সারা দেশে মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রভাবে যখন অনেক সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ঠিকমত সেবা না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তখনও দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে সংক্রমণ ঝুঁকি নিয়েই সেবা দিয়ে যাচ্ছেন কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মীরা। অন্যান্য সময়ের থেকে এখন ক্লিনিকে রোগীর সংখ্যাও বেড়েছে। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়ে উপজেলা ও জেলা হাসপাতালে না গিয়ে স্থানীয় কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ায় সন্তুষ্ট স্থানীয়রা।
খানসামা উপজেলায় মোট ১৯টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। এসব ক্লিনিকগুলো বেশিরভাগই প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত। ১৯টি ক্লিনিকে দৈনিক রোগীর সংখ্যা প্রায় ৭০০ জন আর করোনার পূর্বে ছিল ৬০০ জন। প্রতি ক্লিনিকে নিরাপত্তা সামগ্রী পিপিই মাস্ক,স্যানিটাইজার,হ্যান্ড গøাভস দিয়েছে স্বাস্থ্যবিভাগ। যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল হওয়ায় সংক্রমণ ঝুঁকি নিয়েই রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করছে সিএইচসিপিরা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশমতে সপ্তাহে ৬দিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডাররা নিয়মিত সেবা দিচ্ছেন। এছাড়া একজন স্বাস্থ্য সহকারী ও মাঠ পর্যায়ে কাজের জন্য নিযুক্ত ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার অ্যাসিসটেন্ট সপ্তাহে ৩ দিন করে ক্লিনিকগুলোতে সেবা দিচ্ছেন। করোনা পরিস্থিতি শুরুর প্রথম দিকে রোগী কমলেও মে-জুন মাসে প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে রোগী সংখ্যা বেড়েছে। তবে কিছু কিছু ক্লিনিকের ভঙ্গুর অবকাঠামোর কারনে সেবাবঞ্চিত হচ্ছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী।
খামারপাড়া ইউনিয়নের হকেরহাট কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি বকুল আহমেদ বলেন, করোনা সংক্রমণের আশঙ্কার মধ্যেও জনসাধারণকে নিয়মিত সেবা প্রদান করছি। প্রায়ই কিছু রোগী আসেন যাদের সমস্যার সঙ্গে করোনা সংক্রমণের উপসর্গের অনেকটা মিল থাকে। সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহারের মাধ্যমে যতটা সম্ভব নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে সেবা দিয়ে যাচ্ছি।
ছাতিয়ানগড় কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা নিতে আসা শাহনাজ বেগম,খাদিজা আক্তার ও তাহেরা বেগম বলেন,করোনা আতংকে কারণে হাসপাতালে যেতে পারি না। ঠান্ডা গরমের জন্য জ্বর মাথাব্যথা নিয়ে বাড়ির পাশে কমিউনিটি ক্লিনিকে আসছি। প্রেসার ও ওজন মেপে ওষুধ দিল, চলে আসলাম। গ্রামের অনেকেই এখানে সেবা নিতে আসেন।
ইউপি সদস্য রশিদুল ইসলাম শাহ জানান,কমিউনিটি ক্লিনিক না থাকলে স্বাস্থ্যসেবা পেতে অনেক দূরে যেতে হত। এতে সময় ও অর্থ ব্যয় হত এবং দুর্ভোগও বাড়তো। বাড়ির পাশে কমিউনিটি ক্লিনিক থাকায় জনগণ বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে।
কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) দিনাজপুর জেলা শাখার সভাপতি মোরশেদ চৌধুরী বলেন,সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী ঝুঁকি নিয়েই আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি সেবা দেওয়ার। এই করোনাকালীন সময়ে আগের থেকে রোগীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে বলে তিনি জানান।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা.শামসুদ্দোহা মুকুল বলেন, সিএইচসিপিদের সুরক্ষার জন্য পিপিই,মাস্ক,হ্যান্ড গøাভস,হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেওয়া হয়েছে। এই সংকটময় মুহূর্তে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো তৃণমূল মানুষদের স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে। সিএইচসিপিদের সাহসী ভূমিকার জন্য স্বাস্থ্য সেবা দোরগোড়ায় পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প.কর্মকর্তা ডা.আবু রেজা মো:মাহমুদুল হক বলেন,করোনাকালে কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মীরা প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের সচেতনতা কার্যক্রম ও বিভিন্ন পদক্ষেপে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিকের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য আমরা চেষ্টা করছি।