না ছড়ায় তার জন্য অনেক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মাস্ক ছাড়া বাইরে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে এটি তরল পদার্থ দিয়ে মুখে কুলকুচি করলে করোনা
ছড়ানোর ভয় সাময়িকভাবে অনেকটা কমবে বলে মত গবেষকদের।
ভারতীয় সংস্থা আইসিপিএ হেলথ প্রোডাক্টস লিমিটেড উৎপাদন করে ক্লোহেক্সিডাউন মাউথওয়াশ। গবেষণায় জানানো হয়েছে, লালার মাধ্যমে জীবানু ছড়ানো রোধ করে এই মাউথওয়াশ। একবার ব্যবহারের পর ২ থেকে ৪ ঘন্টা কিছুটা নিশ্চিত থাকা যায়। তাই হাসপাতালে বা
সাম্প্রদায়িক সংক্রমণ রুখতে এর জুড়ি মেলা ভার। গবেষণায় আরো জানানো হয়েছে চিকিৎসকরা তাদের রোগিদের ক্লোহেক্সিডাইনমাউথওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে আসার জন্য বলতে পারেন। কেননা অনেক ক্ষেত্রে সামাজিক দুরত্ব মেনে রোগি দেখা সম্ভব নয়। বিশেষ করে দাঁত, ত্বক বা চোখের চিকিৎসা করতে হলে রোগির কাছাকাছি আসতেই হবে
চিকিৎসককে। দাঁতের চিকিৎসার ক্ষেত্রে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি কম রাখতে , চিকিৎসকদের ১৫ থেকে ৩০ মিনিট অন্তর এই মাউথওয়াশ ব্যবহার
করার কথা বলা হয়েছে গবেষণায়। এছাড়া হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিরা ক্লোহেক্সিডাইন মাউথওয়াশ প্রতি ২ ঘন্টা অন্তর ব্যবহার করতে
পারেন। নিজের সুরক্ষার জন্য এই কাজটি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, বলেছেন গবেষকরা। তবে উপসর্গহীন যারা তারা নির্দিষ্টভাবে ব্যবহার করতে পারেন এই মাউথওয়াশ। এর ফলে সংক্রমণের ওপর কিছুটা হলেও লাগাম টানা যাবে বলে মত দিয়েছেন গবেষকরা। (সুত্র নিউজ এইটটিন,২৩
জুন-২০২০)বৈশি^ক মহামারি করোনাভাইরাসের জীবন ধারা সম্পর্কে ইতালির শীর্ষ সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মাত্তিও বাসেত্তি জোর দিয়ে বলেছেন, ‘‘করোনাভাইরাস এখন হিং¯্র বাঘ থেকে বন বিড়ালে রূপান্তর হয়েছে।
ভ্যাকসিন ছাড়াই ভাইরাসটি নিজ থেকেই শেষ হয়ে যাবে।’’ করোনায় ইউরোপে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হওয়া ইতালির এই শীর্ষ সংক্রামক ব্যাধি ক্লিনিক পোলিক্লিনিকো স্যান মার্টিনের প্রধান অধ্যাপক মাত্তিও বাসেত্তি ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, গত মাসে ভাইরাসটি তিব্রতা হারাতে শুরু করেছে। আগে যে রোগিরা এই ভাইরাসে মারা যেতেন এখন তারা সুস্থ্য হয়ে উঠেছেন।
ক্রিটিক্যাল কেয়ার এই বিশেষজ্ঞ বলেন, রোগির সংখ্যা কমে আসার অর্থ ভাইরাসটির পুণরায় ফিরে আসা ঠেকাতে ভ্যাকসিনের আর দরকার নাও
হতে পারে।
ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ^বিদ্যালয়ও ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি অ্যাস্ট্রোজেনেকার চ্যাডক্স ১ এনকোভ- ১৯ নামের সম্ভাব্য ভ্যাকসিনটি
পাওয়ার লক্ষে ইটালির স্বাস্থ্যমন্ত্রী এটি চুক্তির ঘোষণা দিয়েছেন।
অধ্যাপক মাত্তিও বাসেত্তি বলেন, ‘‘আমার কাছে ক্লিনিক্যাল যে ধারণা রয়েছে তাতে বোঝা যাচ্ছে ভাইরাসটির তীব্রতায় পরিবর্তন এসেছে।
মার্চ এবং এপ্রিলের শুরুর দিকে ভাইরাসটির বৈশিষ্ট পুরোপুরি ভিন্ন ছিলো। ঐ সময় জরুরি বিভাগে যারা এসেছিলেন, তাদের চিকিৎসা দেওয়া খুবই কঠিন হয়ে পড়েছিলো। তাদের অক্সিজেন ভেন্টিলেশনের দরকার ছিলো। অনেকে নিউমোনিয়ায় ভুগতেন। তিনি বলেন, গত চার সপ্তাহে ভাইরাসটির প্যার্টানের ভিত্তিতে এই চিত্র পুরোপুরি পালটে গেছে।
বর্তমানে শ^াসযন্ত্রের ট্যাক্টের ওপর কম চাপ ফেলছে ভাইরাসটি। হয়তো ভাইরাসটির কোনও জেনেটিক মিউটেশনের কারণে এটি হচ্ছে। যদিও
এখনো বৈজ্ঞানিকভাবে এটি প্রমাণিত হয়নি। বাসেত্তি বলেন, মার্চ এবং এপ্রিলে ভাইরাসটি ‘ আগ্রাসি বাঘের মত ছিলো, বর্তমানে এটি বুনো বিড়ালে পরিণত হয়েছে।’’ (সুত্র: দ্য টেলিগ্রাফ, ২১-০৬- ২০২০.)।
এদিকে এক জ্যোতিষী ‘বিস্ময় বালক’ নামে যার পরিচিতি, তিনি ইউটিউবে প্রকাশিত ভিডিওতে প্রচার করেছিলেন করোনাভাইরাসের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে। ২০১৯ সালের আগষ্ট মাসে কিশোর জ্যেতিষী আনন্দ
ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, ২০১৯ সালের নভেম্বর হতে ২০২০ সালের এপ্রিল এসময় বেশ সংকটে পড়বে বিশ^বাসী। প্রথমে কেউ তাকে পাত্তা
দেয়নি। কিন্তু গত ডিসেম্বরের পর থেকে তার ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবে রূপ নিতে শুরু করলে তিনি আলোচনায় আসেন। সেসময় আনন্দ বলেছিলেন,
বিশ^ব্যাপি ‘ সৃষ্টিকর্তা’র পর করোন শব্দটি বেশি বেশি উচ্চারিত হবে।’’ তিনি বলেছেন, সুখবর পাওয়ার জন্য বিশ^বাসীকে এ বছর
জুনের শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। (রাইজিং বিডি ডট কম, ১৮-০৪-২০২০.)। ভারতের চেন্নাই এর পারমাণবিক ও পদার্থ বিজ্ঞানী ড. কে এল
সুন্দর কৃষ্ণ বলেছিলেন, ‘‘২১শে জুনের সুর্যগ্রহণের জেরে এই ভাইরাসের প্রাকৃতিক নিরাময় হতে পারে। পাশাপাশি তিনি বলেছিলেন, এই ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার দরকার নেই। এটি সৌরজগতে ঘটে যাওয়া একটি প্রাকৃতিক আন্দোলন।’’
ড. কে এল সুন্দর কৃষ্ণ জানেিয়ছেন, সুর্যগ্রহণ একটি
প্রাকৃতিক প্রতিকার ও হতে পারে যা আমাদের এই মহামারি থেকে মুক্তি দেবে। সুর্যগ্রহণ এই ভাইরাসটিকে ক্ষমতাহীন করে দেবে বলে তিনি মনে করেন।

(চলবে)

(লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট)।
এবাদত আলী
সাংবাদিক ও কলামিস্ট
সদস্য পাবনা প্রেসক্লাব।