চাটমোহরে একই পরিবারের তিন সদস্য প্রতিবন্ধী, নেই সহায়তা কার্ড

‘ইশারায় সবকিছুই বুঝাতে হয় স্ত্রী, ছেলে মেয়েকে। অনেক সময় কথা না বুঝলে ভীষন অসুবিধায় পড়তে হয়। এমন করে ইশারায় কথা বলতে বুঝাতে গিয়ে আজ নিজেকেই প্রতিবন্ধীর মতো মনে হয়। কষ্টের শেষ নেই। তারপরও জীবন চালাতেই হবে। তবে কষ্ট লাগে এতকিছুর পরও বউ কিংবা ছেলে কারো প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড হলো না।’
এভাবেই নিজের দু:খ কষ্টের দিনলিপির কথা আক্ষেপের সুরে বলছিলেন পাবনার চাটমোহর উপজেলার ডিবিগ্রাম ইউনিয়নের কাটাখালী সরকারপাড়া গ্রামের দিনমজুর রবিউল ইসলাম। তার স্ত্রী মারুফা খাতুন বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী। তার দুই
সন্তান মারুফ (৬) ও তানিশা (৫) তারাও একইভাবে প্রতিবন্ধী। বয়স হিসেবে তার স্ত্রী মারুফা ও ছেলে মারুফের ভাতা পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু এখনও তারা প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড পায়নি।
আলাপকালে জানা গেল, প্রায় ১২ বছর আগে একই গ্রামের মৃত মোক্তার হোসেনের প্রতিবন্ধী মেয়ে মারুফাকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর একটি ছেলে ও একটি মেয়ে সন্তান জন্মলাভ করলেও তারাও প্রতিবন্ধী হয়। এ নিয়ে কষ্টের শেষ নেই তাদের পরিবারের।
রবিউল ইসলাম দিনমজুরী করে যা পান তা দিয়ে কোনো রকমে চলে সংসার।
রবিউল ইসলাম জানান, প্রতিবন্ধী মিয়িকে বিয়ে করছিল্যাম, আশা ছিল হয়তো আল্লাহ সুস্থ্য ছাওয়ালপাল দিবি। কিন্তু পরপর দুইডে সন্তান দিলিও মায়ের মতো তারাও প্রতিবন্ধী হইছে। পাবনা, ঢাকাসহ মেলা জায়গায় চিকিৎসা করাবের লিয়ে
গেছি, অনেক টেকাও খরচ হইছে, কিন্তু কোন ফল পাই নাই।
রবিউল আরো জানান, তবে কষ্ট লাগে এতকিছুর পরও স্ত্রী বা সন্তান কারো প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড হয় নাই। মেম্বারকে অনেকবার বলেছি, তিনি আশ্বাস
দিয়েছেন, কিন্তু কাজ হয়নি। ইবার আমার বউয়ের আইডি কার্ডের কপি লিয়ে গ্যাছে। দেহা যাইক, কাম হয় কিনা। করোনার মধ্যি তেমন কাজ কাম নাই। সংসার চালানে অনেক কষ্ট হয়া গ্যাছে।
ডিবিগ্রাম ইউনিয়নের দুই নাম্বার ইউপি সদস্য হাফিজুল ইসলাম জানান, এবছর প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ডের তালিকায় রবিউলের স্ত্রীর নাম দেয়া হয়েছে।
হয়তো পেয়েও যাবে ভাতার কার্ড। আর তার দুই সন্তানের ভাতা পাওয়ার বয়স হয়নি।
হলে সেটাও করে দেয়া হবে। আমরা বরং এবার প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড নেয়ার লোকই পাচ্ছি না।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম জানান, প্রতিবন্ধী ভাতার তালিকাভুক্ত হতে হলে সর্বনি¤œ বয়স ৬ বছর হতে হয়। এবার জরিপ ছাড়া কেউ ভাতার তালিকাভুক্ত হতে পারবেন না। প্রতিবন্ধী ওই নারীর যদি জরিপ হয়ে থাকে তবে তিনি ভাতার তালিকাভুক্ত হবেন এবং ভাতা পাবেন। যদি তার জরিপ না হয়ে তাকেতাহলে এবার ভাতা পাবেন না। আগামী অক্টোবর মাসে পুনরায় প্রতিবন্ধী ভাতার
তালিকা তৈরীর কাজ শুর হবে। এবার না হলে ওই সময়ে তিনি তালিকাভুক্ত হবেন।