মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার লালু

আব্দুস সাত্তার লালু ষাটের দশকে পাবনার ছাত্র রাজনীতির এক কিংবদন্তি নাম। স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে তাঁর মত শক্তিশালী এবং জনপ্রিয় ছাত্রনেতা আর দ্বিতীয়টি ছিলোনা। উনাকে যারা চিনতেন তাঁরা জানতেন,শত্রুপক্ষের দশজন বনাম উনি ছিলেন একা। রাজনীতিতে, খেলাধূলায় এবং সাংগঠনিক তৎপরতায় ছিলেন সবার সেরা। মুক্তিযুদ্ধকালীন পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষনের পর পাবনায় গঠিত স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিষদের সাত সদস্য বিশিষ্ট কমিটির অন্যতম সদস্য। মুক্তিযুদ্ধের সময় ছিলেন, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্য। মুক্তিযুদ্ধের আগে ঢাকায় প্রথম বিভাগ ফুটবল দল ফায়ার সার্ভিসের খেলোয়াড়। পাবনা জেলা স্কুলে পড়াকালীন আন্তঃস্কুল দৌড় প্রতিযোগিতায় পর পর তিন বছর পুর্ব পাকিস্তান জুনিয়র চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। ক্রীড়াবীদ হিসেবে লংজাম্পে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছিলেন। এমন একটি বীরের নাম আজকের প্রজন্মের অনেকের কাছে অজানা। এ প্রজন্মের পাঠক শুনলে অবাক হবে, স্বাধীনতার আগে যে বীরকে রাজনীতির শত্রু নক্সালবাহিনী বারবার চেষ্টা করেও হত্যা করতে পারেনি, যে বীরকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী হত্যা করতে পারিনি, সেই বীর স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে, তথাকথিত বিপথগামী একদল মুক্তিযোদ্ধার হাতে খুন হয়েছিলেন। সেদিন শত্রুরা শুধু এই বীরকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি – তাঁর সকল কৃতিত্ব মুছে ফেলার অপচেষ্টা করা হয়েছে।

আব্দুস সাত্তার লালু ১৯৪৬ সালে পাবনা শহরের পৈলানপুরে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা এসকেন্দার আলী সেখ। মাতা মোচ্ছাঃ ওলিমা খাতুন। ৬ ভাই ৩ বোনের মধ্যে আব্দুস সাত্তার লালু ছিলেন তৃতীয় সন্তান। ছোটভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম উজ্জ্বল ( এফএফ ) আরেক ছোটভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফ সেলিম ( সদ্য বিলুপ্ত পাবনা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডিপুটি কমান্ডার)। এই তিনভাই পাবনা জেলা স্কুলের ছাত্র ছিলেন। তিনজনই মুক্তিযুদ্ধের পূর্ব থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতি করতেন। ছোটভাই আব্দুল লতিফ সেলিম আন্তঃ স্কুল সাঁতার প্রতিযোগীতায় পুর্ব পাকিস্তান চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। আবুল কাশেম উজ্জ্বল ১৯৬৮-৭০ সালে ছাত্রলীগ পাবনা জেলা কমিটির দপ্তর সম্পাদক ছিলেন। সেই কমিটির সভাপতি ছিলেন, আতাউল হক হকু ও সাধারন সম্পাদক ছিলেন রফিকুল ইসলাম বকুল। ১৯৭০-৭১ সালের কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন আব্দুস সাত্তার লালু ও সাধারন সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বকুল।

ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে পাবনার রাজনীতি মুলতঃ দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। আওয়ামী লীগ সমর্থিত ছাত্রলীগ এবং ভাসানী ন্যাপ সমর্থিত ছাত্র ইউনিয়ন। ১৯৬৬ সালে ছাত্র ইউনিয়ন বিভক্ত হয়ে ছাত্র ইউনিয়ন মতিয়া গ্রুপ হয়েছিল। তৎকালীন পাবনার ছাত্র রাজনীতিতে ছাত্রলীগের প্রধান প্রতিপক্ষ ছিল ছাত্র ইউনিয়ন মেনন গ্রুপ । মুক্তিযুদ্ধের আগে কয়েক বছরে তাদের মধ্যে প্রায় শতবার মারামারি হয়েছে। ছাত্র ইউনিয়ন মেনন গ্রুপ মুক্তিযুদ্ধের আগে ১৯৭০ সালের ২২ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের নব-নির্বাচিত সংসদ সদস্য আহমেদ রফিককে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগে হীরা লাল ও শুকুর আলীকে হত্যা করে ।

