পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার সবচেয়ে বৃহৎ ও দরিদ্র কবলিত ইউনিয়ন খানমরিচ। এই ইউনিয়ন ৩০ হাজারের অধিক মানুষ বসবাস করে। অধিকাংশ মানুষই দিনমজুরের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। সম্প্রতি করোনা ভাইরাসের (কোভিড ১৯) উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কর্মহীন হয়ে পড়ে ইউনিয়নের সহস্রাধিক মানুষ। সরকারিভাবে এসব মানুষদেরকে সহায়তা করলেও তা পর্যাপ্ত নয়। এ অবস্থায় খাদ্যাভাবে দিন কাটছে কর্মহীন হয়ে পড়া এসব কর্মহীনদের পরিবারের সদস্যদের। তাই বাধ্য হয়েই এখন তারা কাজ খুঁজে বেড়াচ্ছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, খানমরিচ ইউনিয়নে বিত্তবানদের সংখ্যা খুবই নগণ্য। ইউনিয়নের ৭০ থেকে ৮০ ভাগ লোক দিনমজুরের কাজ করে পরিবারের সদস্যদের খাবারের যোগান দেয়। এই দিনমজুরদের একটা বড় অংশ বছরের বেশিরভাগ সময় নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ ও বরিশাল সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় শ্রমিকের কাজ করে। গত তিন বছরে ওইসব জেলায় কাজ করতে গিয়ে মাটির ট্রলার ডুবে অন্তত ২৫ জন শ্রমিক প্রাণ হারায়। এরপরেও ঝুঁকি নিয়েই এই ইউনিয়নের শ্রমিকরা দেশের বিভিন্ন জেলায় কাজ করতে যায়। কারণ দরিদ্র কবলিত খানমরিচ ইউনিয়নে বছরের সবসময় কাজ পাওয়া যায় না। বর্তমানে করোনা ভাইরাসের কারণে এসব দিনমজুর সবাই এলাকায় চলে এসেছে। এলাকায় ফিরে কাজ না পেয়ে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছে। এদের মধ্যে অনেক পরিবার সরকারিভাবে ১০ কেজি করে চাল সহায়তা পেয়েছেন। যা কয়েকদিনেই ফুরিয়ে গেছে। ফলে পরিবারের খাবার জোগাড় করতে কর্মক্ষম মানুষগুলোকে এলাকায় কাজ খুঁজতে হচ্ছে।
এ অবস্থায় সোমবার খানমরিচ ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে দুধবাড়িয়া থেকে বড় পুকুরিয়া গ্রামে ৫ লাখ টাকা ব্যয়ে দুই কিলোমিটার সড়ক মেরামতের কাজ শুরু হয়। এই কাজের অর্থায়ন করছে খানমরিচ ইউনিয়ন পরিষদ এবং গ্রামের মসজিদ ও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। এই মেরামত কাজে দুধবাড়িয়া ও বড় পুকুরিয়া গ্রাম থেকে অন্তত ৭০ জন শ্রমিক অংশ নিয়েছে। দিন শেষে তাদের প্রত্যেকে ৩৫০ টাকা করে পারিশ্রমিক দেয়া হবে।
সড়ক মেরামত কাজে অংশ নেওয়া দুলাল, আমিরুল ও জলিল সহ কয়েকজন শ্রমিক বলেন, কাজ না করলে খামু কি। সরকার যে চাল দেয় তাতে তো সবার পেট ভরে না। তাই করোনার ভয় করলেও কাজ করতেই হচ্ছে। আল্লাহ আমাদের সহায় হবেন।
দুধবাড়িয়া গ্রামের ইউপি সদস্য আব্দুল লতিফ বলেন, বর্তমান পরিস্থিতে এভাবে একসঙ্গে কাজ করা অনুচিত সেটা আমরা জানি। কিন্তু এরপরেও সার্বিক বিবেচনা করে কাজ করাতে হচ্ছে। এতে শ্রমিকরা কিছুটা হলেও আর্থিক সহায়তা পাবে। তবে শ্রমিকদের সবাইকে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করতে বলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে ভাঙ্গুড়া উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা সৈয়দ আশরাফুজ্জামান বলেন, কোনভাবেই যেন কেউ করোনার ঝুঁকি সৃষ্টি না করে এবং অন্য কেউ ঝুঁকিতে না পরে। সে বিষয়ে সর্বদা খেয়াল রেখে সড়ক মেরামত কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিদেরকে দ্রুত অবগত করা হবে।