ভাঙ্গুড়ায় করোনার আড়ালে জমজমাট জুয়ার আসর

করোনা ভাইরাসের (কোভিড১৯) উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রশাসন জনসাধারণকে নিয়ন্ত্রণে ব্যস্ত। সেই মুহূর্তে পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার পারভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে বসছে জমজমাট জুয়ার আসর। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এই ইউনিয়নের একটি চক্র এই জুয়ার আসর চালায়। এই আসরে অংশ নেয় বিভিন্ন গ্রাম থেকে ২০ থেকে ২৫ জন যুবক। এলাকাবাসী প্রায়ই ধাওয়া করে এসব যুবকদের আটক করে। কিন্তু পরে সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্যরা কৌশলে তাদের ছাড়িয়ে নেয়। এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের উপর প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার পারভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের পাথরঘাটা, কাশিপুর, টলটলিয়াপারা, পারভাঙ্গুরা গ্রাম ভাঙ্গুড়া পৌরশহরের সীমান্তবর্তী এলাকা। এসব গ্রামের যুবকরা ভাঙ্গুড়া পৌর শহরে গিয়ে প্রতিনিয়ত আড্ডা দেয়। কিন্তু করোনা ভাইরাসের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পৌরশহরে বাহিরের গ্রামের মানুষের চলাচল সীমাবদ্ধ করে দিয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ। এতে গত ২৫ দিন যাবৎ এসব গ্রামের যুবকরা একসাথে হয়ে গ্রামের মধ্যে নির্জন বাগান ও মাঠের মধ্যে আড্ডা দেওয়া শুরু করে। পরে গ্রামের বাসিন্দারা জানতে পারে এই যুবকরা ওইসব স্থানে জুয়ার আসর বসায়। তারা টাকা দিয়ে তাস, লুডু ও কেরাম খেলে।একপর্যায়ে রবিবার রাতে পাথরঘাটা গ্রামে বোরো ক্ষেতের একটি সেচ প্রকল্পের শ্যালো মেশিনের ঘরে জুয়ার আসর বসায় ওই যুবকরা। এ সময় পাথরঘাটা ও পারভাঙ্গুড়া গ্রামের বাসিন্দারা বিষয়টি ইউনিয়ন চেয়ারম্যানকে জানায়। তখন ইউনিয়ন চেয়ারম্যান গ্রাম পুলিশ পাঠায় জুয়াড়িদের ধরতে। গ্রাম পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে কয়েকজন পালিয়ে যায়। তবে ওই ঘরে আটকা পড়ে পাথরঘাটা গ্রামের মাহমুদ আলীর ছেলে সৈকত (২৩), রেজাউল করিমের ছেলে  রাতুল (১৮), মনসুর আলীর ছেলে মামুন(২২) এবং সাইদুল ইসলামের ছেলে শাহীন (২২)। এসময় আটককৃতরা গ্রাম পুলিশের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু মাঠে কাজ করা কৃষকরা গ্রাম পুলিশকে সহায়তা করে তাদেরকে আটক করে। কিন্তু গ্রাম্য সালিশের কথা বলে জুয়ারুদের ছেড়ে দেয়াা হয়। পরে পারভাঙ্গুড়া ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব হেদায়েতুল হকের নেতৃত্বে গভীর রাত পর্যন্ত সালিশ করে ওই চার জুয়ারুকে ৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এর আগে গত ৭ এপ্রিল রাতে পাথরঘাটা গ্রামের একটি নির্জন বাগান থেকে জুয়া খেলার সময় এই একই চক্রের সাত সদস্যকে আটক করে গ্রামবাসী। তারা হলেন শুভ, শাকিল, ফরহাদ, সৈকত, হাফিজুল, শাহীন ও হাফিজুল। এদের প্রত্যেকের বয়স ২০ থেকে ৩০ এর মধ্যে। সেসময় ধাওয়া খেয়ে আরও ১০/১২ জন যুবক পালিয়ে যায়। ঐদিনও আটককৃতদের পাথরঘাটা গ্রামের ইউপি সদস্য জুয়েল হাসান বাবা-মার জিম্মায় দেয়।

অভিযোগের বিষয়ে পাথরঘাটা গ্রামের ইউপি সদস্য জুয়েল হাসান বলেন, সবাই গ্রামের ছেলে পেলে। তাই তাদেরকে পুলিশে না দিয়ে পরিবারের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। তবে পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে ভবিষ্যতে আর জুয়া খেলবে না এ বিষয়ে জরিমানা ও মুচলেকা নেওয়া হয়েছে। এর পরেও তারা খেললে আটক করে পুলিশে দেয়া হবে।

পারভাঙ্গুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব হেদায়াতুল হক বলেন, আটক যুবকরা সবাই নিজেদের পরিচিত। তাই তাদের কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে জরিমানা করে এবারের মত ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে এরকম কাজ করলে আর ছেড়ে দেওয়া হবেনা।


ভাঙ্গুড়া থানার ওসি মাসুদ রানা বলেন, ওই এলাকায় প্রশাসনের নজরদারি বাড়িয়ে দেওয়া হবে। যাতে এই দূর্যোগকালীন সময়ে কেউ যেন কোনো প্রকার অপকর্ম না করতে পারে।