মুক্তিযুদ্ধের আগে পাবনায় প্রভাবশালী ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন, আবুল এহসান গোরা, আলী রেজা, রবিউল ইসলাম রবি, আকবর মজিদ, আহমেদ রফিক, সোহরাব উদ্দিন সোবা, আতাউল হক হকু, আব্দুস সাত্তার লালু, রফিকুল ইসলাম বকুল, সাহাবুদ্দিন চুপ্পু, বেবী ইসলাম, আব্দুর রহিম পাকন, রেজাউল রহিম লাল, অখিল রঞ্জন বসাক ভানু, খোন্দকার আওয়াল কবীর, ইশারত আলী জিন্নাহ প্রমুখ। অপরদিকে ছাত্র ইউনিয়নের মেনন গ্রুপে প্রধান নেতা ছিল টিপু বিশ্বাস। এছাড়া মোফাক্কর চৌধুরী, নাজমুল হক নান্নু, বারী সরদার প্রমুখ ছাত্রনেতারা ছিলেন ছাত্র ইউনিয়ন মেনন গ্রুপে। স্বাধীনতার আগে ছাত্রলীগ নেতাদের বড় সফলতা ছিল, ১৯৭০-৭১ সালে এডওয়ার্ড কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রলীগ পুর্ন প্যানেলে বিজয়ী হওয়া। উক্ত নির্বাচনে অখিল রঞ্জন বসাক ভানু ভিপি এবং খোন্দকার আওয়াল কবীর জিএস নির্বাচিত হয়েছিলেন।

১৯৭১ সালের ১ মার্চ থেকে দেশব্যাপী অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয় । ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করা হয় । ৩ মার্চ পল্টন ময়দানে স্বাধীনতার ইশতেহার ঘোষনা করা হয়। ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ভাষন দিলেন। ৭ তারিখ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ নেতাদের নেতৃত্বে স্বাধীকার আন্দোলন চললেও ১ মার্চ থেকে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায় । পাড়া-মহল্লা, ওয়ার্ড, পৌরসভা, থানা ও জেলায় স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয় । ছাত্র তরুন, যুবকদের সংগঠিত করে সশস্ত্র ট্রেনিং প্রদান শুরু হয়। ৭ মার্চের পরে ঢাকা থেকে মোঃ ইকবাল( মুক্তিযুদ্ধকালীন বৃহত্তর পাবনা জেলার মুজিববাহিনী প্রধান) পাবনায় আসেন। মোঃ ইকবাল তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতাদের সাথে খুব ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল। উনি ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তোলিত পতাকার নমুনা নিয়ে এসেছিলেন। পাবনায় আদমজী গলির ভিতর ফিরোজ হোসেন ( সাবেক কমিশনার) ও তাঁর ভাই লালুর দোকানে স্বাধীন বাংলার মানচিত্র খচিত দুটি পতাকা বানানো হয়। ২৩ মার্চ সেই পতাকা নিয়ে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা মিছিল করে এডওয়ার্ড কলেজে আসেন। সেখানে ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে পতাকা প্রদর্শন করে মিছিল সহকারে পাবনা টাউন হল ময়দানে এসে পতাকা উত্তোলন করা হয়। পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বকুল পতাকা উত্তোলন করেন। সেখানে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুস সাত্তার লালু, সাহাবুদ্দিন চুপ্পু, বেবী ইসলাম, ফজলুল হক মন্টু সহ প্রমুখ ছাত্রনেতা উপস্থিত ছিলেন। ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পতাকা উত্তোলনের পর স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ২৩ মার্চ পাকিস্তান প্রজাতন্ত্র দিবসে সারাদেশে একসাথে পতাকা উত্তোলনের কর্মসুচী ঘোষনা করে। এই ঘোষনার পর সারাদেশে একসাথে পতাকা উত্তোলন করা হয়েছিল। পাবনায় ২৩ মার্চ পাবনা পুলিশ লাইন মাঠে পতাকা উত্তোলন করেন পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুস সাত্তার লালু। এমন একটি ঘটনার কথা পাবনার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস থেকে বিলীন হয়ে গেছে।

