বিশেষ প্রতিবেদন করোনায় ঈদ।প্রথম বিশ^ যুদ্ধ এবং দ্বিতীয় বিশ^ যুদ্ধের কোনটাই আমি
দেখিনি। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ যারা দেখেনি শুধু গল্প শুনেছে।
আমি তাদের মতই এই দুটি ভয়াবহ বিশ^যুদ্ধের গল্প শুনেছি,শুনে অবাক হয়েছি। প্রথম বিশ^যুদ্ধ শুরু হয় ১৯১৪ সালের ২৮ জুলাই। ইউরোপে শুরু
হওয়া এই যুদ্ধ ১১ নভেম্বর ১৯১৮ সাল পর্যন্ত স্থায়ী ছিলো। এই যুদ্ধে ৯০ লাখ যোদ্ধা এবং ৫০ লাখ নীরিহ মানুষ নিহত হয়। প্রায় ১ কোটি সৈন্য
এবং ২ কোটি ১০ লাখ লোক আহত হয়। দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধ শুরু হয় ১৯৩৯ সালে এবং শেষ হয় ১৯৪৫ সালে। ৬ বছর ধরে চলা যুদ্ধে প্রায় ৫ কোটি
থেকে সাড়ে ৮ কোটি মানুষ মৃত্যুবরণ করে।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আমার বয়স ছিলো ২০ বছর ২ মাস। এই ভীষণ যুদ্ধ দেখার ভাগ্য নিয়ে জন্মেছিলাম আমি।
আমার সৌভাগ্য হয়েছিলো সেই মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন প্রত্যক্ষ সৈনিক হওয়ার। সুযোগ হয়েছিলো বীর সেনা, মুক্তিযোদ্ধা
হিসেবে পাকিস্তানি হায়েনা নামক সৈন্য এবং এদেশীয় তাদের পদলেহনকারি দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামসদের বিরুদ্ধে সম্মুখ সমরে অবতীর্ণ হওয়ার।
সর্বকালের সর্ব শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন সেই যুদ্ধের মহা নায়ক। বাঙালির স্বাধীকার আদায়ের অগ্রনায়ক। তিনি চির অবহেলিত ও নিষ্পেষিত বাঙালি জাতিকে
পরাধীনতার নাগপাশ হতে মুক্ত করে স্বাধীন সার্বভৌম একটি দেশ উপহার দিয়েছিলেন। সেসময় তিনি বাংলার সাড়ে সাতকোটি মানুষকে একই সুত্রে গেঁথেছিলেন। তিনি যেকথা বলতেন, এদেশের
মানুষ এক বাক্যে তা মেনে নিতেন। শেখ মুজিব ১৯৭১ সালে ৭ মার্চ তারিখে চির অভাগা বাঙালি জাতিকে জাগিয়ে তুল্লেন, ডাক দিলেন, বজ্রকন্ঠের হুংকারে তিনি নির্দেশ দিলেন, ‘‘তোমাদের যার যা কিছু
আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করবে। মনে রাখবা রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেবো এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ। জয়
বাংলা।’’
সত্যি সত্যি এদেশের আপামর জনতা কলের পুতুলের মত তার বাক্যকে দৈব
বাক্য মনে করে এক কাতারে শামিল হলো। বাংলার দামাল ছেলেরা পাকিস্তানি হায়েনা ও এদেশের দোসরদের বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে
অবতীর্ণ হলো। সুদীর্ঘ নয় মাস একটানা যুদ্ধ চলার পর এবছরের ১৬ ডিসেম্বর তৎকালিন পুর্ব-পাকিস্তানের সামরিক আইন প্রশাসক লেফটেন্যান্ট আমির আব্দুল্লাহ খান নিয়াজি (এ এ খান নিয়াজি),
বাংলাদেশ ও ভারতীয় বাহিনীর যুগ্ম কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎসিং অরোরার কাছে ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সৈন্যসহ নত মস্তকে
আত্মসমর্পণ করেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উপ সেনা প্রধান এয়ার কমোডর আব্দুল করিম খোন্দকার (একে খোন্দকার) আত্মসমর্পণে অস্থায়ী
সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন।
এসময় এদেশীয় দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামসরা কেউ কেউ পালিয়ে জীবন রক্ষা করে। অনেকে মুক্তি বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে চির বিদায় নেয়।
কাউকে জেলখানায় বন্দি করা হয়। যাদের অপরাধ গুরুতর ছিলোনা তাদেরমধ্যে কিছু সংখ্যক বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার ফলে ছাড়া
পায়। পরবর্তীকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অনেককেই ফাঁসি কাষ্ঠে ঝুলতে হয়। এখনো খোঁজ করলে আমুত্যু কারাগারে কাটানো
দুএকজন রাজাকার কয়েদির দেখা পাওয়া যাবে।
এবারে বিশ^ব্যাপি যে যুদ্ধ শুরু হয়েছে তার নাম করোনাযুদ্ধ। এই বিশ^যুদ্ধের ভয়াবহতা এখুনি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি আমরা। মহান
মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনানায়ক ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আর এখনকার করোনা যুদ্ধের সেনানায়ক কাকতালীয়ভাবে তারই সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। মহান
মুক্তি যুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ অকাতরে তাদের অমুল্য জীবন বিসর্জন দিয়ে সাহাদত বরণ করেছিলেন। তার সাথে ২ লাখ মা-বোন তাদের অমুল্য সম্ভ্রম হারিয়ে ছিলেন। এবারের করোনা যুদ্ধে বাংলাদেশসহ সারা বিশে^ কত লোকের প্রাণ যাবে তা কেউ বলতে পারেনা।
তবে (এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত ২৪/০৫/২০২০) সারা বিশে^র ১শ ৮৮ টি দেশে এ পর্যন্ত করোনাভাইরা বা কোভিড-১৯ এ মৃত্যুবরণ
করেছে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ এবং আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৫৪ লাখ।
এসময় বাংলাদেশের প্রায় সবকটি জেলায় মৃত্যুর সংখা ৪শ ৮০ জন এবং আক্রান্ত ৩৩ হাজার ৬ শ ১০ জন মানুষ।
এবারে অর্থাৎ গত ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে এই মরণব্যাধি করোনাভাইরাস সর্বপ্রথম চীন দেশের উহান প্রদেশে আবির্ভাব ঘটে।
প্রতিবারের ন্যায় এবারও যখন চীনের প্রায় সকল নাগরিক জানুয়ারি নববর্ষ উদযাপনের ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করছিলো তখন অদৃশ্য শত্রু
করোনাভাইরাস ১ কোটিরও বেশি মানুষের শহর উহানে কয়েকজনকে আক্রান্ত করে। এ্কটি বাজার থেকে এই ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়তে শুরু
করে। দেখতে দেখতে তা দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড এবং জাপানে থাবা বিস্তার করে। বলতে গেলে ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে সমগ্র পৃথিবীকে ধীরে ধীরে গিলতে শুরু করে। শুরু হয় করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ।
