★করোনাকালীন অপূরনীয়ক্ষতি★

আজ সারা বিশ্বব্যাপী যে অদ্ভুত আঁধার নেমে এসেছে তার নাম করোনা বা যার অপর নাম কোভিড-১৯। শুধু বাংলাদেশে নয় সারা বিশ্বেই করোনার কমবেশি তাণ্ডব চলছে। সারা বিশ্বে তার মৃত্যুর তান্ডব এখনো থামেনি। ২৭ ডিসেম্বর ২০১৯ চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম উৎপত্তি হওয়ার পর বাংলাদেশে কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির কথা প্রথম জানা যায় ৮ই মার্চ ২০২০ এবং প্রথম মৃত্যুটি ঘটে ১৮ই মার্চ ২০২০। তার পর থেকেই প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকে করোনা সংক্রমনের সংখ্যা বাড়তে থাকে করোনায় আক্রান্তদের মৃত্যুর তালিকা।করোনা কালীন সময়ের শুরু থেকেই বাংলাদেশকে করোনার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য সরকারি নানা বিধিনিষেধ প্রণয়ন করা হয়।সংক্রমনের সংখ্যা কমানোর লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে ২৬ মার্চ ২০২০ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। প্রথম দফায় ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ৯ দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হলেও পরবর্তীতে তা কয়েকটি দফায় বাড়ানো হয়। সরকারের সাধারণ ছুটিতে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বন্ধ হতে থাকে বিভিন্ন বেসরকারি ও মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে বন্ধ করা হয় গণপরিবহনে যাতায়াত ব্যবস্থা।করোনা কে রুখে দিতে স্থবির হয়ে পরে পুরো দেশ ও জাতি। বিশ্ব তথা দেশজুড়ে করোনা ভাইরাসের বিস্তার যত বাড়ছে  বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগও ততটাই ঘনীভুত হতে লাগছে।করোনা ভাইরাসের  চিকিৎসা ব্যবস্থা বা কোন প্রতিষেধক  আবিষ্কার না হওয়ায় স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় লকডাউন নিশ্চিত করার।ধীরে ধীরে বন্ধ হতে থাকে সকল শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। কর্মহীন হয়ে পরে দেশের মোট জনসংখ্যার কয়েক শতাংশ।অনেকেই হয়ে পরেছে পুরো বেকার।এরি নাম কি তাহলে জীবন যুদ্ধ? আবার অনেকে চাকরি হারিয়ে নতুন জীবিকায় সংসার চালানোর প্রাণবন্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। লজ্জা সংশয়ে কেউ কেউ পরিবারকে জানাতেই পারছে না কি উপায়ে চলছে আয় উপার্জন।তাও কি শেষ রক্ষা হয়েছে কারও বাসা ভাড়া বাঁকি কারও মুদির দোকানে বাঁকির  খাতায় বকেয়ার দীর্ঘ সারি। তবুও তাদের দুচোখ ভরা স্বপ্ন কেঁটে যাবে এ দাহকাল।এমন অসংখ্য গল্প আছে আমাদের চারপাশে। বদলে যাচ্ছে মানুষের পেশা বেকার হচ্ছে বহু মানুষ। সারা বিশ্বেই কর্মজীবিরা আজ কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে।এর মাঝেও সুদিনের স্বপ্ন দেখছে শ্রমজীবি মানুষ।কেটে যাবে আঁধার ফিরে আসবে আলোক ঝলমলে মানব সভ্যতা। সরকারের পক্ষ থেকে কর্মহীন মানুষদের জন্য নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।প্রতিটি ওয়ার্ড বা পাড়া-মহল্লায় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সরকারের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।করোনা সংকটকালীন সময়ে ভুক্তভোগীদের দোরগোড়ায় চাল, ডাল, আলু, তেল ও নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী পৌঁছানোর পাশাপাশি মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে নগদ অর্থ সহায়তা প্রদানে সরকার অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার সামর্থ্যবান ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ সমাজের কর্মহীন মানুষের পাশে দাঁড়ান। করোনাকালীন সময়ের শুরু থেকেই করোনার  বিস্তার রোধে মানুষকে সচেতন করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত সকল সাংগঠনিক ইউনিটের পক্ষ থেকে জনসচেতনতা মূলক লিফলেট বিতরণ, ছাত্রলীগের তৈরীকৃত হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ এর পাশাপাশি নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী চাল,ডাল,আলু,তেল ও প্রয়োজনীয় ঔষধ  সামগ্রী বিতরণ করে থাকে।