সুন্দরগঞ্জের তিস্তার চরাঞ্চলের শিশুরা শিক্ষা বঞ্চিত

রহিম, জব্বার, ফুলমিয়া, ধলু, মতি, ফুলমতি, কহিনুর এদের বয়স ৮ হতে ১২ বছর। এ বয়সে তাদের স্কুলে যাওয়ার কথা। অথ তারা স্কুলে না গিয়ে তিস্তার কোলায় মাছ ধরছে, ধূ-ধূ বালু চরে খেলা খেলছে, ছুটা-ছুটি করে বেড়াচ্ছে। অনেকে বাবার পেশার সাথে সহযোগিতা করছে। তারা জানে না স্কুলে কি হয়। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তার চরাঞ্চলে ২৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার নাজুক অবস্থা, শিক্ষকদের অনুপস্থিতি, অবকাঠামোগত সমস্যা, শিক্ষক সংকট এবং শিক্ষা কর্মকর্তাগণের তদারকির অভাবে বেশির ভাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নি¤œমূখি হয়ে পড়েছে। প্রাথমিক শিক্ষার আলো হতে বঞ্চিত হচ্ছে চরাঞ্চলের হাজারও শিশুরা। সরকারের গুণগত মান সম্পূর্ণ প্রাথমিক শিক্ষা মারাত্মকভাবে ব্যহত হতে চলছে।


সরেজমিন উপজেলা চরমাদারি পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মল্লা পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্ব পাড়া সাধুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাঘব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হরিপুর বি এস এম সরকারি প্রাথমিক, ভোরের পাখি সরকারি প্রাথামক বিদ্যালয় গিয়ে দেখা গেছে প্রাথমিক শিক্ষার হালচিত্র। দুপুর ১টার পর কোন শিক্ষককে বিদ্যালয়ে পাওয়া যায়নি। পূর্ব পাড়া সাধুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবক আমিনুল ইসলাম জানান, শিক্ষকরা সপ্তাহে ২ হতে ৩ দিন বিদ্যালয়ে এসে হাজিরা দিয়ে চলে যায়। শিক্ষার্থীরা স্কুলে এসে এলোমেলো ও হৈ চৈই করে চলে যায়। মাসে একদিনেও কোন শিক্ষা কর্মকর্তা বিদ্যালয় তদারকি করতে আসে না। চর মাদারি পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবক আবুল কালাম জানান, শিক্ষাকরা সপ্তাহে কয়দিন স্কুলে আসে তা ছাত্র-ছাত্রীদের জিজ্ঞাসা করলে পাওয়া যাবে। স্কুল চলে আল্লার অস্তে। পূর্ব পাড়া সাধুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, চরের যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত খারাপ। সে কারণে যথা নিয়মে বিদ্যালয়ে যাওয়া আসা হয় না।

হরিপুর ইউপি চেয়ারম্যান নাফিউল ইসলাম জিমি জানান, হরিপুর ইউনিয়নে চরে যে কয়টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে তাদের শিক্ষকরা স্কুলে আসে না বললেই চলে। বিশেষ করে প্রধান শিক্ষকরা অফিসের কাজের কথা বলে সারাদিন স্থানীয় পাঁচপীর বাজারে এবং উপজেলা শহরে গিয়ে দিন পার করছেন। এছাড়া দায়িত্বরত প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাগত তদারকি তো দুরের কথা আমার বিশ্বাস প্রধান শিক্ষকের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করে কি না তা সন্দেহ রয়েছে। সহকারি শিক্ষা অফিসার আশিকুর রহমান জানান, চরাঞ্চলের প্রতিষ্ঠান সমুহে কিছুটা সমস্যা রয়েছে। বহুবার শিক্ষকদের যথানিয়মে বিদ্যালয়ে আগম ও প্রস্থন করার জন্য তাগাদা দেয়া হয়েছে। তবে আগের চেয়ে এখন অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন হওয়ায় নিয়মিত স্কুল তত্ত্বাবধান করা সম্ভব হচ্ছে না। উপজেলা শিক্ষা অফিসার হারুন-উর রশিদ জানান, ১১ জন সহকারি শিক্ষা অফিসারের স্থলে উপজেলায় মাত্র ৫ জন অফিসার রয়েছে। যার কারণে চরের প্রতিষ্ঠান সমুহ প্রতিনিয়ত তত্ত্বাবধান করা সম্ভব হচ্ছে না। সে কারণে শিক্ষকদের অনুপস্থিত আভিযোগ শোনা যায়। তবে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।