আন্ত:কোন্দলে পরিকর্ল্পিতভাবে খুন হয়েছিল বিপ্লব, ৫ জন গ্রেফতার ও ১ জনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী

বগুড়া সোনাতলায় চাঞ্চল্যকর বিপ্লব সরকার হত্যাকান্ডের আড়াই বছর পর এর রহস্য উন্মোচন করে আসামীদের গ্রেফতার করেছে সোনাতলা থানা পুর্লিশ। আন্ত:কোন্দলে পরিকল্পিতভাবেই বগুড়া শহরের ঠনঠনিয়া পশ্চিমপাড়া এলাকার হযরত আলীর ছেলে বিপ্লব কে খুন করা হয়েছিল বলে জানা যায়। এঘটনায় ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে যার মধ্যে মূল আসামী রাজিব হোসেন রাজু (২৮) ইতিমধ্যেই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে।
সোমবার দুপুরে বগুড়া পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জেলা পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা বিপিএম বার এই তথ্য জানান। সংবাদ
সম্মেলনে তিনি বলেন, ২০১৮ সালের ১৩ই ফেব্রুয়ারী সোনাতলা উপজেলার নগরপাড়া মহিশাপাড়া গ্রামে গনিজান কালভাটের নিচে বস্তাবন্দী অবস্থায়
ক্ষতবিক্ষতভাবে একটি অজ্ঞাত লাশ পাওয়া গিয়েছিল। পরবর্তীতে পত্রিকা এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রচারের মাধ্যমে লাশের পরিচয় শনাক্ত করা হয়। পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর বগুড়া ঠনঠনিয়া এলাকার বিপ্লব সোনাতলায় কিভাবে খুন হলো এমন নানা প্রশ্নে বিপ্লবের সাথে ঘনিষ্ঠ সকলকে জেলা পুলিশের কঠোর নজরদারিতে রাখা হয়। পরে একপর্যায়ে জেলা পুলিশের হাল না ছাড়ার মানসিকতায় এবং
তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে তদন্তকালে মূল হত্যাকারী ঠনঠনিয়া পশ্চিমপাড়ার আব্দুর রউফের ছেলে রাজিব হোসেন রাজুর নাম সামনে উঠে আসে। খোঁজ নিয়ে দেখা যায় ঘাতক রাজিব প্রায় আড়াই বছর ধওে তার মামার বাসা যশোরে গোপনে
অবস্থান করছে। পরবর্তীতে জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় এবং শিবগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার কুদরত-ই খুদা শুভ’র নেতৃত্বে তাকে যশোর থেকে গ্রেফতার করা হয় এবং গ্রেফতারকৃত রাজীবের স্বীকারোক্তি নিয়ে তার দেওয়া তথ্যমতে রবিবার সারাদিন বগুড়ার বিভিন্ন স্থান থেকে এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত আর ৪ জন যথাক্রমে, রমজান আলীর ছেলে দুই ছেলে বেলাল হোসেন এবং হাসান আলী, আব্দুস সামাদের ছেলে আব্দুর রহমান ওরফে শুটকু যারা প্রত্যেকেই বগুড়া সদরের খান্দার এলাকার বাসিন্দা এবং সোনাতলা থানার লক্ষীনারায়ণ পাড়ার মৃত: রামনাত মন্ডল এর ছেলে সঞ্জয় কুমার মন্ডল কে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদের আদালতে ৭ দিনের রিমান্ড চাওয়া হলে প্রত্যেকের ৩ দিনের করে রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে বলেও জানান জেলা পুলিশ সুপার আলী আশরাফ।
এদিকে স্থানীয় এবং জেলা পুলিশের বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, মৃত বিপ্লব এবং গ্রেফতারকৃত আসামীরা একই সাথে চলাফেরা করতো। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দে হত্যাকান্ডের প্রায় ১ মাস আগে বগুড়া পাসপোর্ট অফিসের সামনে বিপ্লব
মূল আসামী রাজীবকে মেরেছিল এবং তার সাথে প্রকাশ্যেই হাতাহাতি হয়েছিল।
পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত বেলাল উক্ত মারামারির ঘটনায় বিপ্লবের সাথে কথা বলতে গেলে বিপ্লব বেলালের উপর চড়াও হয়ে তাকে ছুরিকাঘাত করে যাতে বেলাল কে শজিমেক হাসপাতালে ভর্তিও করা হয়েছিল। পরে বিপ্লবের উপর ক্ষোভ থেকে এক
পর্যায়ে তার প্রতিপক্ষরা তার বসতবাড়ি পুড়িয়ে দেয় আর এঘটনায় বিপ্লব রাজীবকে দায়ী করে তাকে বেশ কিছুদিন ধাওয়া করে মারার জন্যে। এসব দ্বন্দের জেরে বিপ্লবের প্রতিপক্ষরা তাকে সন্মিলিতভাবে প্রতিহত করতে একদিন বিপ্লবের কাছের এক বন্ধুকে দিয়ে নানাভাবে ফুসলিয়ে বিপ্লবকে ডেকে আনা হয় ঘুরতে যাওয়ার নাম করে। তখন একটি ভাড়া করা প্রাইভেট কারে করে রাজীব কে সাথে নিয়ে
বিপ্লবকে নিয়ে যাওয়া হয় সোনাতলা থানার করপুর বাজারের একটি চাতালে যেখানে আগে থেকেই অবস্থান করছিলো চাতালের কর্মচারী গ্রেফতারকৃত
আসামী সঞ্জয়সহ বাকি আসামীরা। আর বিপ্লব সেখানে পৌঁছালে দীর্ঘদিনের পূর্ব শত্রুতা এবং কোন্দলের অবসান ঘটানো হয় তাকে অতর্কিত ছুরিকাঘাতের মাধ্যমে হত্যার মধ্য দিয়ে। পরে আসামীরাই সুপরিকল্পিতভাবে বিপ্লবের লাশ বস্তা
বন্দি করে ফেলে দেয় সেই কালভাটের নিচে। উপোরোক্ত তথ্যের অধিকাংশই নিশ্চিত
হওয়া গেছে জেলা পুলিশ সুপার আলী আশরাফের বক্তব্যেও। এই হত্যাকান্ডের বিষয়ে পরবর্তীতে আর কি পদক্ষেপ নেওয়া হবে মর্মে জেলা পুলিশের মিডিয়া মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তীর সাথে কথা বললে তিনি জানান, দীর্ঘ সময় পর হলেও জেলা পুলিশ সুপারের একান্ত প্রচেষ্টায় এই হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচিত হয়েছে। ইতিমধ্যেই মূলহত্যাকারী রাজীব স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী
প্রদান করেছেন এবং আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে মামলার সাথে জড়িত সকল ঘটনা নিশ্চিত হওয়া গেছে। গ্রেফতারকৃত ৫ জন ছাড়াও এর সাথে প্রত্যেক্ষ বা পরোক্ষভাবে যারা জড়িত ছিলো তাদেরকেও পর্যায়ক্রমে আইনের আওতায় আনা হবে
মর্মে জানান জেলা পুলিশের এই কর্মকর্তা।