বিশেষ প্রতিনিধি–করোনার পুরোটা সময় জুড়ে কোথায় নেই তিনি! রাতের আঁধারে খাবার নিয়ে যাচ্ছেন বাড়ি বাড়ি। দিনের আলোয় কর্মী বাহিনী নিয়ে ছড়িয়ে পড়ছেন। রোদ ,বৃষ্টি মাথায় করে মাইক হাতে প্রচারণায় নামছেন । সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য মাইক নিয়ে দিনরাত ছুটে চলেছেন একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে । যার যতটুকু সাহায্য প্রয়োজন নিজের সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। নো ফটোসেশন ।ত্রাণ বা খাদ্য সহায়তা বলতে নারাজ তিনি । এটা কর্মহীনদের জন্য উপহার ।
মহামারী কোভিড-১৯ এর কারণে গত ২৬ মার্চ থেকে সারাদেশে সাধারণ ছুটিতে জনজীবন বিপর্যস্ত। নিম্ন আয়ের মানুষেরা রয়েছেন সরকারি ত্রাণ সাহায্যের অপেক্ষায়। আশা করছেন তাদের সহায়তায় এগিয়ে আসবেন স্থানীয় সাংসদ সহ জনপ্রতিনিধিরা ।কিন্তু বেশিরভাগ সংসদ সদস্য নিজ নির্বাচনী এলাকায় যাননি ।অনেকে এলাকায় থাকলেও খোঁজ রাখেননি অসহায় মানুষের। অনেকে আবার প্রতিনিধিদের মাধ্যমে যৎসামান্য খাদ্য সহায়তা দিয়ে ফটোসেশনের মাধ্যমে সাংসদের দায়িত্ব পালন করেছে ।
তবে এক্ষেত্রে নাটোরের একজন সংসদ সদস্য করোনার পুরোটা সময় জুড়ে সম্মুখ যোদ্ধার ভূমিকায় অবতীরণ হয়ে ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত স্থাপন করে জেলাবাসীর কাছে প্রশংসিত হয়েছেন ।তিনি নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নাটোর-২ (নাটোর সদর-নলডাঙ্গা আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল ।
গত ২২ মার্চ, সাধারণ ছুটি ঘোষণার আগে ১৩ মার্চ তিনি ঢাকা থেকে নির্বাচনী এলাকায় আসেন আর তারপর থেকে এলাকাতেই আছেন।করোনা থেকে জনগণকে রক্ষা করতে হাট-বাজার, মাঠ-ঘাট, বাসা-বাড়িতে প্রচার-প্রচারণায় রয়েছেন। তারা ব্যক্তিগত উদ্যোগে অসহায় ৫০ হাজার পরিবারকে বাড়িতে চাল, ডাল, আলুসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পৌঁছে দিয়েছেন । যা এখনো অব্যাহত আছে ।ঘাতক ব্যাধি করোনার আঘাতে মানুষ যখন অসহায় হয়ে পড়েছে ঠিক তখনই ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে একটি দিনের জন্য বসে থাকেনি ।কেবলমাত্র সরকারি ত্রাণ সহায়তা বণ্টন নয়, নিজের ব্যক্তিগত উদ্যোগে দুটি উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামে গ্রামে গিয়ে ত্রাণ সহায়তা নিশ্চিত করেছেন । দুই মাস ধরে একটি দিনের জন্য বসে থাকেনি । প্রতিদিনই দুটি উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভার দুটি স্থানে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত এক হাজার পরিবারকে খাদ্যসহায়তা দিয়েছেন । প্রকাশ্যে ত্রাণ বা খাদ্য সহায়তা নিতে যারা লজ্জা করে এমন মানুষদের জন্য চালু করেছেন ২৪ ঘন্টার হটলাইনে ।ফোনে কল দিলেই নিরবেই বাসার দরজায় পৌচ্ছে দিয়েছেন খাদ্যসামগ্রী।। জেলা প্রশাসন ,পুলিশের সাথে দফায় দফায় সভা ,স্থানীয় প্রশাসনকে পরামর্শ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ,সহ নানা কাজে সরাসরি নিজেকে ব্যস্ত রাখছেন সারাদিন। কোথায় নেই তিনি ।