আমাদের দেশেও এমনি সময় করোনাযুদ্ধ শুরু হয় যখন গোটা বাংলাদেশের মানুষ বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমানের জন্ম শত বার্ষিকী উদযাপনরে জন্য মুজিববর্ষ পালনের ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করছিলো। চীনের উহান প্রদেশ হতে ভারত হয়ে
তিন ইতালি ফেরত ছাত্র বাংলাদেশের মাটিতে আগমণের সময় গত ৮ মার্চ- ২০২০, বাংলাদেশে এই করোনাভাইরাসের বীজ নিজেদের অজান্তেই
সঙ্গে করে নিয়ে আসে এবং তা থেকে শাখা প্রশাখা গজিয়ে এখন মহিরূহে পরিণত হতে চলেছে। করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা উপলব্ধি করে এবং
এই মরনব্যাধি থেকে দেশবাসিকে রক্ষা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তড়িৎ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। ১৭ মার্চ থেকে মুজিব শতবর্ষের মূল
অনুষ্ঠানের সুচনা হবার কথা ছিলো। কিন্তু তিনি তা না করে বলেন, করোনার ঘোষণা দাও অনুষ্ঠান পরে হবে।
দেশে প্রথমবারের মত ৩জন করোনাভাইরাস রোগে আক্রান্ত হয়েছে এই খবর প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করতে গেলে তিনি এই ঘোষণা দেন। স্বাস্থ্য ও
পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেকের নেতৃত্বে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এই খবর দেন। । এদিন রাতে তিনি জাতির
উদ্দেশ্যে ভাষণ দান করেন। ভাষণে তিনি জনগণকে স্বাষস্থ্য বিধি মেনে সকলকেই
ঘরে থাকার পরামর্শ দেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপলব্ধি করতে সক্ষম হন যে, বাংলাদেশের সামনে
আরো ভয়ঙ্কর দিন আসছে। তাই তিনি দেশের সকল আইনশৃঙ্খলা রক্ষা
বাহিনীকে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় কাজে নিয়েজিত করেন। তিনি
সোবাহিনীকেও দেশের কল্যাণে আত্মনিয়োগের আহবান জানান। দেশের সকল
গণপরিবহনসহ সকল যোগাযেগের পথ-ঘাট বন্ধের আদেশ দেন। তিনি সরকারি
কর্মচারিদের জন্য সাধারণ ছুটি ঘোষণাসহ দফায় দফায় তা বৃদ্ধির আদেশ
জারি করেন। দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
সমগ্র বিশে^ দিন দিন বাড়ছে করোনা, মরছে হাজার হাজার মানুষ।
বাংলাদেশও এ থেকে বাদ যাচ্ছেনা। ক্রমেই বেড়ে চলেছে সংক্রমণ ও
মৃত্যুহার। কিন্তু কমার কোন লক্ষণাদি এপর্যন্ত পরিলক্ষিত হচ্ছেনা। এরই
মাঝে এলো আবহমান বাংলার চিরায়ত উৎসবের দিন পহেলা বৈশাখ।
এসময় প্রতিটি বাঙালির ঘরেই আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। কিন্তু
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের মানুষকে সে উৎসব পালন থেকে বিরত
থেকে করোনার মোকাবিলার জন্য আহবান জানালেন।
তারপর এলো বাঙালি মুসলমানদের পবিত্র ব্রত পালনের মাস, মাহে রমজান।
আর এই রমজান মাস শেষেই মুসলমানদের জন্য সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব
ঈদুল ফিতর। বলতে গেলে দুঃখের দিনে সুখের ঈদের হাতছানি।
১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে ২৫ মার্চ কালো রাতের পর থেকেই যারা
