দেশে প্রতিদিনই বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। একই সাথে বেড়ে চলেছে মৃত্যুও। কিন্তু এর পরও বাড়ছে না মানুষের সচেতনতা। এতে প্রতিনিয়ত করোনা ঝুঁকি নিয়েই দৈনন্দিন জীবনে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করছে মানুষ। আজ সোমবার পাবনার ভাঙ্গুড়ায় রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে বয়স্ক ভাতা উত্তোলনের সময় এমন চিত্র দেখা গেছে। উপজেলার ৩৫৫ বয়স্ক ভাতা উত্তোলনকারী নারী-পুরুষের মধ্যে সামাজিক দুরত্ব বজায় ছিল না। এমনকি তাদের মধ্যে ছিল না ন্যূনতম করোনা ভীতি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভাঙ্গুড়া উপজেলায় ৩৫৫ জন নারী-পুরুষ বয়স্ক ভাতার সুবিধা পায়। এদের বেশিরভাগই বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছে। ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারেনা তারা। এমনকি অনেকে কথাও বলতে পারেনা। কয়েকজন রয়েছে প্যারালাইসিস রোগী। প্রতিমাসে ৫০০ টাকা করে পায় এসব ভাতাভোগীরা। তবে প্রতি মাসে তাদের টাকা না দিয়ে তিন মাস পর পর একেবারে টাকা দেয়া হয়। এ অবস্থায় গত জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের ভাতার টাকা সোমবার উপজেলার ভাঙ্গুড়া কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে দেয়া হয়। এ টাকা তুলতে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে বয়স্ক নারী-পুরুষ এসে জড়ো হয়।
সোমবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দোতলা ভবনের ব্যাংকের মূল ফটকে তালা দিয়ে রাখা হয়েছে। শুধু সুনির্দিষ্ট গ্রাহকদের পরিচয় নিয়ে তালা খুলে ভেতরে প্রবেশ করানো হচ্ছে। ভেতরে সামাজিক নিরাপত্তাও মেনে চলা হচ্ছে। কিন্তু ভবনের সরু বারান্দায় কয়েকশত বৃদ্ধ নারী ও পুরুষ ভাতাভোগীরা একে অপরের শরীরের সাথে শরীর লাগিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বারান্দার শেষ প্রান্তের জানালার সামনে বসে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাদেরকে ভাতার টাকা দিচ্ছেন। বেশি বয়স্করা দাঁড়িয়ে থাকতে না পেরে মেঝেতে বসে পড়েছেন। আবার কেউ কেউ বৃত্ত আকারে শরীর ঘেঁষে বসে গল্পগুজব করছেন। এমনকি ব্যাংকের নিচেও শরীর ঘেঁষে দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। অনেক ভাতাভোগীদের সাথে স্বজনরাও এসেছেন। এ সময় ব্যাংকে আগতদের মধ্যে সামাজিক দুরত্ব রক্ষা করতে ব্যাংকের কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। তবে ব্যাংকের দুয়েকজন সচেতন গ্রাহক এসে তাদেরকে সামাজিক দুরত্ব মেনে চলতে অনুরোধ করছেন। কিন্তু সে অনুরোধের তোয়াক্কা করছেন না ভাতাভোগীরা। ঘন্টার পর ঘন্টা এভাবেই চলে সামাজিক দুরত্ব ছাড়াই বয়স্কদের এমন আনাগোনা। অবশেষে টাকা নিয়ে তারা ব্যাংক ত্যাগ করে।
রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ভাঙ্গুড়া শাখার সেকেন্ড অফিসার রাজীব বিশ্বাস বলেন, বয়স্ক ভাতার বিষয়টি দেখভাল করেন উপজেলা সমাজসেবা অফিস। তাই ভাতার টাকা দেয়ার দায়িত্বও তাদের। কিন্তু উপজেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্তে সমাজসেবা অফিসের কাজটি রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের মাধ্যমে করা হচ্ছে। তবে পর্যাপ্ত জনবলের অভাবে ভাতাভোগীদের মধ্যে সামাজিক দুরত্ব রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না।
এ বিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, ভাতা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সব কিছু দেখভালের দায়িত্ব উপজেলা সমাজসেবা অফিসের থাকলেও টাকা বিতরণের কাজটি ব্যাংকের মাধ্যমে করা হয়। তাই টাকা বিতরণের সময় করোনা সচেতনতা অবশ্যই ব্যাংক কর্মকর্তার মানা উচিত। এজন্য ব্যাংক কর্মকর্তাকে সবসময়ই ভাতা বিতরণের দিনে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখার জন্য ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। এক্ষেত্রে ব্যাংক কর্মকর্তারা নির্দেশনা মানার ব্যবস্থা না করলে আমাদের কিছুই করার থাকেনা।