বারবার মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা এক কিংবদন্তির কথা বলছি। আমি সেই কিংবদন্তির কথা বলতে চাই যাকে বেঁচে থাকতে হচ্ছে পরিবারের সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যা করার পরেও। আমি সেই কিংবদন্তির কথা বলতে চাই যে বাবা মা, ভাই বোন, হারিয়ে এতিম হয়ে একমাত্র ছোট বোনকে বুকে জড়িয়ে শোককে শক্তিতে রূপান্তর করে নিজেকে তৈরী করতে হয়েছে মানুষের মুক্তির আন্দোলনে। বাংলার মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি ও আর্থসামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে আজীবন সংগ্রাম করা যাঁর ব্রতী তাঁর কথা। সেই মানুষটি আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা বিনির্মাণের প্রত্যয়ে সদা সচেতন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার রূপকার আমাদের সকলের প্রিয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। আজ ১১ জুন আপামর জনসাধারণের একমাত্র আশা আকাঙ্ক্ষার ভরসার স্থান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কারামুক্তি দিবস আজ।
১/১১ বাংলাদেশের ইতিহাসে তৈরি হয় একটি কাল অধ্যায়। বাঙালির মুক্তিকামী মানুষকে শৃঙ্খলিত করে এদেশের শাসক হয়ে উঠে অগণতান্ত্রিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা। এই চেপে বসা অপশক্তি ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই সকাল বেলা ধানমন্ডি থেকে গ্রেফতার করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে। তাঁর এই গ্রেফতারের মাধ্যমে পরিস্ফুটিত হয় এক গভীর ষড়যন্ত্র। এদেশের গণমানুষের কন্ঠস্বর রোধ করার একটি প্রক্রিয়া শুরু হয়। দেশের মধ্যে বিরাজ করে নিরবতা। নিরবতা ভালো, কিন্তু সেই নিরবতা যদি হয় কবরের নিরবতা! সেই নিরবতা এমন এক পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়ায় মানুষ কথা বলতে ভয় পায়। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে দলমত নির্বিশেষে প্রয় সবাইকে গ্রেফতার করা হয়। চারদিক থেকে জননেত্রী শেখ হাসিনার মুক্তির দাবিতে সরব হলেও তাঁকে মুক্তি দেয়া হচ্ছিল না। ষড়যন্ত্র মূলক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছিল। জননেত্রী শেখ হাসিনার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলেও তাঁকে মুক্তি দেয়া হচ্ছিল না। জীবন সংসারে পিতা মাতা কিংবা পরিবার পরিজনদের হারিয়ে স্বৈরশাসকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ১৯৮১ সালে বাংলাদেশের মানুষের মাঝে ফিরে আসা মানুষটিকে কোন ষড়যন্ত্রের বেড়া জালে আটকে রাখা কষ্টসাধ্য বিষয়। ১/১১ তত্ত্বাবধায়ক সরকার বুঝতে পারেনি যে মানুষটির রাজনৈতিক পথচলা কখনই কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না সেই মানুষটিকে বন্দি করে বাংলার জনগণকে শোষন বা দমিয়ে রাখা যাবে না। জীবনের অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে রাজনীতির বহু কণ্টকাকীর্ণ পথ চলতে চলতে বাংলাদেশর মানুষের হৃদয়ের গভীরে স্থান করে নেয় মানুষটি জননেত্রী শেখ হাসিনা। যার রাজনৈতিক পথ চলার মাঝে ১৯৮৩,১৯৮৫,১৯৯০ সালে গ্রেফতার করা হয় সেই মানুষটিকে বন্দি করে বাংলার জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করা যাবে না। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের অনেকটা সময় কাটাতে হয়েছে কারান্তরালে। তাঁরই কন্যাকে কারাগারের ভয় দেখিয়ে কোন লাভ হবে না। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার বুকে যখন ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে গ্রেনেড হামলা হয় তখন আওয়ামী লীগের নেতা কর্মী মিলে মানব ঢাল তৈরী করে তাঁকে রক্ষা করে নিজেদের বুকের রক্ত দিয়ে। ১৯বার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে যে মানুষটিকে তাঁকে মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে কোন লাভ নেই।সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার বুঝতে পারেনি মৃত্যুঞ্জয়ী মানুষকে শৃঙ্খলিত করে রাখা যায় না। এক স্মৃতিচারণে জননেত্রী শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করার যে পরিকল্পনা তা সেনা নিয়ন্ত্রিত সরকারের সময় কারাগারে বসে নিঃসঙ্গ দিনগুলোতেই তৈরী করেছিলেন। কারাগারে বসেও যে মানুষটি নিজের চিন্তা না করে এদেশের মানুষের জীবন মান উন্নয়নে কথা ভেবেছিলেন সেই মানুষটিই আজ আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। মানুষের মাঝে যে মানুষটি নিজের মুক্তির পথ খোঁজে সেই মানুষ কি বন্দি করে রাখা যায়। তাইত অগণতান্ত্রিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারও তাঁকে আটকে রাখতে পারল না। এগার মাস বন্দি করে রাখার পর ২০০৮ সালের ১১ জুন অমৃতের সন্তান জননেত্রী শেখ হাসিনাকে সংসদ ভবনের বিশেষ কারাগার থেকে তাঁকে মুক্তি দিলেন। কারামুক্ত হয়ে বিদেশে চিকিত্সা নিয়ে হাজারো বাধার মুখে নিজভূমে ফিরে আসেন। ফিরে এসে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারী আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার গঠন করে। এরপর ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। আর বাংলার আপামর জনসাধারণের প্রাণ প্রিয় নেত্রী গণমানুষের কন্ঠস্বর জননেত্রী শেখ হাসিনা টানা তৃতীয় বার ও চতুর্থ বারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার রূপকার এবং একটি উন্নত দেশে পরিণত করার জন্য নিরলস পরিশ্রম করে যাওয়া মানুষটির নাম শেখ হাসিনা। যে মানুষটি আজ বিশ্ব বাসির কাছে একজন খুদা ও দারিদ্রমুক্তির কাণ্ডারীর নাম। যে মানুষটি বাংলাদেশকে বিশ্ববাসির কাছে একটি রোল মডেলে হিসেবে পরিণত করেছেন সেই জনগণের কাণ্ডারী জননেত্রী শেখ হাসিনার কারামুক্তি দিবস আজ। আজকের দিনে বাংলার মানুষ তাঁর সুস্বাস্থ্যও দীর্ঘায়ু কামনা করবে নিজ গৃহে বসে। বেঁচে থাকুক অনন্তকাল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা।
#মোহাম্মদ কানিছুর রহমানসম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য, বঙ্গবন্ধু বীক্ষণ ওউপ-রেজিস্ট্রারমাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, টাঙ্গাইল।