নভেল কারোনা সংক্রমণ ঠেকাতে পারেনি বোরো আবাদকে। স্বাভাবিক নিয়মেই প্রতি বছরের ন্যায় এবারও রাজশাহীর তানোরে ইরি-বোরো ধান মাঠে পাকতে শুরু করেছে। ফলে ফসল ঘরে তোলার অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন উপজেলার কৃষক ও শ্রমিকরা। তবে, করোনা ভাইরাসের কারণে অঘোষিত লকডাউন যত দীর্ঘ হচেছ ততই কৃষকদের কপালে পড়ছে চিন্তার ভাঁজ। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে বোরো ধান কাটা। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, পুরো উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমে ১২ হাজার ৫৫ হেক্টর জমিতে বোরো চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। কিš‘ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ১৩ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধানের আবাদ করেছেন চাষিরা। সরেজমিন বিভিন্ন এলাকা ঘুড়ে দেখা যায় তানোর পৌর এলাকা থেকে শুরু করে কামারগাঁ ইউপি এলাকায় বিল কুমারী বিলে আগাম জাতের বোরো চাষ হয়। গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন এলাকায় বহিরাগত শ্রমিকরা চলে এসেছেন। তাঁরা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে চিটিয়ে আছে। বিল কুমারী বিলের বোরো ধান পেকে সোনালী আকার ধারন করেছে। কিন্তু সদরে সে ভাবে বহিরাগত শ্রমিক আসতে না পারায় পাকা ধান কাটতে পারছেনা অনেকে। আবার যাদের সামান্য পরিমাণ জমি আছে তাঁরা নিজেরাই কেটে নিচ্ছেন। রোববার সকাল ১০টার দিকে তালন্দ বাজার পার হয়ে দেখা যায় বিলের জমি থেকে ধান কেটে রাস্তার উপরে রাখা ট্রলিতে আনলোড করা হচ্ছে। এরশাদ মুনুসহ কয়েকজন জানান বিলের অনেক নিচের জমি থেকে ধান কেটে রাস্তায় নিয়ে আসা হচ্ছে। এতে করে খরচও হচ্ছে বেশি। কিন্তু যে আবহাওয়া শুরু হয়েছে তাতে মনে হয়না শুকনো ধান ঘরে তোলা যাবে। আর শুকনো ধান ঘরে তুলতে না পারলে লোকসানের শেষ থাকবেনা পাওয়া যাবেনা শ্রমিক। তালন্দ বেলপুকুরিয়া মাঠে বোরো ধান কাটছিলেন দশজন মত শ্রমিক। তাদের মধ্যে ছিল আদাবাসি নারী শ্রমিকও। তাদের মধ্যে শামসুদ্দিন জাহাঙ্গীর নামের ধান কাটা শ্রমিক জানান আমরা বোরো চাষি গোকুল গ্রামের বাদলের ধান কাটছি। আবহাওয়া ঠাণ্ডা কিন্তু উপায়কি দেশে যে দুর্যোগ চলছে ধান না কাটলে ছেলে মেয়েদের মুখে খাবার দিব কিভাবে। তবে আবহাওয়া ভালো থাকলে শুকনো ধান ঘরে তুলতে পারলে চাষিরাও যেমন হবেন লাভোবান তেমনি ভাবে শ্রমিকরাও পাবেন শুকনো ধান।তাঁরা ধান কাটছিল কিন্তু কোন ভাবেই করোনাভাইরাসের কথাই যেন জানেনা। তাদের কাছে করোনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তাঁরা একটু রাগান্বিত হয়েই জানান করোনার চেয়ে পেটের ক্ষুদার জালা ভয়ঙ্কর। সরকার বলছে ঘরে থাকুন খাবার পৌছে যাবে। কিন্তু এপর্যন্ত মাত্র ১০কেজি চাল জুটেছে ভাগ্যে। দশ কেজি চালে কি হয় । আবার যারা পাচ্চেতো তো পেয়েই যাচ্ছে, চাল চুরিরতো হিড়িক পড়েছে। যারা লুটে নেবার লুটেই নিবে আর যারা খাবার অভাবে মরবে তো তাঁরা মরেই যাবে। ধান কাটছেন করোনাভাইরাসের ভয় লাগছেনা জানতে চাইলে বলেন কিসের করোনা কিসের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। যারা সরকারের ত্রান প্রকল্প লুটপাট করছে তাঁরা এসব চিন্তা করুক। আমরা সারা জীবন ধান রোপণ কাটা মাড়াই করে জীবন সংসার পরিচালনা করছি এটাই করে যাব। তবে কৃষি বিভাগ ধান কাটার সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে বা সার্বক্ষণিক মনিটরিঙয়ের যে কথা বলেছিল তা শুধু কথার কথাই রয়ে গেছে। যারা ধান কাটছেন আগের সেই সনাতন নিয়মেই কাটছেন। ধান কাটা অবস্থায় সকালের দুপুরের খাবার জমিতেই খাচ্ছেন। বোরো চাষি মামুন ইসরাইলসহ একাধিক ব্যক্তিরা জানান স্থানীয় শ্রমিক দিয়ে যেমন সময়মত ধান ঘরে উঠবেনা তেমনি ভাবে বহিরাগত শ্রমিকের প্রয়োজন বেশি। কিন্তু তাদেরকে নিয়ে রয়েছে এক প্রকার আতঙ্ক। কারন তাঁরা কোন নিয়ম মানবেনা। আর স্বাস্থ্যবিধি সামাজিক দুরুত্ব বজায় রেখে ধান কাটা মাড়াই হয়না। তবে এপ্রতিবেদন লেখার সময় বিকেল চারটার দিকে সূর্যের আলো দেখা যায়। যার ফলে চাষিরা কিছুটা হলেও সস্তি পাই। কৃষি অফিসার শামিমুল ইসলাম বলেন এবারে উপজেলায় ১৩ হাজার হেক্টর মত জমিতে বোরো চাষ হয়েছে । ধান কাটার ব্যাপারে মনিটরিং করা হবে। তবে একাজ কষ্টকর। আবহাওয়া ভালো থাকলে চাষিরা শুকনো ধান ঘরে তুলতে পারলে ফলনও ভালো হবে দামও ভালো পাবেন।