২৬ মার্চ পাকিস্তানী সৈন্যরা পাবনা শহরে কার্ফু জারী করে । ঐদিনই পাবনায় নব-নির্বাচিত সংসদ সদস্য এডভোকেট আমিন উদ্দিন, ডাঃ অমলেন্দু দাক্ষী, সাঈদ উদ্দিন তালুকদার সহ প্রায় শতাধিক মানুষকে গ্রেপ্তার করে । ২৭ মার্চ রাত থেকে পাবনায় প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু হয় । সর্বস্তরের জনগন ২৮ এবং ২৯ মার্চ যুদ্ধ করে পাবনায় অবস্থানরত সমস্ত পাকিস্তানী সৈন্যকে হত্যা করে। এরপর ১০ এপ্রিল পর্যন্ত পাবনা হানাদার মুক্ত থাকে। পরবর্তীতে পাকিস্তান সৈন্যরা কয়েকগুন শক্তি বৃদ্ধি করে আরিচা হয়ে পাবনা দখলের চেষ্টা করে। পাবনার সর্বস্তরের জনতা ১০ এপ্রিল পর্যন্ত নগরবাড়ী ঘাটে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ১০ এপ্রিল পাকিস্তানী সৈন্যরা নগরবাড়ী ঘাট দখল করে পাবনা অভিমুখে অগ্রসর হয় । নগরবাড়ী ঘাটে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধ ভেঙ্গে পড়লে সবাই ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে । আব্দুস সাত্তার লালু সুজানগরের নাজিরগঞ্জ এলাকায় আশ্রয় নেয়। তারপর পাবনা শহরের বেবী ইসলাম, মোঃ ইসমত ও ফজলুল হক মন্টুর সাথে দেখা হওয়ার পর তাঁরা একসাথে রাজবাড়ী, পাংশা, কুষ্টিয়া হয়ে ভারতে প্রবেশ করেন। সেখানে পাবনার সংগঠকরা কলকাতায় একত্রিত হওয়ার পর পাবনা জেলার জন্যে একটি আলাদা ক্যাম্প স্থাপন করার চেষ্টা করে। আব্দুস সাত্তার লালু, মোহাম্মদ ইকবাল, রফিকুল ইসলাম বকুল প্রমুখ নেতৃবৃন্দ কলকাতায় প্রবাসী সরকারের কাছে পাবনার জন্যে আলাদা একটি ক্যাম্প প্রতিষ্ঠার দাবী জানায়। অবশেষে কলকাতাস্থ বাংলাদেশ দুতাবাসের ডিপুটি হাই কমিশনার হোসেন আলীর সহযোগীতায় নদীয়া জেলায় কেচুয়াডাঙ্গায় ক্যাম্প প্রতিষ্ঠার অনুমতি পায় ।

কেচুয়াডাঙ্গা ক্যাম্প প্রতিষ্ঠার পর সেখানে পাবনার ওয়াজি উদ্দিন খান, গোলাম আলী কাদেরী, সুজানগরের তফিজ উদ্দিন, ঈশ্বরদীর শামসুর রহমান শরীফ ডিলু, আটঘরিয়ার আজিজুর রহমান ফনি সহ সিনিয়র নেতারা সেখানে অবস্থান করেন। ছাত্র নেতাদের মধ্যে আব্দুস সাত্তার লালু এবং রফিকুল ইসলাম বকুল সেখানে অবস্থান করে মুক্তিযোদ্ধাদের রিক্রুট করে ট্রেনিংএ পাঠানোর ব্যবস্থা করতেন । এ প্রসঙ্গে একটি বিষয় নিয়ে আলোকপাত করা দরকার। মুক্তিযোদ্ধাদের দুটি বাহিনী ছিল যার একটি ছিল এফ,এফ ( ফ্রন্ট ফাইটার) এবং আরেকটি ছিল মুজিব বাহিনী ( বিএলএফ)। এফ,এফ কে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার নিয়ন্ত্রন করলেও মুজিববাহিনীকে নিয়ন্ত্রন করতেন স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। মুজিব বাহিনীকে সহযোগিতা করতো ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। মুজিব বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন, সিরাজুল আলম খান, শেখ ফজলুল হক মনি, আব্দুর রাজ্জাক এবং তোফায়েল আহমেদ। মুক্তিবাহিনী ১১ টি সেক্টর নিয়ে গঠিত হলেও মুজিববাহিনী চারটি বিভাগে বিভক্ত ছিল। মুজিব বাহিনীতে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে অধ্যায়ন করা ছাত্রদের রিক্রুট করা হতো। মুজিব বাহিনীর সদস্যদের ভারতীয় সামরিক একাডেমী দেরাদুন এলাকায় প্রশিক্ষন দেওয়া হতো। মুজিব বাহিনীর রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন, তোফায়েল আহমেদ। প্রশিক্ষক ছিলেন, হাসানুল হক ইনু, শরীফ নুরুল আম্বিয়া, আফম মাহবুবুল হক প্রমুখ। মুজিব বাহিনীর বৃহত্তর পাবনা জেলা প্রধান ছিলেন মোহাম্মদ ইকবাল। ডিপুটি ছিলেন জহুরুল ইসলাম বিশু। এফ,এফ বাহিনীর জন্য কোন শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন ছিলোনা। এফ,এফ বাহিনীর প্রশিক্ষক ছিলেন ভারতীয় সেনা সদস্যরা।

