মেয়র রাসেলের মানবিকতা, বিএনপি নেতাদের নির্মমতা

সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার বাগমারা গ্রামের বাসিন্দা শাহজাহান আলী। পেশায় একজন দিনমজুর। করোনা ভাইরাসের কারণে গত প্রায় এক মাস ধরে কর্মহীন হয়ে বসে রয়েছেন। এতে দুই সন্তান ও স্ত্রীর ভরণপোষণ নিয়ে মহা দুশ্চিন্তায় কাটছিল তার দিন। তাই কুষ্টিয়ায় কাজে যাওয়ার উদ্দেশ্যে শুক্রবার বাড়ি থেকে রওনা দেন। কিন্তু পথিমধ্যে ভাঙ্গুড়ায় পৌঁছালে জেলা বিএনপি’র ত্রাণের ট্রাকে চাপা পড়ে তার পা মারাত্মক জখম হয়। এসময় ওই ট্রাকে জেলা বিএনপি’র নেতৃবৃন্দ ছিল। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ভাঙ্গুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার হালিমা খানম দ্রুত উন্নত চিকিৎসার জন্য বাইরে নিয়ে যেতে বলেন। পরে হাসপাতালে জেলা বিএনপি নেতারা ও ভাঙ্গুড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এডভোকেট মজিবর রহমান উপস্থিত হন। কিন্তু শাহজাহান আলীকে বাইরে পাঠানোর জন্য বিএনপির নেতারা এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। পরে বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভাঙ্গুড়া পৌর মেয়র গোলাম হাসনাইন রাসেলকে জানায়। মেয়র তাৎক্ষণিক হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে শাহজাহান আলীকে পাবনা সদর হাসপাতালে প্রেরণের ব্যবস্থা করে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখেন। 


পাবনা সদর হাসপাতালে পৌঁছানোর পরে সেখানকার চিকিৎসকরা শাহজাহান আলীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত দেন। সেখানে চিকিৎসা করতে লক্ষাধিক টাকা ব্যয় হবে বলেও ধারণা দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু শনিবার দুপুরে বিএনপি নেতারা পাবনা সদর হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে শাহজাহান আলীর স্ত্রী ও ভাই ঠান্ডু আলীকে জোরপূর্বক ২৫ হাজার টাকা ধরিয়ে দিয়ে রাজশাহী পাঠিয়ে দেন। এসময় ঠান্ডু তার আত্মীয়স্বজন ও ভাঙ্গুড়া পৌর মেয়র রাসেলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলে বিএনপির নেতারা তার মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে বন্ধ করে রাখেন বলে অভিযোগ করেন শাহজাহানের স্বজনরা। এসময় ভাঙ্গুড়া থানা পুলিশের এএসআই মুকিম সেখানে উপস্থিত ছিলেন বলে জানান আহতদের স্বজনরা। তবে তাকে তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে দেখা যায়নি।


এ বিষয়ে ভাঙ্গুড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান বলেন, আহত যুবকের চিকিৎসার সম্পূর্ণ খরচ দেওয়ার কথা বিএনপি নেতাদের। কিন্তু পাবনা যাওয়ার পরে কি হয়েছে সেটা আমার জানা নেই। এক্ষেত্রে আমার করার কিছু নেই।


শাহজাহানের আত্মীয় ভাঙ্গুড়া উপজেলার বিশাকোল গ্রামের পল্লী চিকিৎসক আলতাফ হোসেন বলেন, ভাঙ্গুড়া পৌর মেয়র গোলাম হাসনাইন রাসেল দুর্ঘটনার পরে আহত শাহজাহান আলীকেে পাবনা সদর হাসপাতালে পাঠিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেন এবং তিনি সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিচ্ছেন। কিন্তু পাবনার চিকিৎসক রাজশাহী অথবা পঙ্গু হাসপাতালে আহতকে ব্যক্তিকে নিয়ে যেতে বলেন। এতে চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা লাগবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। যা এই মুহূর্তে জোগাড় করা ওই পরিবারের অসম্ভব। এ অবস্থায় বিএনপি নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা রবিবার দুপুরে হাসপাতালে এসে জোরপূর্বক ২৫ হাজার টাকা দিয়ে রাজশাহী পাঠিয়ে দেয়। এখন নিরুপায় হয়ে শাহজাহানের বাবা আলী আহমদ ভাঙ্গুড়া থানায় বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে।