রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় প্রবাসাীর (বিদেশ ফেরত) সন্ধানে এবার মাঠে নেমেছে উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসন। চলতি মাসের বিশ তারিখ থেকে এক সপ্তাহের ব্যবধানে এই উপজেলার প্রায় দুই শতাধিক প্রবাসীর আগমন ঘটলেও এদের অধিকাংশেরই কোন সন্ধান করতে পারছে না প্রশাসন। তারা কী আত্মগোপনে আছে নাকি আবার প্রবাসে ফিরে গেছে এ নিয়ে সংশয়ে রয়েছে প্রশাসন। এসব প্রবাসীদের সন্ধানে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শরিফ আহম্মেদ পাড়ায় মহল্লায় গিয়ে অভিযান শুরু করেছেন। গতকাল রবিবার সকালে ভবানীগঞ্জ পৌরসভার বিভিন্ন মহল্লায় অভিযান চালিয়ে ইউএনও প্রবাসীর সন্ধান করেন। তবে কোন প্রবাসীকে তিনি খুঁজে পাননি। উপজেলা প্রশাসন সুত্রে জানা গেছে, এর আগে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত দেশ গুলো থেকে চলতি মাসে বাগামাররায় আসা ১৯৫ জনের তালিকা প্রকাশ করে উপজেলা প্রশাসন। জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা(এসবি) থেকে এই তালিকা সরবরাহ করা হয়। সে সময় এই তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের ১৪ দিন হোম কোয়ান্টেনে(নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান) থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়। নির্দেশ মোতাবেক এসব ব্যক্তিদের নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থানের বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের সমন্ময়ে বিশেষ টীম গঠন করা হয়। এসব টীম পরে ইউনিয়ন ও পৌরসভা পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার জনপ্রতিনিধি ও গ্রাম পুলিশদের নিয়ে বিশেষ তদারকি টীম গঠন করে পাড়ায় পাড়ায় ব্যাপক তদারকি চালানো হয়। ব্যাপক এই তদারকির মাধ্যমে সে সময় এসব ব্যক্তির ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টেন নিশ্চিত করা গেলেও ওই তালিকায় থাকা ১৭ প্রবাসীর নাম ঠিকানায় অসংঙ্গতি থাকায় তাদেরকে খুঁজে পেতে বেকায়দায় পড়ে কর্তৃপক্ষ। এদের খুজে বের করতে পুলিশকেই কঠোর নির্দেশনাও দেওয়া হয়। দীর্ঘ অভিযান চালিয়ে পুলিশও তাদের খুজে বের করতে না পেরে তারাও বেকায়দায় পড়ে। এ প্রসঙ্গে বাগমারা থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) আতাউর রহমান জানান, ১৬ টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভা নিয়ে বিশাল এই উপজেলা গঠিত। এখানে ঠিকানা বিহীন ১৭ ব্যক্তিকে খুজে বের করা খুবই মুশকিল। তার পরও আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ দিকে ঠিকানা বিহীন এই ১৭ ব্যক্তি ছাড়াও গত তিন দিনে অন্তত আরো অর্ধশতাধিক প্রবাসী বাগমারায় প্রবেশ করেছে বলে পুলিশের বিশেষ শাখা সুত্রে জানা গেছে। জানা গেছে এসব ব্যক্তির তালিকাও পুলিশ প্রশাসনে পাঠানো হলেও পূর্বের ন্যায় এই তালিকাতেও অসংগতি থাকায় এবারও পুলিশ তাদের খুজে বের করতে হিমসিম খাচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী এসব প্রবাসীর বাড়িতে লাল পতাকা টাঙ্গিয়ে দিয়ে তাদেরকে নিজ নিজ বাড়িতে ১৪ দিন অবস্থানের বিষয়টি নিশ্চিতের জন্য কঠোর নির্দেশনা থাকলেও উপজেলার কোথাও এমন কোন প্রবাসীর সন্ধান পাওয়া যায়নি যেখানে লাল পতাকা টাঙ্গানো হয়েছে। এ দিকে বাগামারায় আসা প্রায় শতাধিক প্রবাসীরা এভাবে আত্মগোপনে থাকায় গোটা উপজেলা জুড়ে কনোরা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। এসব প্রবাসীর করোনা ভাইরাস পরীক্ষা না করা ও হোম কোয়ান্টেইনে না থাকায় এই আশংকা দেখা দিয়েছে বলে জানান এলাকার সচেতন মহল। উপজেলার বড়বিহানালী ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুর রহমান মিলন জানান, তার ইউনিয়নেও বেশ কিছু প্রবাসীর বাড়িতে আসার খবর পেয়েছেন। তবে এখানও তাদের কোন সন্ধান করতে পারেননি। তবে তিনি জানান, করোনা সতর্কতার জন্য তিনি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তার এলাকায় প্রচারপত্র ও মাস্ক বিতরন ও জনগুরুত্বপূর্ন স্থানে জীবানুনাশক স্প্রে করে চলেছেন। প্রায় একই অভিমত ব্যক্ত করেছেন ভবানীগঞ্জ পৌর মেয়র আব্দুল মালেক মন্ডল। তিনি বলেন, প্রশাসনের পাশাপাশি আমারাও সতর্কতা মূলক বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহন করে চলেছি। তবে তার এলাকায় প্রবাসী আগমনের কোন তথ্য তার জানা নেই। এ ব্যাপারে তিনি খোজখবর নেওয়া শুরু করেছেন। এ বিষয়ে বাগমারা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: গোলাম রাব্বানী জানান, স্বাস্থ্য বিভাগও বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের তথ্য সংগ্রহে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শুরু করেছে। এ প্রসঙ্গে বাগমারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শরিফ আহম্মেদ জানান, শুধু বিদেশ ফেরতই নয় আমরা ঢাকা বা অন্যান্য শহর থেকে আসা ব্যক্তিদেরও নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থানের বিষয়টি কঠোর ভাবে মনিটরিং করছি। এর আগে আসা বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টনের বিষয়টি আমরা নিশ্চিত করেছি। এর বাইরেও কোন বিদেশ ফেরত বা অন্যান্য জেলা শহর থেকে বাগমারায় আসা ব্যক্তিদের ব্যাপারে সার্বিক তথ্য দেওয়ার জন্য উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সদস্য ছাড়াও সংশ্লিষ্ট এলাকার জনগনের প্রতিও আহবান আহবান জানানো হয়েছে।