করোনাভাইরাস সংক্রমণের আশংকায় গত ২৬ মার্চ দেশের একমাত্র উৎপাদশীল মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনি লকডাউন ঘোষনা করায় আর্থিক সংকটে পড়েছে খনির প্রায় ৭শ’ শ্রমিক। উপরন্ত শ্রমিকদের মার্চ মাসের বেতন এখনও বকেয়া রয়েছে। খনির কাজ বন্ধ, অন্যত্রও কাজ নেই, এতে আর্থিক সংকটে দিশেহারা এসব শ্রমিক বকেয়া বেতন পাওয়ার আশায় প্রতিদিন খনি চত্তরে ধরনা দিচ্ছেন। মধ্যপাড়া পাথর খনির ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জার্মানিয়া ট্রেষ্ট কনসোর্টিয়াম (জিটিসি) তাদের অধীনে কর্মরত এসব শ্রমিককে প্রতি মাসের বেতন পরিশোধ করে থাকেন। ইতোমধ্যে গত ৮ এপ্রিল শ্রমিকদের ফেব্রুয়ারী মাসের বেতন ও উৎপাদন বোনাস প্রদান করা হয়।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দাবী, খনি কর্তৃপক্ষ গত ১৯ ফেব্রুয়ারী থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত উৎপাদনে থাকা খনির উৎপাদন সংরক্ষণ, পরিচালনা সংক্রান্ত তাদের নিয়মিত পাওনা পরিশোধ করেননি। ফলে শ্রমিকদের মার্চ মাসের বেতন ও উৎপাদন বোনাস পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছেনা। কিন্তু এসময়ে উৎপাদিত পাথর খনি কর্তৃপক্ষ গ্রহন করলেও এ কাজের পাওনা বিল বারবার তাগাদা দেয়া সত্বেও তারা পরিশোধ করছেন না। ফলে খনিতে কর্মরত ৭শ’ শ্রমিকের মার্চ মাসের বকেয়া বেতন ও উৎপাদন বোনাস পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
খনির নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক কয়েকজন শ্রমিক বলেন, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি প্রায় একই সময় লকডাউন ঘোষনা করা হলেও এখনো সেখানে সহশ্রাধিক শ্রমিক এখনও কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে। অথচ মধ্যপাড়ায় উল্টো চিত্র। কাজ নাই, বকেয়া বেতনও পাচ্ছি না। এতে শ্রমিকদের অতি কষ্টে জীবিকা নির্বাহ করতে হচ্ছে।
উৎপাদন বিল দিয়ে জিটিসি খনির উৎপাদন, সংরক্ষণ ও পরিচালনাসহ যাবতীয় ব্যায় বহন করে থাকে। এমতাবস্থায় খনি কর্তৃপক্ষ বিল পরিশোধ না করলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে নিয়মিত ভাবে এসব শ্রমিকদের প্রতি মাসের বেতন ও উৎপাদন বোনাস কি করে দেয়া সম্ভব? এমন প্রশ্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের।
খনির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিটিসির চেয়ারম্যান ড. মোঃ সিরাজুল ইসলাম কাজী জানান, খনির দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও চেষ্টায় জিটিসি খনিটিকে লোকসানের পর্যায় থেকে লাভজনক পর্যায় উন্নীত করেছে। এ অবস্থায় খনি কর্তৃপক্ষের পূর্ণ সহযোগিতা পেলে খনির উৎপাদন ও মুনাফা দুটোই আরও বৃদ্ধি করা সম্ভব হতো।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন বিল পরিশোধ বিষয়ে জানতে চাইলে মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের (এমজিএমসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এবিএম কামরুজ্জামান বলেন, বেলারুশের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিটিসির সাথে খনির পাথর উৎপাদন, রক্ষণাবেক্ষন ও পরিচালনা সংক্রান্ত চুক্তির মেয়াদ ২০২০ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারী শেষ হয়েছে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী এসময় পর্যন্ত তাদের পাওনা পরিশোধ করা হয়েছে। তবে, আরবিটেশন আদালতে দায়ের করা তাদের অভিযোগে প্রেক্ষিতে চুক্তির মেয়াদ এবছর বাড়ানো হয়েছে। নতুন চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে কোন আর্থিক লেনদেনের সুযোগ নেই।
জানা গেছে, পার্বতীপুরে মধ্যপাড়া পাথর খনি প্রকল্প বাস্তবায়নের শুরু থেকে নীতিনির্দ্ধারক মহলের খনির স্বার্থ পরিপন্থি নানা ভূমিকার কারনে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছিল। ২০১৪ সালে বেলারুশ ও বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গঠিত জার্মানিয়া ট্রেষ্ট কনসোর্টিয়াম (জিটিসি) নামের এক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ৬ বছরের জন্য এ খনির পাথর উত্তোলন, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার দায়িত্ব পায়। এর পরপরই খনির উৎপাদনশীলতা দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে। মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনি প্রকল্প বাস্তবায়নকারী উত্তর কোরীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ‘নামনাম’ ৩ শিফটে পাথর উত্তোলনের প্রকল্প পরিকল্পনার স্থলে ২০০৭ সাল থেকে কেবল এক শিফটে দৈনিক সর্বোচ্চ ৫০০ থেকে ৬০০ মে.টন পাথর উত্তোলন করতে সক্ষম হয়। যেখানে নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জিটিসি প্রতিমাসে ১ লাখ ২০ হাজার মে.টন পাথর উত্তোলনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ শুরু করে। পর্যায়ক্রমে জিটিসি দুই থেকে তিন শিফটে পাথর উত্তোলন করতে থাকে। এতে ২০১৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারী থেকে পাথর উত্তোলন বৃদ্ধি পেতে পেতে ২০১৫ সালের জুলাই পর্যন্ত এ খনি থেকে দৈনিক পাথর উত্তোলনের পরিমাণ দাড়ায় সাড়ে ৫ হাজার মে.টন।