জীবিত ছিলো তারা তাদের ঘর-বাড়ি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ফেলে রেখে
জীবন বাঁচানোর তাগিদে দলে দলে অজানার পথে বেরিয়ে পড়ে। যে
যেখানে পারে, গ্রামের চেনা-অচেনা মানুষের বাড়িতে গিয়ে
সপরিবারে আশ্রয় গ্রহণ করে। আবার তখন গ্রাম-গঞ্জের মানুষজন
সমাদরে তাদেরকে থাকতে দেয় এবং খেতে দেয়। সেই মুক্তি যুদ্ধের নীতি ছিলো শত্রুকে মারো তারপর মরো। না মেরে মরোনা। আর এখনকার করোনা
যুদ্ধের মূল নীতি হলো তোমরা ঘরে থাকো। মরলে আমরা মরবো । আমরা
যারা করোনাযুদ্ধের সৈনিক আমরা বাইরে থকবো। মরলে আমরা মরবো ।
ঘরে থাকলে তোমরা বাঁচবে।
মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিবাহিনী সাধারণ মানুষকে বার বার বলেছে
আপনারা কেউ ঘরে থাকবেননা। কারণ ঘরে থাকলে রাজাকার, আলবদর, আল
শামসের লোকেরা পাকিস্তানি সৈন্যদের ডেকে এনে আপনাদের হত্যা
করবে। কিন্তু বাঙালি তখন একথা গাহ্য করেনি। বরং উল্টো তারাই বলেছে,
মরি মরবো তাও বাপদাদার ভিটেমাটি ছাড়া অন্য কোথাও যাবোনা।
অনেকে আবার মিলিটারি গ্রামে ঢুকে কি করে তা দেখার জন্য কাতার
ধরে বাইরে দাঁড়িয়ে উঁকি-ঝুঁকি মারে। রাজাকার বলেছে ইয়ে লোগ
মুক্তি ফৌজ হ্যায় হুজুর। ব্যাস ওমনি ব্রাশ ফায়ার। মুক্তি বাহিনীর কথা না
শুনে ঘর-বাড়ি ছেড়ে বাইরে না গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে মানুষ মরেছে বেশুমার।
বর্তমানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দেশের ১৬ কোটি মানুষকে বার বার
বিভিন্ন উপায়ে ঘরে থাকার জন্য আহবান জানাচ্ছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী,
সকল মন্ত্রী মহোদয়, এমপি মহোদয়, সচিব, ডিসি, দেশের সকল
চেয়ারম্যান, ইউএনও, এসি ল্যান্ড সবাই বলছে ঘরে থাকার কথা।
মানুষের কল্যানে নিজেদের জীবন বাজি রেখে মিলিটারি, র্যাব, পুলিশসহ
বিভিন্ন বাহিনী দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা,
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, কর্তব্যরত ডাক্তার, নার্স, ওয়ার্ডবয়, আয়া,
ক্লিনার, এম্বুলেন্স চালক, গোর খোদক সকলেই বার বার দেশের
জনসাধারণকে এই বলে সাবধান শতর্ক করে চলেছেন যে, আপনারা ঘরে
থাকুন। লকডাউন পালন করুন। কিন্তু কে শোনে কার কথা।
প্রথম প্রথম তাদের মধ্যে অনেকেই বলতো লকডাউন মানতে গেলে খাবো
কি? পেটে ক্ষিদে, উপোষ থাকতে হয় তাই ঘর ছেড়ে বাইরে যাই। বঙ্গবন্ধু
কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সকল মানুষকে করোনার ভয়াল থাবা
থেকে রক্ষার জন্য নিজের পিতার শতবর্ষ উদযাপনের সকল কর্মসুচি বাতিল
করে শক্ত হাতে করোনার বিরুদ্ধে হাল ধরলেন। শেখ হাসিনা সেই প্রধানমন্ত্রী যিনি ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী হবার পর বাংলাদেশ
সেনাবাহিনীর প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করে দুই বছর দুপুরে ভাত
খাননি। অতি সম্প্রতি ঢাকা সেনানিবাসে ২৭ উন্নয়ন প্রকল্পের
উদ্বোধনকালে তিনি একথা জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘‘ ১৯৯৬ সালে
