পাবনার ভাঙ্গুড়া থেকে আন্তঃজেলা ও বিভাগীয় শহরে চলাচলকারী বাস ও মিনিবাসে চরম যাত্রী সংকট দেখা দিয়েছে। এতে চলাচলকারী গণপরিবহনের জ্বালানি খরচ মিটিয়ে মোটর শ্রমিকদের অর্থকষ্ট কোনভাবেই দূর হচ্ছে না। ফলে সরকারিভাবে যানবাহন চলাচলের সিদ্ধান্ত দিলেও যাত্রী সংকটে ভাঙ্গুড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে বেশ কয়েকটি বাস এখনো চলাচল শুরু করেনি। এমনকি যাত্রী সংকটের কারণে উপজেলার সিএনজি ও মাইক্রোবাস চালকরাও মানবেতর জীবনযাপন করছে। তবে ঢাকাগামী কোচগুলোতে যাত্রীর চাপ রয়েছে বলে জানা গেছে।
গণপরিবহন সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘ ৬৭ দিন বন্ধ থাকার পর গত সোমবার হতে ভাঙ্গুড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বগুড়া ও পাবনা সহ দেশের বিভিন্ন শহরে বাস ও মিনিবাস চলাচল শুরু করে। এতে সরকারি নির্দেশে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে শতকরা ৬০ ভাগ ভাড়া বৃদ্ধি করে গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচল শুরু হয়। এ উপলক্ষে ভাঙ্গুড়া মোটর শ্রমিক ফেডারেশন কর্তৃপক্ষ সরকারি নির্দেশ মোতাবেক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যবস্থা নেয়। কিন্তু সোমবার থেকেই চরম যাত্রী সংকট দেখা দেয় ভাঙ্গুড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে ছেড়ে যাওয়া গণপরিবহনে। এ অবস্থায় ভাঙ্গুড়া থেকে পাবনা শহরে চলাচলকারি ৬টি বাসের মধ্যে চারটি বাস যাত্রী না পেয়ে গত চারদিনেও পাবনা অভিমুখে রওনা দিতে পারেনি। এছাড়া রাজশাহী ও বগুড়া সহ অন্যান্য শহরে চলাচলকারি বাসগুলোতে সরকার অনুমোদিত আসনের অর্ধেক যাত্রীও চলাচল করছে না। এতে মারাত্মক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে গণপরিবহন কর্তৃপক্ষ ও মোটর শ্রমিকরা। একই অবস্থা উপজেলার সিএনজি ও মাইক্রোবাস চালকদেরও। ভাঙ্গুড়া সিএনজি স্ট্যান্ড থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী ১৮০টি সিএনজি অটোরিকশা ও প্রায় ২৫ টি মাইক্রোবাস যাত্রী না পেয়ে সংকটের মুখে পড়েছে। ভাঙ্গুড়া সিএনজি মালিক সমিতির সভাপতি আবদুল জব্বার বলেন, সারাদিন সিএনজি নিয়ে স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থেকেও অনেকের ভাগ্যে যাত্রী মিলছে না। এর উপর অনেক যাত্রী অতিরিক্ত ভাড়ার কথা শুনে যাত্রা না করে ফিরে যাচ্ছেন। অত্যন্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ যানবাহনে চলাচল করছে না।
একটি সূত্র জানায়, ভাড়া বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে অত্যধিক প্রয়োজন না হলে মানুষ এলাকার বাইরে চলাচল করছে না। এ কারণে সহসাই গণপরিবহনে যাত্রী সংকট দূূর হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
ভাঙ্গুড়া থেকে বগুড়া চলাচলকারী এস এস ট্রাভেলসের কন্ট্রাকটর জুয়েল আহমেদ বলেন, ‘লকডাউন তুলে দেওয়ার পর থেকে গাড়ি চলাচল করলেও চরম যাত্রী সংকটে পড়েছি। আমাদের বাসের ৫০ টি আসন রয়েছে। তবে সরকারের নির্দেশে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ২৫ জন যাত্রী তোলার অনুমতি পেয়েছি। কিন্তু গত মঙ্গলবার মাত্র ৩ জন যাত্রী নিয়ে এবং বুধবার ৭ জন যাত্রী নিয়ে বগুড়া গিয়েছি। এতে জ্বালানি খরচও জোগাড় হয়নি। তাহলে আমরা চলবো কিভাবে। জানিনা এই অবস্থার কবে পরিবর্তন হবে। এ নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে আমাদের মোটর শ্রমিকদের।
ভাঙ্গুড়া বাসস্ট্যান্ডের চেইন মাস্টার সাইদুল ইসলাম বলেন, যাত্রী সংকটের কারণে ভাঙ্গুড়া থেকে পাবনাগামী ৬টি বাসের মধ্যে চারটি বাস গত চারদিনেও চলাচল শুরু করেনি। শুধুমাত্র ঢাকা ও চট্টগ্রামগামী বাসে কোনো যাত্রী সংকট নেই। এছাড়া রাজশাহী ও বগুড়াসহ অন্যরুটে যাত্রী কম থাকলেও বাস নিয়মিত চলাচল করছে।
ভাঙ্গুড়া মোটর শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মোকসেদ আলী বলেন, ভাঙ্গুড়া থেকে ঢাকা রুটে ছাড়া অন্য সব রুটে গণপরিবহনে চরম যাত্রী সংকট চলছে। এতে লকডাউনের পরে গণপরিবহন চলাচল করলেও অর্থকষ্ট থেকে মুক্তি পায়নি মোটর শ্রমিকরা।