নাটোর সদর উপজেলার হালসা ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের বাসিন্দা সফরুদ্দিন । তিনি পেশায় একজন ক্ষুদ্র চাষী । গত চার বছর ধরে তার নামে খাদ্যবান্ধব কর্মসুচীর ওএমএসের বরাদ্দকৃত চাল উঠছে।
অথচ তিনিই জানেন না তার নামে কার্ড আছে। হঠাৎ করে তিনি খবর পেয়ে ডিলারের ঘরে হাজির হন। দেখেন সাড়ে চার বছর ধরে তার নামে চাল উঠে আসছে তিনি জানেন না। পরে তার কাছ থেকে ৩০০ টাকা নিয়ে ৩০ কেজি চাল দিয়েছেন ডিলার । কিন্তু জোর করে একসাথে কার্ডে ১৫ থেকে ২০টা টিপ সই নিয়েছেন।আর বলা হয় এ কথা কাউকে না জানাতে, এখন থেকে সফরুদ্দিন নিয়মিত চাল
পাবেন বলে জানান ডিলার জুলেখা বেগম ।
শুধু সফরুদ্দিন নয় সুফিয়া বেগম, সামছুন্নাহার, জহুরা বেগম সহ এলাকার অনেকের অভিযোগ চার বছর ধরে চাল উঠলেও তারা কিছুই জানেন না।
অনুসন্ধানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত চার বছরে ধরে অনেক গরীব ও অসহায় মানুষের নামে এভাবে ফেয়ার প্রাইসের ১০ কেজি চাল উত্তোলন করা হলেও কেউ কিছুই জানেন না।খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় নাটোরের হালসা ইউনিয়ন পরিষদের ৯টি ওয়ার্ডে চাল বিক্রিতে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
চার বছর ধরে চলছে এই অনিয়ম। এতোদিন অনেক উপকারভোগীরা জানতেনই না তাদের নামে কার্ড হয়েছিল। সম্প্রতি উপকারভোগীদের কার্ড যাচাই বাছাই করতে গেলে অনিয়মের বিষয়টি টের পান স্থানীয়রা।জেলা খাদ্য অফিস থেকে পাওয়া তালিকা
ঘেটে এমন সতত্য মিলেছে।
এরপর থেকেই ঘটনা ধামাচাপা দিতে তৎপরতা চালাচ্ছেন অভিযুক্ত এক ডিলার। আর মামলা হবার পর গা ঢাকা দিয়েছে অপর একডিলার।
অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ২০১৬ সালে হালসা ইউনিয়ন পরিষদের আওতাধীন পাঁচটি ওয়ার্ডে ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির ডিলার হিসাবে মনোনিত হন ২নং ওয়ার্ড মেম্বার ওহাব আলীর স্ত্রী জুলেখা বেগম। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ৭৫৪ জনউপকারভোগীদের মাঝে বছরে পাঁচবার জনপ্রতি ১০টাকা কেজি দরে ৩০ কেজি চাল দেবার কথা।
অপর চারটি ওয়ার্ডে একই কর্মসূচির আওতায় ৭৫৩ জন উপকারভোগীর মাঝে চাল বিতরণের দায়িত্ব পান ডিলার ইয়াকুব আলী।
কিন্তু দীর্ঘ চার বছরেও অনেক উপকারভোগীই জানতেন না তাদের নামে কার্ড হয়েছে। কার্ড নিজেদের কাছেই রেখে চাল তুলে আÍসাৎ
করেন ডিলাররা। বিষয়টি গোপন থাকায় এতোদিন কেউ টের পাননি।সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে উপকারভোগীদের কার্ড যাচাই-বাছায়ের জন্য কমিটি গঠন করে দিলে অনিয়মের বিষয়টি ধরা পড়ে। ঘটনা তদন্ত করে অনিয়মের সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবী জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
ভ্যানচালক রহিম মিয়া জানান,আমার মত কয়েক’শ লোকের নামে কার্ড আছে অথচ চাল তারা পান না। অনেকেই এক ও দুইবার চাল পাওয়ার পর তাদের কপালে আর কোনো দিনই চাল জোটেনি। অথচ তাদের নাম তালিকায় আছে।
আওরাইল গ্রামের বাসিন্দা রেনু বেগম জানান, তার নামে কার্ড হয়েছিল তা তিনি জানতেনই না। কিছুদিন আগে জানতে পারেন।
তারপর ডিলার জুলেখা বেগম ও তার স্বামী বিষয়টি কাউকে না বলতে অনুরোধ করেন।
আওরাইল এলাকার ভুক্তভোগী সামছুন্নাহার ও জহুরা বেগম জানান, কার্ড যাচাই বাছাই কার্যক্রম চালু হবার পর ডিলার জুলেখা বেগম ও তার স্বামী ওহাব মেম্বার চাল না পাবার ব্যাপারটি কাউকে না বলতে অনুরোধ করেছেন।
বিপ্রহালসা গ্রামের সুফিয়া বেগম জানান, আমার নামে কার্ড হয়েছে সেটা আমি জানতাম না। পরে এক বস্তা চাল দিয়ে ঘটনাটি কাউকে না জানাতে বলেন ডিলার ইয়াকুব আলী। পরে আমি প্রতারণার অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা করি।
তবে সকল অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্তরা। ডিলার জুলেখা বেগম জানান, তার ডিলারশীপ বাতিল করার জন্য প্রতিপক্ষরা ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। আর মামলার পর থেকেই পালিয়ে বেড়াচ্ছেন অপর ডিলার ইয়াকুব আলী। তার আগে ইয়াকুব আলী বলেন, তার বিরুদ্ধে চাল আÍসাতের বিষয়টি মিথ্যা।
ইউনিয়ন পরিষদের ৯টি ওয়ার্ডের লোকজনই অনিয়মের শিকার হলেও তা জানা নেই হালসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের। বিষয়টি নিয়ে চারদিকে সমালোচনার ঝড় উঠলেও অভিযোগ পাবার পর ব্যবস্থা নেবার আশ্বাস দিয়েছেন চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম।
বিষয়টি নিয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের সাথে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করেন।
জেলা প্রশাসক মোঃ শাহরিয়াজ জানান, চাল নিয়ে অনিয়ম করার কোনো সুযোগ নেই। তালিকায় যাদের নাম আছে তারা কেন চাল পাচ্ছে না তা খতিয়ে দেখে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’এই কর্মসূচির আওতায় কতোজন উপকারভোগী বঞ্চিত হয়েছেন তা তদন্ত করে বের করে অনিয়মের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।