উপজেলা আওয়ামী লীগের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ৬ নেতাকে দলীয় সকল কর্মকান্ড থেকে অবাঞ্চিত ঘোষনা করেছে বান্দরবানের আলীকদম উপজেলা আওয়ামী লীগ। সোমবার আলীকদম উপজেলা আওয়ামী লীগ এর ৭১ সদস্য বিশিষ্ঠ কমিটির মধ্যে ৬০ জনের স্বাক্ষরিত রেজুলেশনের বরাতে এতথ্য জানা যায়। উপজেলা আওয়ামী লীগ ছাড়াও সকল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক এই রেজুলেশনে স্বাক্ষর করেন। হালে হাত ধোয়া ছাড়া কাজ নেই এই নেতাদের। অবাঞ্চিত ঘোষিতরা হলেন, আলীকদম উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আনোয়ার জিহাদ চৌধুরী, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সৌরভপাল ডালিম, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি শুভরঞ্জন বড়–য়া, উপজেলা শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ শামসুল আলম, উপজেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক মংচিংথোয়াই মার্মা, ও কৃষকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন মোঃ এনামুল।
রেজুলেশনের বরাতে জানা যায়, উল্লেখিত নেতাগণ প্রতিনিয়ত আলীকদম উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাগণকে হেয়প্রতিপন্ন করাসহ সংগঠন ও সরকারী কর্মকান্ডকে বিতর্কিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়াও বর্ণিত ওই সব নেতা অসৎ মনমানুষিকতা, বিপক্ষদলের নেতার সহিত আঁতাত ও লোক দেখানো সাংগঠনিক কাজ কর্মের মাধ্যমে বিগত উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতিক নৌকার প্রার্থীকে পরাজিত করতে কাজ করেন। সহযোগী সংগঠনের এসব নেতারা দেশের ক্রান্তিলগ্নে লকডাউন চলাকালীন কর্মহীন জনসাধারণের মধ্যে সরকার কর্তৃক প্রদত্ত ত্রাণ সামগ্রী বিতরণকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে আওয়ামী বিরোধী জনৈক নেতার সহিত মিলিত হয়ে দল ও সরকারের ভাবমূর্তী নষ্ট করাসহ বিভিন্ন প্রকার অবৈধ ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ২৪ মার্চ সম্প্রতিক সময়ে মহামারী আকার ধারণকারী কোভিট-১৯ এর কারণে আলীকদম উপজেলাকে লক-ডাউন ঘোষনা করার পর সারা দেশের ন্যয় কর্মহীন মানুষের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করে আসছে আলীকদম্ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও ১নং আলীকদম সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাছির উদ্দিন। এসময় তিনি ব্যক্তিগত তহবিল থেকে প্রায় ৮’শ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা প্রদান করেন। এতে তার জনপ্রিয়তা বাড়ায় বর্ণিত নেতারা ঈর্শ্বান্বিত হয়ে বিপক্ষদলীয় নেতার সাথে গোপনে আঁতাত করে দল ও সরকারী বিরোধী কর্মকান্ড পরিচালনা করে যাচ্ছে। এই ধারাবাহিকতায় গত ২৭ মার্চ ভিজিডি চাল বিতরণের পর বর্ণিত নেতাগণ কয়েকজন উপকারভোগী চাল কম পেয়েছে মর্মে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বরাবরে মৌখিক অভিযোগ দায়ের করে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সরেজমিনে তদন্ত করে অভিযোগ মিথ্যা প্রমান পায়। এতে বর্ণিত নেতাগণ ক্ষিপ্ত হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানহানিকর ষ্টাটাস দেন এবং ওই দিনই তারা ফেসবুক থেকে ষ্টাটাস ডিলিট করে দেন।
পরবর্তী গত ১৯ এপ্রিল ‘আলীকদমের অপরাধ ও নিউজ আলীকদম’ নামক দুটি ফেসবুক আইডি থেকে একইভাবে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে চাল চুরির অভিযোগ এনে ষ্টাটাস দেয়। এতে চেয়ারম্যান নাছির উদ্দিন তার মান হানি হয়েছে মর্মে আলীকদম থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করে। ডায়েরী নং- ৬৬৮/২০, তারিখ ১৯/০৪/২০২০।
জানতে চাইলে ১নং আলীকদম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাছির উদ্দিন জানান, সাম্প্রতিক সময়ে বৈশ্বিক মহামারী করোনা সংক্রমনের পর সরকারী ত্রাণ ছাড়াও আমি ব্যক্তিগত তহবিল থেকে প্রায় প্রায় ৮’শ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছি এবং প্রতিনিয়ত সরকার প্রদত্ত ত্রাণ সুষ্ঠভাবে বন্টন করে আসছি। আমার এরূপ কর্মকান্ডে ঈর্শ্বান্বিত হয়ে ওই সব নেতারা আমার বিরুদ্ধে নান প্রকার অপপ্রচারসহ আমার মান সম্মান ক্ষুণ্য করার অপপ্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে আলীকদম উপজেলা লক-ডাউন হওয়ার পর ওই সব নেতারা দল ও সরকারের কোন কর্মকান্ড বাস্তবায়ন নাকরে উল্টো সরকার প্রদত্ত ত্রাণ কার্যক্রমকে ব্যহত করার জন্য প্রতিনিয়ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তৎপরতা চালাচ্ছে।
এদিকে আলীকদম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মংব্রাচিং মার্মা বলেন, যাদেরকে অবাঞ্চিত ঘোষনা করা হয়েছে তারা প্রতিনিয়ত জেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা কাজী মুজিব ও আলীকদম উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালামের গুণগাণসহ তাদের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করছে। এমনকি উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের সাথে অসদাচরণ করতেও দ্বিধাবোধ করছেনা। তাদেরকে দলীয় কার্যক্রমে অবাঞ্চিত ঘোষনা করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ পূর্বক সদস্য পদ বাতিল করার জন্য জেলা আওয়ামী লীগ বরাবরে রেজুলেশন প্রেরণ করেছি।
এব্যপারে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি শুভরঞ্জন বড়–য়ার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, সরকার প্রদত্ত ভিজিডি বিতরণের মিথ্যা অপপ্রচারের সাথে আমার কোন সংশ্লিষ্ঠতা নাই।