মশাহিদ আহমদ, মৌলভীবাজার ঃ ঘরে ঘরে নিরাপদ বিদ্যুৎ পৌছে দিতে যেখানে বর্তমান সরকার নানা উদ্যোগ নিচ্ছেন, ঠিক সেই সময়ে মৌলভীবাজার পল-ী বিদ্যুৎ অফিসে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্যে ছেয়ে গেছে। ভোগান্তিতে পড়ছে এলাকার শত শত গ্রাহক। নতুন মিটার সংযোগ নিতেও দিতে হয় ঘুষ। পোল স্থানান্তর, লাইন রুট পরিবর্তন, সার্ভিস ড্রপ রুট পরিবর্তনসহ সমীক্ষা ফি নামেও আন্তসাৎ করছে লক্ষ লক্ষ টাকা। এছাড়া কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারী কতিপয় প্রতিষ্ঠানের মিটার টেম্পারিং, অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল করেও হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। আর সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব।
সমিতির কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে জিম্মি শত শত গ্রাহক।
অভিযোগ উঠেছে, ঘুষ না দিলে লাইন রুট পরিবর্তন, নতুন সংযোগ আবেদনের ফাইল চাপা পড়ে থাকে বছরের পর বছর। আর ঘুষ হলেই সকল নিয়ম নীতি উপেক্ষা করে মিলছে নতুন সংযোগ। ঘুষ ছাড়া মৌলভীবাজার পলী বিদ্যুৎ অফিসে মেলে না কোনো ধরনের সেবা। কাজের অর্ডার হওয়ার পরেও ঠিকাদারদেরও দিতে হয় বড় অংকের টাকা। আবাসিক ও বাণিজ্যিক সংযোগ দু’ক্ষেত্রেই দিতে হয় মোটা অংকের ঘুষ। ঘুষের এ টাকা একশ্রেণীর
দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে ভাগবাটোয়ারা হয়।
মৌলভীবাজার পলী বিদ্যুতের অফিসকে ঘিরে গড়ে উঠেছে একশ্রেণীর দলাল চক্র। দ্রুততম সময়ে মিটার ও সংযোগ পাইয়ে দেয়ার আশ্বাসে নিরীহ গ্রাহকের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এঅবস্থায় প্রতিদিন ভুক্তভোগীর সারি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। অভিযোগ আছে, সবচেয়ে বেশি ঘুষ বাণিজ্য হয় সংযোগের জন্য বিদ্যুতের লোড অনুমোদনে। এরপর গ্রাহক আঙিনায় বিদ্যুৎ সংযোগ নিতেও ঘুষ দিতে হয়। সংযোগ বাণিজ্য ছাড়া মিটার রিডিংয়ে অনিয়ম, গ্রাহক হয়রানিসহ নানা ক্ষেত্রে দুর্নীতি হচ্ছে। তাছাড়া, যথাসময়েও থাকছে না বিদ্যুৎ। বিশেষ করে দুপুর, সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ চলে যায়। ফলে ব্যবসায়ীরা এবং স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীদের পড়ালেখায় খুবই সমস্যার মুখোমুখি হন।
সিন্ডিকেটে স্থানীয় বিদ্যুৎ গ্রাহক আর শিল্প মালিকদের ব্যাকমেইল করে প্রতিমাসে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। লোড বাড়াতে গেলেও পকেট ভরে টাকা দিতে হয়। টাকা না দিলে করা হচ্ছে হয়রানি। কেটে দেয়া হচ্ছে সংযোগ। একাধিক ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মৌলভীবাজার পলী বিদ্যুৎ সমিতি (পবিসের) দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীর দুর্নীতি আর লুটপাটের ফলে সরকারের সাফল্য ¤ান হয়ে গেছে।
বিদ্যুতের অভাবে একদিকে যেমন নতুন শিল্পকারখানা গড়ে উঠছে না, তেমনি শত শত কারখানাও ক্রমান্বয়ে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ফলে শিল্পমালিকরা হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যাংক ঋণের সুদের চক্রে পড়ে চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছেন। সেই সঙ্গে লাখ লাখ শ্রমিক-কর্মচারীও বেকার হয়ে পড়ছে।
মৌলভীবাজার প্রশ্চিম ধরকাপন এলাকার বিশিস্ট ব্যবসায়ী সৈয়দ মমসাদ আহমদ নামে এক গ্রাহক জানান, আমার বাসার জায়গার উপর দিয়ে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে চাইলে আমি প্রথমে আপত্তি করি। কিন্তু, আমার নিষেধ অমান্য করায় সংশিষ্টদের বিষয়টি অবগত করলে আমাকে মৌলভীবাজার
পল-ী বিদ্যুৎ অফিসে ১৭২৫ টাকা জমা দেওয়ার জন্য বলেন। আমি তাদের কথিতমতে গত১৬/০২/২০২০ইং, ১৭২৫ টাকা জমা দেই। কর্তৃপক্ষ আমাকে সেই লাইন সরিয়ে নেওয়ার আশ্বাষ প্রদান করেন। আমার লিখিত আবেদন সত্তেও সেই একই জায়গার উপর দিয়ে পুনরায় বিদ্যুৎ সংযোগ এর কুটি নিতে
চাইলে আমি আবারও আপত্তি করি। তিনি আরও বলেন, সাধারণভাবে আবেদন
করলে বছরের পর বছর পার হয়ে যায়। কোনো গ্রাহক সমস্যায় পড়লে সমাধানের আশ্বাসে হাতিয়ে নেয় টাকা।