গণমাধ্যমকর্মী সাব্বির আহমেদ বলেন,‘এমপি শুধুমাত্র সরকারি সাহায্য নিশ্চিত করছেন না, উনার ব্যক্তিগত খাত থেকেও প্রচুর ত্রাণ সহায়তা করছেন। অন্যরা যেখানে এমপিদের এলাকায়ই পাচ্ছেন না, সেখানে আমাদের শিমুল এমপি প্রথম থেকেই এলাকাতেই আছেন আর দিনরাত কাজ করছেন।’
শুধুমাত্র দরিদ্র জনগোষ্ঠি নয়,মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ইমাম,মুয়াজ্জেম,খতিব ,কর্মহীন রিকশা ভ্যান চালক,চা দোকানদার,ইমারত শ্রমিক,সংবাদপত্রের হকার,রংমিস্ত্রী,পরিবহণ শ্রমিক,কুলি শ্রমিক তৃতীয় লিঙ্গসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ যারা কাজের অভাবে সংকটে আছেন, তাদেরও সহযোগিতা করছেন শফিকুল ইসলাম শিমুল।
এছাড়া জেলা স্বাস্থ্য বিভাগকে ব্যক্তিগত ভাবে এক হাজার কীট ,পর্যাপ্ত পিপিই সহ সুরক্ষা সরঞ্জাম দিয়েছেন । পুরো নির্বাচনী এলাকায় স্প্রে করেছেন । শিশুখাদ্য,স্যানিইজার ,পোষাক বিতরণ ।
নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরী জলি বলেন, করোনার প্রথম থেকেই সংসদ সদস্য ঘোষণা দিয়েছিল, নাটোরের একটি মানুষও যেন উপোস না থাকে। চিকিৎসা না পেয়ে মানুষ যেন পথে ঘাটে না মরে। কেউ যদি মারা যায়, তার মরদেহ যেন পড়ে না থাকে। এ রকম অর্ধশত উদ্যোগ নিয়ে এখন অবধি মাঠ পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছে শিমুল এমপির হাজারো কর্মী। আর এসব সেবায় নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবীদের পরিবারের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সেই বার্তা, তা হলো- সেবা পৌঁছাতে কে আওয়ামীলীগ কে বিএনপি করে তা প্রাধান্য নয়, মমতাময়ী নেত্রীর মানবতার ভালোবাসার মমতা সহকারে পৌঁছে দিতে হবে বাংলার প্রতিটি ঘরে। বর্তমানে নাটোরের ঘরে ঘরে এসব সেবা পৌঁছাতে গঠন করা হয়েছে মোবাইল বিকাশ টিম, মোটর সাইকেল ইমার্জেন্সি টিম, অটো রিকশা ও ভ্যান টিম, ২৪ ঘণ্টা মৃত কবরস্থ ও সৎকার টিম।
এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সৈয়দ মোর্তেজা বাবলু বলেন,আমাদের এমপি করোনার সম্মুখ সমরের সেনাপতি। করোনা ইস্যুতে স্থানীয় এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুল যে ভূমিকা রাখছে তা প্রশংসনীয় ও দৃষ্টান্তমূলক। সব সংসদ সদস্য ব্যক্তিগত পর্যায়ে উনার মতো এগিয়ে এলে করোনা যুদ্ধে জয়ী হওয়া কষ্টসাধ্য হবে না।
এ বিষয়ে এমপি শিমুল বলেন, যারা আমাদের উপহার গ্রহণ করেছেন তারা আমাদের উপর দয়া দেখিয়েছেন, ভালোবাসা দেখিয়েছেন । কারণ রিযিকের মালিক আল্লাহ। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার একজন কর্মী হিসেবে মানুষের পাশে থাকতে শিখেছি। মানুষের পাশে দাঁড়ানোটা প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকেই পেয়েছি। সাধারণ মানুষের ভালোবাসা ছাড়া চাওয়া পাওয়ারও কিছু নেই আমার। সেটুকুই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি আমার জন্য।
তিনি জানান,এখন পর্যন্ত সরকারি সাহায্যের বাইরে ব্যক্তিগত ৩ কোটি টাকার বিভিন্ন সামগ্রী ত্রাণ বা সহযোগিতা হিসেবে দুটি উপজেলার মানুষকে দেওয়া হয়েছে। আমার সব সম্পদ বিক্রি করে হলোই খাদ্য উপহার দিয়ে যাবো ।
শফিকুল ইসলাম শিমুল তিনি ২০১৪ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে প্রথম এবং পরবর্তীতে একই দলের হয়ে ২০১৯ সালেও সংসদ সদস্য হন।