যা পরবর্তীতে গণমানুষের চোখে প্রশংসনীয়তায় রুপ নেয়।এর পরও কাটেনি করোনাকালীন সংশয় ক্যালেন্ডারের পাতায় দিন বাড়তে-বাড়তে বাড়তে থাকে সংক্রমনের সংখ্যা বাড়তে থাকে মৃত্যুর মিছিল।করোনায় প্রাণ কেড়ে নিয়েছে শিক্ষক, ডাক্তার, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সাংবাদিক ও দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিবিদদের। যা দেশের অপূরণীয় ক্ষতি। বাংলাদেশে প্রথম দিক থেকেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সাফল্যের সাথেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিধিনিষেধ আরোপ করে করোনার প্রকোপ  ঠেকিয়ে বহিঃবিশ্বে প্রশংসিত হয়েছেন। তার পরও শেষ রক্ষা না হলেও অনেকটায় নিয়ন্ত্রণেই ছিল করোনার প্রকোপ। কিন্তু জীবন আর জীবিকার কথা একসঙ্গে ভাবতে গিয়েই খুলে দেওয়া হলো সকল প্রতিষ্ঠান শুধু মাত্র শিক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে বন্ধ রাখা হলো দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বাড়ানো হলো না আর সাধারণ ছুটি।ততদিনে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার ঝুঁকি। সাধারণ মানুষ তো মরছেই তার সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে সমাজের উচ্চপদস্থ দের মৃত্যুর হার। গত কয়েক দিনে আমরা হারিয়েছি আমাদের অভিভাবক বিশিষ্ট প্রবীণ রাজনীতিবিদ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এমপি,ধর্মপ্রতিমন্ত্রী শেখ আব্দুল্লাহ, সিলেটের জনপ্রিয় মেয়র বদর উদ্দিন আহমেদ  কামরান ও প্রবীণ সাংবাদিক কামাল লোহানী সহ আরও হারিয়েছি একদল খ্যাতনামা চিকিৎসকদের যারা নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসা সেবা প্রদান করে যাচ্ছিলেন।এছাড়া বর্তমানে বাংলাদেশের আরো গুরুত্বপূর্ণ কিছু ব্যক্তি করণায় আক্রান্ত।জানিনা এই মৃত্যুর মিছিল কই গিয়ে দাঁড়াবে। আমার অত্যন্ত একান্ত ব্যক্তিগত প্রার্থনা বাংলাদেশের গণভবনে যেন করোনা ঢুকতে না পারে। সরকারেরই উচিত সে জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া। মানবতার মা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেক সময় বেপরোয়াভাবেই সরকারি দায়িত্ব পালন করেন।তার নিজের জন্য না হলেও জাতির স্বার্থে আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর স্বার্থে তাকে সুস্থ ও রোগমুক্ত থেকে বেঁচে থাকতে হবে আরও অনেকটা দিন। বর্তমান এই সংকটকালীন সময়ে সরকারের পাশাপাশি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের কাজে নিয়োজিত ডাক্তার,আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য বৃন্দ, সাংবাদিক ও গণমাধ্যম কর্মী। এতকিছুর পরেও বাংলাদেশের বিএনপি-জামাতিরা এবং বকধার্মিক সুশীল সমাজ নাকি আশায় বুক বেঁধেছে যে শেখ হাসিনা দেশের যতই উন্নয়ন ঘটাক না কেন যদি করোনায় ভয়াবহ মৃত্যুর থাবা থেকে দেশবাসীকে বাঁচাতে না পারে তাহলে সরকার ক্ষমতা হারাবে। তারা এ আশায় দেশের এই সংকটকালীন সময়েও করোনা প্রতিরোধে অংশ না নিয়ে ঘাপটি মেরে বসে আছে। ইনশাআল্লাহ্ শেখ হাসিনা তার জনপ্রিয়তার শীর্ষে থেকেই করোনা মোকাবেলায় দেশ এর মানুষের পাশে থেকে এর মোকাবেলা  করবে।করোনায় থমকে আছে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কিন্তু মনে রাখবেন সাময়িক এই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার ক্ষমতা আছে বাংলাদেশের।দরকার শুধু আপনার ও আপনার পরিবারের সুস্থভাবে বেঁচে থাকা। করোনা  দূর্যোগ কেটে গেলে আবারও ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশ। সেই পর্যন্ত সবাই সরকারি বিধি নিষেধ মেনে চলুন। সুস্থ থাকুন নিরাপদে থাকুন।
লেখক,

মোঃ মোক্তাদেরুল ইসলাম মিম পোদ্দার   যুগ্ম সাধারণ  সম্পাদকবাংলাদেশ ছাত্রলীগ, বগুড়া জেলা শাখা ও  শিক্ষার্থী গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।