গুরুদাসপুরে আত্রাই নদী সেচে শুঁকিয়ে মাছ শিকার

মাছের প্রজনন বৃদ্ধি ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলা আত্রাই নদী খনন করা হয়েছিল। সেটা এক বছর আগে। খননের একারনে ওই নদীতে পানি থাকায় মিলছে প্রচুর ছোট বড় নানা প্রজাতির দেশীয় মাছ। এসব মাছ ধরতে এক কিলোমিটার জুড়ে ওই নদীতে বাঁধ দিয়ে পানি সেঁচে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে মাছ ধরছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা।
শ্যালোমেশিন দিয়ে নদী শুকিয়ে মাছ ধরার কারনে একদিকে নদীতে বিচরণ করা ছোটবড় নৌকা বাওয়া ব্যহত হচ্ছে। অন্যদিকে মা মাছ ধরা পড়ছে। এতে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে সাধারনের চলাচল ও মাছের প্রজনন বৃদ্ধি। নষ্ট হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। গেল পাঁচ দিন ধরে অবৈধভাবে মাছ শিকারের মহোৎসব চললেও প্রশাসন কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের যোগেন্দ্রনগর এলাকায় চলছে মাছ ধরার কাজ।
উপজেলা মৎস কর্মকর্তা মো. আলমগীর কবির জানান ‘১৯৫০ দি প্রটেকশন অ্যান্ড কনজারভেশন অব ফিস এ্যাক্ট-১৯৫০; সাধারণভাবে মৎস্য সংরক্ষণ আইনে বলা আছে নদী-নালা, খাল ও বিলে সংযোগ আছে এরুপ জলাশয়ে প্রতি বছর ১এপ্রিল থেকে ৩১ আগষ্ট (চৈত্র মাসের মাঝামাঝি হতে ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি) পর্যন্ত শোল, গজার, টাকিসহ অন্যান্য মাছের পোনা ঝাঁক বা দম্পতি (মা মাছ) মাছ ধরা ও ধ্বংস করা আইনে নিষিদ্ধ রয়েছে। আইন ভঙ্গের জন্য কমপক্ষে মাস থেকে এক বছরের সশ্রম কারাদÐসহ দুই হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে।
শুক্রবার সকালে গিয়ে দেখাগেছে, নদীতে বাঁধ দিয়ে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিভাজন করা হয়েছে। সেখানে পাঁচটি শ্যালো মেশিন বসিয়ে পানি সেচে শুকিয়ে ফেলা হচ্ছে নদীটি। মুকুল হোসেন নামে এক ব্যক্তি পানি সেচের কাজে জড়িত রয়েছেন। পানি সেচের ছবি তুলতে গণমাধ্যম কর্মীদের নিষেধও করেন তিনি।
মুকুল হোসেন জানান, যোগেন্দ্রনগর গ্রামের রবিউল করিম (রবি) ও মনির হোসেন (মনি) নামে দুই ব্যক্তি মাছ ধরার জন্য নদীর পানি শুকাতে শ্যালো ইঞ্জিন বসিয়ে সেচ কাজ করাচ্ছেন। শ্যালো ইঞ্জিনগুলো ভাড়ায় খাটাচ্ছেন তিনি (মুকুল হোসেন)।
স্থানীয়রা জানান, নদটি খননের পর নদীতে ৫-৬ ফুট পানি রয়েছে। সেখানে নানা প্রজাতির দেশিয় মাছ রয়েছে। গ্রামের মানুষ ও জেলেরা সেখান থেকে মাছ ধরে আমিষের চাহিদা পূরণসহ জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। কিন্তু নদী শুকিয়ে মাছ শিকার করায় মাছের অভায়শ্রমসহ প্রজনন নষ্ট হচ্ছে। একই সাথে জীববৈচিত্র্য। মাছ শিকারের সাথে জড়িত ব্যক্তিরা এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পর্যন্ত পাচ্ছে না।
মাছ শিকারের সাথে জড়িত রবিউল করিম মোবাইলে দাবি করেন, এলাকার কবরস্থান ও মসজিদের উন্নয়নে অনুদান দিয়ে নদী সেচে মাছ শিকার করছেন তারা। এছাড়া স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করা হয়েছে। পত্রিকায় লিখে লাভ হবেনা বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
নদী শুকিয়ে মাছ শিকার প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তমাল হোসেন বলেন, দেশের চলমান পরিস্থিতির কারনে ব্যস্ত রয়েছেন তিনি। খোঁজ খবর নিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজ জানান, নদী শুকিয়ে মাছ শিকার ও জীববৈচিত্র্য নষ্টকরা আইন সংগত নয়। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ইউএনওকে নির্দেশ দিবেন বলে জানান তিনি।