প্রসঙ্গগত বিষয়, কেচুয়াডাঙ্গা ক্যাম্প থেকে পাবনা অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধা বাচাইয়ের দায়িত্ব ছিলো, আব্দুস সাত্তার লালু এবং রফিকুল ইসলাম বকুলের উপর। উনাদের সুপারিশে মুক্তিযোদ্ধা বাছাই করে দুই ভাগে বিভক্ত করে মুজিব বাহিনী এবং এফ,এফদের ট্রেনিংএ পাঠানো হতো। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র এবং স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের একটি বিরাট ভুমিকা ছিল। পাবনার আব্দুস সাত্তার লালু স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্য হয়ে পশ্চিম বাংলা তথা ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে ফুটবল খেলায় অংশ নিয়েছিলেন। দেশ স্বাধীনের পর আব্দুস সাত্তার লালু পাবনায় প্রত্যাবর্তন করলেন। স্বাধীনতার পর শীর্ষস্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে আব্দুস সাত্তার লালু সকল বিতর্কের উর্ধে ছিলেন। কাউকে খুন করা, কারো সম্পদ দখল করা বা কারো ক্ষতি করা এমন অভিযোগ তাঁর শত্রুও করতে পারবেন না। উনিই একমাত্র মুক্তিযোদ্ধা যার কোন সশস্ত্র ক্যাম্প ছিলোনা। যার কাছে কোন অস্ত্র ছিলোনা। এমনকি স্বাধীনতার পর ক্ষমতাসীন দলের দলাদলি বা আধিপত্য বা ক্ষমতা নিয়ে দ্বন্ধ থাকলে আব্দুস সাত্তার লালু’ তার সাথে সংশ্লিষ্টতা ছিলনা। এমন একজন অবিতর্কিত, সৎ এবং নির্লোভ ব্যক্তিকে ১৯৭২ সালের ১২ জুলাই পাবনা শহরের মধ্যে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয় । ঘটনার দিন সন্ধ্যায় পাবনা স্টেডিয়াম থেকে খেলাধুলা করে রিক্সায় শহরে ফেরার পথে বানী সিনেমা হল অতিক্রম করার সাথে সাথে খুনীরা তাঁর রিক্সার গতিরোধ করে। অবস্থা বেগতিক দেখে উনি রিক্সা থেকে নেমে পাবলিক লাইব্রেরীর গলির মধ্যে দৌড় দেন। খুনীরা দলবদ্ধভাবে চারিদিকে অবস্থান থাকায় গলির মুখেই তাঁকে গুলি করা হয় এবং সেখানেই আব্দুস সাত্তার লালু তিনি মৃত্যুবরন করেন।

খুন হলো আব্দুস সাত্তার লালু। খুন হলো একটি রাজনৈতিক ইতিহাস। খুনের এত বছর পরেও হত্যাকারীদের বিচার করা সম্ভব হয়নি। এমনকি তখন বিচার চাওয়ার সুযোগটা ছিল না। এই দীর্ঘ সময়ের পথপরিক্রমায় তাঁর দল, রাজনৈতিক সহযোদ্ধা এমনি কি সরকার, রাষ্ট্র সবাই এই বীরকে ভুলে গেছে। এমন একজন মহান মানুষকে আমরাও ভুলে গেছি। তাঁকে স্মরণ করা এবং তাঁকে স্মরনীয় করার এমন উদ্যোগ আজও নেওয়া হয়নি। তাঁর সকল কৃতিত্ব আজ ছাইয়ের মধ্যে চাপা পড়ে আছে। জানিনা কবে সুবাতাস এসে – আব্দুস সাত্তার লালু’র স্মৃতিকে অম্লান এবং অমলিন করবে। ( সমাপ্ত)

লেখক পরিচিতি –

আমিরুল ইসলাম রাঙা
রাধানগর মজুমদার পাড়া
পাবনা