বিশ্বে করোনা ভাইরাসের বিস্তার বেড়েই চলেছে। প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত ব্যক্তি ও মৃতের সংখ্যা। এরই মধ্যে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন—বিভিন্ন দেশের সরকারের গুরুত্বপূর্ণ নেতা, কর্মকর্তা, ক্রীড়া ও বিনোদন জগতের তারকারা। ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধানরা তাদের সভা-সমাবেশ সীমিত করেছেন। ঘরে বসেই দেশ চালাচ্ছেন তারা। করোনা সংক্রমণ নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে আছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্ত্রীর করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ার পর স্বেচ্ছা কোয়ারেন্টাইনে গেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। আক্রান্ত হয়েছেন চেলসির একজন ফুটবলার ও আর্সেনালের ম্যানেজার মাইকেল আর্টেটা। স্বেচ্ছা কোয়ারেন্টাইনে আছেন পর্তুগিজ ফুটবল তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো। অস্কার পাওয়া অভিনেতা টম হ্যাঙ্কস ও তার স্ত্রী রিটা উইলসন আক্রান্ত হয়েছেন।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, বিশ্বের অনেক দেশের সরকার প্রধান দেশ চালাচ্ছেন ঘরে বসে। এই সংখ্যা বাড়ছে। কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর স্ত্রী সোফি গ্রেগরি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ট্রুডোকে ১৪ দিন আলাদা থাকতে হচ্ছে। বৃহস্পতিবার কানাডার প্রধানমন্ত্রীর দফতরের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, পরীক্ষায় সোফি ট্রুডোর সংক্রমণ ধরা পড়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী ভালো আছেন, তার মধ্যে কোনো উপসর্গ নেই। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে তিনি ১৪ দিন আলাদা থাকবেন। তবে ট্রুডো তার দায়িত্ব পালন করে যাবেন।
ট্রুডো আক্রান্ত না হলেও তিনি বিশ্বের অনেক নেতার কাতারে চলে গেছেন যারা সরকারি দপ্তর থেকে দূরে আছেন। এসব নেতার মধ্যে আছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকজন শীর্ষ আইনপ্রণেতা, ব্রিটেনের জুনিয়র স্বাস্থ্যমন্ত্রী, ইরানের উপস্বাস্থ্যমন্ত্রী, ফ্রান্সের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী, অস্ট্রেলিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট। পর্তুগালের প্রেসিডেন্ট মারসেলো রেবেলো দ্যা সুজা স্বেচ্ছা ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে গেছেন। যদিও তিনি সংক্রমিত হননি।
খবরে বলা হয়, কোয়ারেন্টাইনে থাকলেও বুদ্ধিমান নেতারা নতুন নতুন আইডিয়া বের করছেন। ট্রুডো আইসোলেশনে থেকেই ব্রিফিংয়ে অংশ নেবেন, ফোনে কথা বলবেন এবং ভার্চুয়াল মিটিং ঘরে বসেই চালিয়ে যাবেন। শুধু তিনি একা নন, ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট ডেভিড সাসোলিও স্বেচ্ছা আইসোলেশনে আছেন। গত মঙ্গলবার তিনি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জেইর বলসোনারো করোনা টেস্টের ফল পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন। তার মুখপাত্র ফাবিও ওয়াজংয়ার্টেন ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার মুখপাত্র ছিলেন। তারা ফ্লোরিডায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, তার মধ্যে সংক্রমণের কোনো লক্ষণ নেই। তিনি পরীক্ষাও করতে চান না। তবে সিএনএন সূত্রের বরাত দিয়ে বলেছে, ট্রাম্প তার ঘনিষ্ঠ লোকদের বলেছেন যে, তিনি সত্যিই এখন আতঙ্কিত। যদিও স্বেচ্ছা কোয়ারেন্টাইনে যাওয়ার ব্যাপারে তিনি কিছু জানাননি। যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত পৃথকভাবে ৯ জন আইনপ্রণেতা স্বেচ্ছা কোয়ারেন্টাইনে আছেন। তাদের মধ্যে কয়েক জন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সংস্পর্শে এসেছিলেন।
অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পিটার ডাটন সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার ও ট্রাম্পের মেয়ে ইভাঙ্কা ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন।
এই করোনা ভাইরাসে বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ইরান সরকার। ইরানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির বর্তমান উপদেষ্টা ড. আলি আকবর বেলাইয়াতি আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি নিজ বাড়িতে স্বেচ্ছা কোয়ারেন্টাইনে আছেন। সম্প্রতি খামেনির এক সাবেক উপদেষ্টা করোনায় মারা গেছেন। এ মাসের শুরুতে ইরানের ২৯০ সদস্যের পার্লামেন্টের ২৩ জন সংক্রমিত হন। দুই এমপি এখন পর্যন্ত মারা গেছেন। কয়েক জন ভাইস প্রেসিডেন্ট আক্রান্ত হয়েছেন। ফ্রান্সে কয়েক জন এমপি ও মন্ত্রী আক্রান্ত হয়েছেন।
ব্রিটেনের জুনিয়র স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাদিন ডোরিয়েস আক্রান্ত হওয়ার পর স্বেচ্ছা কোয়ারেন্টাইনে আছেন। তার সংক্রমণের বিষয়টি সামনে আসার আগে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন তিনি। যদিও জনসনের মধ্যে সংক্রমণের কোনো লক্ষণ এখনো দেখা যায়নি। মঙ্গোলিয়ার প্রেসিডেন্ট খালতমাগিন ও বেশ কয়েক জন কর্মকর্তা কোয়ারেন্টাইনে গেছেন।
খবরে বলা হয়, এ ভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে থাকায় বিশ্বের আরো অনেক দেশে সরকারের কর্মকর্তা ও নেতারা আক্রান্ত হতে পারেন। এখন পর্যন্ত এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বয়স্কদের মৃতের হার সবচেয়ে বেশি। এ বিষয়টি দেশগুলোর জন্য চিন্তার কারণ হতে পারে। কেননা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতাদের বয়স ৬০ থেকে ৮০-এর মধ্যে।
এদিকে করোনা ভাইরাসে ১৩০টির বেশি দেশে আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৩৭ হাজারের বেশি মানুষ। মৃতের সংখ্যা ৫ হাজার ছাড়িয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, আক্রান্তদের মধ্যে ৬৮ হাজার সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়ে গেছে। গতকাল মারা গেলেন দিল্লির জনকপুরীর বাসিন্দা (৬৮)। ঐ নারীর নাম প্রীতি সুদন। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে। দিল্লিতে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে তিনি ষষ্ঠ রোগী ছিলেন। বেশ কিছু দিন ধরেই উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন তিনি। এর আগে বৃহস্পতিবার এক জনের মৃত্যু হয়।
বেলজিয়াম, ফ্রান্স, পর্তুগালস, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তানসহ আরো কয়েকটি দেশ স্কুল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে। অবরুদ্ধ ইতালিতে বৃহস্পতিবার দেড় হাজার নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। যানবাহন চলাচলে কড়াকড়ি আরোপের মাধ্যমে ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলাকে এক মাস বাইরের দুনিয়া থেকে আলাদা করা সিদ্ধান্ত হয়েছে। স্পেনে আক্রান্তের সংখ্যা ৪ হাজার ছাড়ানোর পর জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। ইরানে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১১ হাজার। মারা গেছে ৫১৪ জন।