ক্ষমতা গ্রহণের পর আমরা দেশে খাদ্য ঘাটতি পেয়েছি। ক্ষমতায় এসে
আমি প্রথম দরবার হলে গিয়ে জানতে চেয়েছি সেনাবাহিনীর কি কি
সমস্যা আছে। তখন তারা আমাকে জানালেন, আমরা দুপুরে ভাত খেতে
চাই। তারা তখন দুপুরে রুটি খেতো। তিনি বলেন, তাদের এই কথাটা
শুনে তখন আমার খুব খারাপ লেগেছিলো। সেদিন থেকে আমিও দুপুরে
ভাত খাওয়া বন্ধ করে দেই। ১৯৯৮ সালে আমরা দেশকে খদ্যে সয়ংসম্পুর্ণ
করে সেনা বাহিনীর জন্য দুপুরে ভাত খাওয়ার ব্যবস্থা করি। সেনানিবাসে
এসে আমি সেদিন তাদের সঙ্গে বসে ভাত খাই। এরপর থেকে আমি
আবার দুপুরে ভাত খাওয়া শুরু করি। ’’
প্রধানম›ত্রী জননেত্রি শেখ হাসিনা দেশের মানুষের কষ্ট লাঘবের জন্য হাজার
হাজার কোটি টাকার প্রনোদনা ঘোষণা করে তা যাতে সঠিকভাবে
মানুষের হাতে পৌঁছে তার ব্যবস্থা করলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন,
করোনাভাইরাসের কারণে দেশে কোন খাদ্য ঘাটতি থাকবেনা। এখনো ১৭
লক্ষ মেট্রিক টন খাদ্য শুধু সরকারি গুদামেই রয়েছে। সাড়ে ৩ লক্ষ মেট্রিক
টন গম আমাদের মজুদ আছে। এছাড়াও বেসরকারি যে রাইস মিলগুলো
আছে তাদের কাছেও প্রচুর খাদ্য মওজুদ আছে।
এরপর মানুষজন বলে ঈদ হলো বছরকার একটি দিন। এই দিনে বাড়ি না
গেলে কি চলে। অথচ প্রশাসন বলছে যে যেখানে আছেন সে সেখানেই
থাকেন। তবেই করোনা থেকে মুক্তি মিলতে পারে। কিন্তু মানুষজন দলে দলে
যেভাবে ঈদের জন্য ঘরে ফিরতে শুরু করেছে তাতে রোগ বিশেষজ্ঞগণের মতে
ঐসকল মানুষজনের সঙ্গে করোনাভাইরাসও জ্যামিতিক হারে সারা দেশে
ছড়িয়ে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
এক জরিপে জানা গেছে বর্তমানে করোনা যুদ্ধের মহামারির সময়ে
উচ্চবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত পরিবার এবং বয়োবৃদ্ধরা সরকারের আদেশ-নিষেধ
শতভাগ পালন করছে। অর্থাৎ লকডাউন মানাসহ সকল প্রকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে। কিন্তু নিম্ম আয়ের লোকেরা করেনানাকে থোড়াই কেয়ার
করছে। তাদের একই কথা ‘‘দুখ- সুখ কপালে লেখা , মৃত্যু লেখা পায়। যার
যেখানে মৃত্যু আছে (সেথা) পায়ে হেঁটে যায়। ’’ছোট বেলা
কবিতা পড়েছিলাম,‘‘ ভোর হলো দোর খোলো কবিতায় কবি
লিখেছেন…. আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে?’ খুকা-
খুকিরা না জাগলে যেমন সকাল হবেনা তেমনি লকডাউন উপেক্ষা করে
পুলিশের সাথে পলান টুক টুক খেলে ঈদের কেনাকাটা না করলে এবং তারা
বাড়িতে না গেলে যেন ঈদই হবেনা। কবি বলেছেন, বিপদে মোরে রক্ষা
করো এ নহে মোর প্রার্থণা , বিপদে যেন না করি ভয়। তাই সব শেষে
বলতে হয় নির্ভিকতা দেখাতে গিয়ে সারা দেশে যদি করোনাভাইরাস
ছড়িয়ে পড়ে তখন তো পস্তাতে হবে আর বলতে হবে, ‘‘নিজের দোষে
দোষি হইলাম, দোষ দিবো আর কারে রাজন দোষ দিবো আর কারে? (চলবে)
(লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট)।
এবাদত আলী
সাংবাদিক ও কলামিস্ট
সদস্য পাবনা প্রেসক্লাব।