পাবনার ভাঙ্গুড়ায় গ্রামীণ সড়ক উন্নয়নে হেরিং বোন বন্ড (এইচবিবি) প্রকল্পের কাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। দরপত্র না মেনে সড়কের নিচের স্তরে দেড় থেকে দুই ইঞ্চি ফাঁকা রেখে ইট বিছানো হচ্ছে। ফাঁকা জায়গা বালু দিয়ে ভরাট করায় উপরের স্তরের ইট নড়াচড়া করছে। এমনকি রাস্তাটি দরপত্র অনুযায়ী প্রস্বস্ত করা হচ্ছেনা। এতে চলাচলে অসুবিধা হাওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দারা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, কাজ দেখভালের দায়িত্বে কোনো কর্মকর্তা না থাকায় ঠিকাদার এমন অনিয়ম করছে।
জানা যায়, চলতি অর্থ বছরে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস উপজেলার অষ্টমনিষা ইউনিয়নের অষ্টমনিষা গ্রামের ৮০০ মিটার কাঁচা রাস্তা হেরিং বোন বন্ড (এইচবিবি) করতে দরপত্র আহ্বান করে। এতে ব্যয় ধরা হয় ৪৮ লাখ টাকা। কাজটি পায় পার্শ্ববর্তী চাটমোহর উপজেলার ঠিকাদার সিরাজ আলী। গত সপ্তাহে ঠিকাদার কাজটি শুরু করে। কিন্তু কাজটি দেখভালের জন্য কোনো দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিযুক্ত না থাকায় শুরুতেই কাজটিতে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। অন্যদিকে পার্শ্ববর্তী চাটমোহর উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শামীম এহসান এই উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করলেও তিনি সপ্তাহে একদিন অফিস করেন। এতে কাজটি দেখভালের কেউ নেই। এ অবস্থায় প্রথমে গ্রামবাসী ঠিকাদারকে দরপত্র অনুযায়ী কাজ করতে অনুরোধ জানান। কিন্তু ঠিকাদার নিজেকে আওয়ামী লীগ নেতার ভাগিনা পরিচয় দিয়ে অনিয়ম করেই চলে। পরে গ্রামবাসী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ করেন।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, গ্রামীণ মাটির রাস্তা টেকসই করণের লক্ষ্যে হেরিং বোন বন্ড (এইচবিবি) কাজ শুরু হয়েছে। এরইমধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। দুই স্তর বিশিষ্ট সড়কের নিচের স্তরে দেড় থেকে দুই ইঞ্চি ফাঁক রেখে ইট বিছানো হচ্ছে। কিন্তু এইচবিবি সড়ক নির্মাণের নিয়ম অনুযায়ী সর্বোচ্চ হাফ ইঞ্চি ফাঁকা রেখে ইট বিছানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এঅবস্থায় যানবাহন চলাচলের সময় সড়কের উপরের স্তরের ইট নড়াচড়া করছে। এমনকি রাস্তার প্রস্বস্থ ১০ফুট রাখার কথা থাকলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পাওয়া গেছে সাড়ে ৯ফুট।
অষ্টমনিষা গ্রামের ইউপি সদস্য আব্দুল জলিল খান বলেন, ঠিকাদার আওয়ামী লীগের এক বড় নেতার ভাগিনা। তাই সে দাপট দেখিয়ে সড়কের কাজে ব্যাপক অনিয়ম করছে। গ্রামবাসী বাধা দিলেও সে তার তোয়াক্কা করছে না। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে।
কাজের অনিয়মের বিষয়ে ঠিকাদার সিরাজ আলী বলেন, কাজ ঠিকঠাক মতোই করা হচ্ছে। সড়কের নিচের স্তরে ২ ইঞ্চি ফাঁকা রেখে ইট বসানোর নিয়ম আছে। তাছাড়া অফিসের কেউ কিছু না বলায় এভাবেই ইট বিছানো হচ্ছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের একমাত্র উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমি অন্য প্রকল্প নিয়ে ব্যস্ত থাকায় এইচবিবি সড়কের কাজ দেখিনা। তাই এ বিষয়ে আমাকে কিছু বলে লাভ নেই।’
উপজেলার ভারপ্রাপ্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শামীম এহসান বলেন, ইটের চেয়ে বালুর দাম বেশি। তাই ঠিকাদার বালু ব্যবহার করলে সমস্যা নেই। এসময় সড়কের ইটের মাঝে কতটুকু ফাঁকা রাখার নিয়ম আছে জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দেননি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘অভিযোগ পেয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের কর্মকর্তাকে সরেজমিনে পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া আমি নিজেও যে কোনো সময় ওই সড়কের কাজ দেখতে যাব। এতে অনিয়ম পেলে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’