আমাদের দেশেও করোনার ছোবল থেকে আত্মরক্ষার জন্য কে কোথায় পালবে
তা মনে উদয় হলেও পালাবার কোন ঠাঁই নাই। বিশ^ কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার সোনার তরী কাব্যগন্থে লিখেছেন“ গগনে গরজে মেঘ, ঘন
বরষা / কুলে একা বসে আছি নাহি ভরসা।…..করোনাভাইরাসের
ওষুধবিহীন অবস্থায় বিনা চিকিৎসায় কে কখন পরপারে পাড়ি জমাবে তা
কারো পক্ষেই হলফ করে বলা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের মোট ৬৪ টি জেলার
মধ্যে ইতোপুর্বে সবগুলো জেলার মানুষই কম-বেশি আক্রান্ত। জীবনের ভয়
কার নেই। তাই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়ে জীবনের ভয়ে হাসপাতাল থেকেও রোগি পালিয়ে যেতে বসেছে।
শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ড থেকে দুই দিনে দুই রোগি পালিয়ে গেছে। হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির
হোসেন জানান, গত ৪ এপ্রিল বিকালে জ¦র , গলাব্যাথা ও কাশি নিয়ে করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি হন ৬৫ বছর বয়স্ক নুরুল ইসলাম। তার বাড়ি ভোলা
সদর উপজেলার চন্দ্রপ্রসাদ গ্রামে। তাকে ৭ এপ্রিল বেলা ১১টার পর আর
খঁজে পাওয়া যায়নি। অপরদিকে ৫ এপ্রিল দুপুরে জ¦র,গলা ব্যাথা ও কাশি
নিয়ে করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি হন বরগুনা সদর উপজেলার ছোট লবনগোলা
গ্রামের এক বাসিন্দা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পরে আর তাকে খুঁজে
পাচ্ছেনা। বরিশাল মহানগর পুলিশের কমিশনার মো.শাহাবুদ্দিন খান বলেন,
রোগিদের বাড়ির ঠিকানা অনুসারে সংশিল্ট থানার ওসি ও এসপিকে
বিষয়গুলো জানানো হয়েছে।
কুমিল্লায় করেনাভাইরাসে আক্রান্ত এক রোগি জানালা কেটে বাড়ি
ছেড়ে পালিয়ে গেছে। গত ২৫ এপ্রিল দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত খবর
হতে জানা যায়, মুরাদনগর উপজেলার দারোরা ইউনিয়নের কাজিয়াতল গ্রামে লকডাউনে থাকা একটি বাড়িতে এঘটনা ঘটে। বিষয়টি
জানাজানি হওয়ার পর উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তার (ইএনও) নির্দেশে
ঐ ব্যক্তির সন্ধানে মাঠে নামে পুলিশ। মুরাদনগরের ইউএনও অভিষেক দাস
জানান, গত কয়েকদিন আগে নারায়নগঞ্জ থেকে কাজিয়াতল এলাকায়
গ্রামরে বাড়িতে আসেন ঐ ব্যক্তি। বিষয়টি জানার পর আমরা তার নমুনা
সংগ্রহ করে ঢাকায় প্রেরণ করি। আইইডিসিআর থেকে দেওয়া
রিপোর্ট থেকে জানা যায় ঐ ব্যক্তি করোনভাইরাসে আক্রান্ত। দুপুরে ঐ
ব্যক্তির ঘর আইসোলেশনের জন্য নির্বাচন করে বাড়িটি লকডাউন করে
দেওয়া হয়। ঘরের বাইরেরর দিক থেকে তালা থাকলেও জানালা কেটে রাতের
যেকোন সময় ঐ ব্যক্তি পালিয়ে যান। পুলিশ পালিয়ে যাওয়া ব্যক্তির সন্ধানে
মাঠে নেমেছে বলে পত্রিকাটি উল্লেখ করেছে।
পাবনা জেনারের হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ড থেকে সন্দেহভাজন
এক করোন রোগি পালিয়ে গেছে। এ ব্যাপারে পাবনা সদর থানায় একটি
জিডি করা হয়। পলাতক রোগির নাম মোস্তাক আল মামুন। তার বাড়ি
দিনাজপুর জেলার হালিশপুর থানার হাকিমপুর গ্রামে। উক্ত ব্যক্তি ঘটনার
দিন কয়েক আগে বেড়া উপজেলার আমিনপুর থানাধীন কাশিনাথপুর
এলাকার দিঘলকান্দি গ্রামে শশুর বাড়িতে আসে। শশুর বাড়ির লোকেরা তার
করোনার লক্ষণ দেখে পুলিশের মাধ্যমে তাকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে
নিয়ে আসে।
করোনা আক্রান্ত রোগিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হচ্ছে এই কথা শুনে
বান্দরবানের লামা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে অন্যসব রোগি পালিয়ে যায় বলে
খবর পাওয়া গেছে। করোনায় আক্রান্ত লামা সদর ইউনিয়নের মেরাখোলা
মুসলিমপাড়ার বাসিন্দা রাশেদা বেগমসহ তার স্বামী জামালউদ্দিনকে গত
২২ এপ্রিল রাত সাড়ে ১১টার দিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে
কর্তৃপক্ষ। কিন্তু করোনায় আক্রান্ত রোগিকে কমপ্লেক্সে আনার আগেই
সংবাদ পেয়ে ভয়ে ও আতঙ্কে ভর্তিরত রোগিরা স্ব স্ব উদ্যোগে কমপ্লেক্স
ছেড়ে পালিয়ে যায়। (মানব কন্ঠ ডট কম-২৫ এপ্রিল,২০২০।)
শুধু রোগিকে দোষ দিয়ে কি হবে। করোনা ভয়ে মেডিকেল
টেকনোলজিষ্ট ও জীবন রক্ষার জন্য পালিয়ে গেছেন। করোনার ভয়ে মোংলা
উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট (এমটি)অনিমেষ
সাহা পালিয়ে আত্মগোপন করেন। করোন সন্দেহকারি রোগিকে পরীক্ষার
জন্য নমুনা সংগ্রহের কথা শুনে তিনি কমপ্লেক্স থেকে দ্রুত পালিয়ে
যান। (সুত্র. সময়ের আলো, ১৮ এপ্রিল-২০২০)।
এবার আর পলায়ন নয়। এক অদ্ভুত আচরণ করেছে করোনাভাইরাসে
আক্রান্ত এক রোগি। কক্সবাজার সদর উপজেলার এক করোনা রোগিকে
স্থানীয় কর্তৃপক্ষ নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে রেখে দেন। বাড়িটি
লকডাউন করা হয়। সেই রোগি কাউকে তোয়াক্কা না করে যত্রতত্র
ঘোরাফেরা করে। সর্বশেষ লিংকরোড় স্টেশনের এক দোকানির কাছে পাওনা
টাকা আদায়ের জন্য হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে। পাওনা টাকা আদায়ের
কৌশল হিসেবে ওই রোগি নিজেই উত্তেজিত হয়ে দোকানিকে
ঝাপটে ধরে বলে,“ আমিও মরবো, তুইও মর। (চলবে) (লেখক: সাংবাদিক ও
কলামিস্ট)।
এবাদত আলী
সাংবাদিক ও কলামিস্ট
সদস্য পাবনা প্রেসক্লাব। .