মাদক ব্যবসা ছেড়ে জীবন সংগ্রামে ফজলু

এক সময়ের কুখ্যাত মাদক সম্রাট খ্যাত ফজলুর রহমান ওরফে ঘোড়া ফজলু মাদক ব্যবসা
ছেড়ে জীবন সংগ্রামের পথ বেছে নিয়েছেন। জীবনের দীর্ঘ সময় মাদক সেবী, থানা পুলিশ, জেল জড়িমানা, কোর্ট কাচারী নিয়ে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করলেও এখন সে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সৎ পথে জীবিকা নির্বাহ করছে। অন্ধকার জীবন থেকে আলোর পথে এসে স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে ফজলু এখন অনেক সুখী জীবন অতিবাহিত করছে।
প্রায় দুই বছর আগেও চাটমোহর উপজেলার রেলবাজার এলাকার প্রখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী
ঘোড়া ফজলুকে মানুষ কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে চিনতো জানতো। তার গাঁজার ব্যবসা ছিল সমগ্র উপজেলা ব্যাপী বিস্তৃত। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি
দিয়ে তার একটি পোষ্য ঘোড়ায় চড়ে সে উপজেলার গ্রাম গঞ্জে মাদক সেবীদের কাছে নির্বিঘেই পৌছে দিতো মাদক। অনেক সময় থানা পুলিশের হাতে মাদক সহ ধরা
পড়লেও বেশি দিন থাকতে হতো না জেল খানায়। স্ত্রীর কঠোর তদবিরে উকিলের কৌশলী
তৎপরতায় দ্রুতই ছাড়া পেয়ে যেতেন বন্দী জীবন থেকে। সেখান থেকে ফিরে আবারও শুরু
আগের মতো। এভাবেই চলতো দিনের পর দিন। ইতিমধ্যে তার মাথায় ঝুলছিল ১১টি মাদক মামলা। প্রতি মাসে ২/৩ বার তাকে আদালতে হাজিরা দিতেই হতো এসব মামলার আসামী হিসেবে।
অবশেষে ২০১৮ সালে সে উপলব্ধি করলো এমন জীবন কোন সুস্থ্য জঞ্জাল মুক্ত মানব জীবন
হতে পারেনা। এমন মূহুর্তে তৎকালিন সহাকারি পুলিশ সুপার (চাটমোহর সার্কেল) তাপস কুমার পাল তাকে একদিন ডেকে মাদকের পথ ছেড়ে সুস্থ্য জীবনে ফেরার আহ্বান জানায়। এজন্য তিনি সব রকম সহযোগীতা করতে সব সময় প্রস্তুত ছিল বলেও ফজলু জানায়। পুলিশ সুপারের এই আহ্বানে সে সারা দিয়ে তার সংসারে থাকা চারটি ছোট ছোট পুত্র সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে অন্ধকার পথ ছেড়ে আলোর পথে আসতে শুরু করে।
আজ সে চাটমোহর রেলস্টেশন সংলগ্ন একটি দোকান ঘর ভাড়া নিয়ে খাবার হোটেল চালু করেছে। তার হোটেলে ভাত, রুটি, পুড়ি, সিঙ্গারা, পরোটা, চা তৈরি ও বিক্রি করে উপার্জিত অর্থে অনেক সুখের দিন অতিবাহিত করছে। তার দোকানে বাইরের
কোন কর্মচারী নেই, তার ছোট ছোট ছেলেরাই তাকে সকল ক্ষেত্রে সহযোগীতা করছে দোকান পরিচালনায়। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত অত্যন্ত কঠোর পরিশ্রম করে টাকা উপার্জন করে দিনপাত করছে।
স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার বিষয়ে জানতে চাইলে ফজলু কালের কণ্ঠকে বলেন, আজ আমি যার অনুপ্রেরণায় মাদকের পথ ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছি তিনি হলেন আমাদের সাবেক সহকারি পুলিশ সুপার তাপস স্যার। মূলত তিনিই আমাকে আজ আলোর পথ দেখিয়েছেন। আজ আমি সারা দিন কঠোর পরিশ্রম করে রাতে ঘরে ফিরে শান্তির ঘুম দিতে পারছি। আমাকে নিয়ে আর আমার স্ত্রী, ছোট ছোট সন্তানদের চিন্তা করতে হচ্ছেনা। আমি এখন অনেক সুখেই আছি।
প্রশাসন সহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আমার এখন একটাই চাওয়া, আমার অন্ধকার জীবনে থাকা অবস্থায় মোট ১১টি মাদক মামলা ছিল। সেটা বর্তমানে ৪টিতে নেমে এসেছে। এই ৪টি মামলা খারিজ করতে প্রশাসনের কোন সহৃদয়বান ব্যক্তি যদি আমাকে সহায়তা করতো তাহলে আর আমার জীবনে কোন কষ্ট থাকতো না।