রাশেদ রাজন: পপি শব্দটি মানুষের নাম হিসেবে স্বাভাবিক মনে হলেও এই ফুলের নাম শুনলেই অনেকে আতকে উঠেন। কেননা ‘পপি ফুল’ নিষিদ্ধ দামি মাদক ‘আফিম’ তৈরীর কাঁচামাল। এই ফুল থেকেই আফিম তৈরি হয় আর সেই আফিম থেকে হিরোইন ও মরফিন পাওয়া যায়। আর তাই এই ফুলের চাষ বাংলাদেশে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে শুরু করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সৌন্দর্যবর্ধনের আড়ালে বাগানেই চাষ করা হচ্ছে এই পপি ফুল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ও বাসভবনে ৪ প্রজাতির পপি ফুল চাষ লক্ষ্য করা যায় এর মধ্যে সাদা, লাল, গোলাপি ও হলুদ রঙের। ফল যখন পরিপক্ব হয় তখন ব্লেড দিয়ে ফলের গায়ে গভীর করে আঁচড় দেওয়া হয়। ফলে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা পর এর ফল থেকে কষ বের হয় এবং চাষীরা তা সংগ্রহ করে, আর এই কষ হলো আফিমের কাঁচামাল।
বিশ্ববিদ্যালয়ে সরেজমিনে অনুসন্ধান করে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহামন হল, সৈয়দ আমীর আলী, মতিহার, মাদারবক্স, শহীদ জিয়াউর রহমান, শহীদ শামসুজ্জোহা, শেরে-বাংলা হল-প্রাধ্যক্ষের বাস ভবন ও মমতাজউদ্দীন কলা ভবন শুধু নয় উপাচার্যের বাসভবনেও রয়েছে নিষিদ্ধ এই পপি ফুলের গাছ। কিছু সংখ্যক ‘পপি’ গাছ দেখে যে কারও মনে হতে পারে, কৌশলে অন্য ফুল গাছের আড়ালে সেগুলো ঢেকে রাখা হয়েছে তবে কোনটি আবার প্রকাশ্যেই রয়েছে।
এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু হলের সামনে ও অভ্যন্তরে রয়েছে অসংখ্য পপি ফুলের গাছ। হলের সামনে সৈৗন্দর্যবর্ধনের জন্য লাগানো ফুল গাছের আড়ালেই দেখা মিলবে অসংখ্য এই গাছ। এছাড়াও হলের অভ্যন্তরে প্রবেশের ডান ও বাম পাশেও বাহারি ফুলের আড়ালে রয়েছে সারিবদ্ধ এই গাছ। সৈয়দ আমীর আলী হলের অভ্যন্তরেও রয়েছে নিষিদ্ধ এই ফুলের অসংখ্য গাছ। হলটির বাগানে অন্যান্য ফুল গাছের সাথে মিশে আছে এগুলো। এদিকে মতিহার হলে প্রবেশর বাম পাশের বাগানে বাহারী সব ফুলের মাঝে চাষ করা হচ্ছে পপি ফুল। এছাড়াও পপি ফুলের গাছ রয়েছে জিয়া ও জোহা হলের ১ম ব্লক , মাদারবক্স হলের ৩য় ব্লক, উপাচার্যের বাসভবনের সামনে এবং শেরে-বাংলা হলের প্রাধ্যক্ষের বাস ভবনের ফুলের বাগানেও পাওয়া গেছে পপি ফুলের অসংখ্য গাছ।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে যে কোন প্রজাতির পপি ফুল গাছ উৎপাদন, বাজারজাত ও চাষ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তব্ওু কেন বাগানে পপিফুল চাষ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিদের সেবিষয়ে সেই প্রশ্ন করা হলে সবাই বিষয়টি এড়িয়ে যান তবে জোহা হলে মালি পশাল বলেন, “আমরা জানি এটি পপি ফুল কিন্তু অসৎ উদ্দেশ্যে রোপণ করা হয়নি। ফুলটি অনেক সুন্দর এর জন্য রোপণ করা হয়েছে।”
পপি ফুলের ছবিসহ কয়েকটি ফুল ও ফল দেখালে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. মুঞ্জুর হোসেন বলেন, এটি অবশ্যই নিষিদ্ধ পপি ফুল যেটি বাংলাদেশে চাষ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ক্যাম্পাসে পপি ফুল গাছ আছে তা আমি আগে জানতাম না। তবে এই বিষয়গুলো প্রশাসনের আরো সচেতন হওয়া উচিত।
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু হলের প্রাধ্যক্ষ ড.রওশন জাহিদ বলেন,“আমরা ফুলটি বহুবার পর্যবেক্ষণ করেছি তবে তা পপি, আমি জানতাম না। “উল্লেখ্য বঙ্গবন্ধু হলের প্রাধ্যক্ষ গত শুক্রবার পপি ফুলের বিষয়টি অবহিত হওয়ার সাথে সাথেই হলের পপি ফুল গাছগুলো নির্মূল করেন।”
এদিকে সৈয়দ আমীর আলী হলের প্রাধ্যক্ষ ড. আমিনুল ইসলামকে একাধিক বার ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। শেরে বাংলা হলের প্রাধ্যক্ষ পার্থ বিপ্লব রায়ের বাসভবনে (আবাসিক) পপি ফুল গাছ থাকলেও তিনি অস্বীকার করেন।
জানতে চাইলে আইন বিভাগের অধ্যাপক ড.বিশ্বজিৎ কুমার বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ একটি নিরাপদ স্থান। এখানে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে কর্মরত কর্মচারীরা অসৎ উদ্দেশ্যেও পপি ফুল গাছ চাষ করতে পারে বলে তিনি মনে করেন।”
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমান বলেন, ‘আমি বিষয়টি সম্পর্কে জানি না এবং বিষয়টি অজানা থাকায় আমি মন্তব্য করতে পারছি না। ঘটনাটি সত্য হয়ে থাকলে আমরা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেব।