মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে করোনা সংকটের শুরু থেকেই সন্দেহ জনক ও আক্রান্তদের কাছ থেকে কোভিড-১৯ এর নমুনা সংগ্রহসহ হাসপাতালের বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার কাজে নিরলস ভাবে শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট সুর্নিমল কুমার সিংহ। তিনি পরিবার পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কর্মস্থলেই অবস্থান করছেন।
আলাপকালে তিনি জানান, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনা পজেটিভদের বাড়ী বাড়ী গিয়ে পুণ:পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ ও হাসপাতালে করোনা সন্দেহদের নমুনা সংগ্রহসহ হাসপাতালের যাবতীয় পরীক্ষা নিরীক্ষার কাজ তিনি একাই করেন। হাসপাতালে মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট সংকট থাকায় একাই টেস্ট সংক্রান্ত সব কাজ করেন। তিনি আরো বলেন, তার সহধর্মীনি অন্তসত্তা থাকা সত্যেও তিনি পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন আছেন করোনার শুরু লগ্ন থেকেই।
বিভিন্ন তথ্যসুত্রে জানা যায়, দেশে ১৬ কোটি মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে মেডিকেল টেকনোলজিস্টের পদ রয়েছে মাত্র ২ হাজার ১৮২। এর মধ্যে আবার ৭৬৫টি পদই শূন্য। ১৯৭১ সালের পর ৪৯ বছরে যেমন বাড়ানো হয়নি মেডিকেল টেকনোলজিস্ট পদের সংখ্যা, তেমনি একটি মামলার কারণে গত ৭ বছর ধরে বন্ধ এ সেক্টরে নতুন নিয়োগ। ফলে করোনা সংক্রমণের ভয়াবহ এ মুহূর্তে যখন রোগীর শনাক্তকরণ চিহ্নিতের উপাদান সংগ্রহে সবচেয়ে বেশি দরকার মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ঠিক সেই মুহূর্তে লোকবল সংকটে চোখে অন্ধকার দেখছে সবাই। পরিস্থিতি সামাল দিতে অনলাইনে মাত্র দু’দিনের ট্রেনিং দিয়ে রোগীর সোয়াব (নাকের ভেতর থেকে নেয়া করোনা পরীক্ষার উপাদান) সংগ্রহে মাঠে নামানো হয়েছে ইপিআই টেকনিশিয়ানদের। এরাও সংখ্যায় অতি নগন্য। প্রতি উপজেলায় আছেন মাত্র ১ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী যেখানে একজন ডাক্তারের বিপরীতে কমপক্ষে ৫ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট থাকা প্রযোজন, সেখানে দেশে স্বাস্থ্যসেবা সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে সবমিলিয়ে টেকনোলজিস্টের পদ রযেছে মাত্র ৩ হাজার ৯৯৬টি।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, এর মধ্যে ল্যাব টেকনোলজিস্ট ২ হাজার ১৮২, ডেন্টাল ৬২৮, ফিজিওথেরাপি ২৯৪, রেডিওথেরাপি ৮৪ এবং রেডিওগ্রাফি টেকনোলজিস্ট ৮০৭ জন। এর মধ্যে বর্তমানে ১ হাজার ৩৯৪টি পদই শূন্য। করোনা শনাক্তের উপাদান সংগ্রহ এবং তা প্রক্রিয়াজাতকরণে মূলত কাজ করেন ল্যাব মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা। এ খাতে থাকা ২ হাজার ১৮২টি পদের মধ্যে বর্তমানে শূন্য পদের সংখ্যা ৭৬৫। দেশে থাকা জনবল কাঠামো অনুযায়ী প্রতি উপজেলায় মাত্র একটি করে ল্যাব মেডিকেল টেকনলজিস্টের পদ রয়েছে। এছাড়া জেলা হাসপাতাল এবং মেডিকেল কলেজ সংশ্লিষ্ট হাসপাতালগুলোতে রয়েছে বাকি পদগুলো।
এ বিষয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহবুবুল আলম ভূইয়া দু:খ প্রকাশ করে বলেন, উনাকে ছাড় দিতে পারলে ভালো হতো, কিন্তু কি করবো আমাদের লোকবল সংকট থাকায় সুনির্মলকে একাই কাজ করতে হচ্ছে। তবে আমরা গত কিছুদিন থেকে তাকে বাহিরে যেতে দিচ্ছিনা।