দায়িত্ব ও কর্তব্য সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে হবে — চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহম্মদ আলী আহসান


মৌলভীবাজারে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহম্মদ আলী আহসান বিগত ২০১৮ সালের ২৭ মে যোগদানের পর অত্র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসিতে বিভিন্ন সংস্কারমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। যার ফলে, তাঁর দক্ষ নেতৃত্বে তাঁর অধীনস্থ বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেটগণ ২০১৮ খ্রিঃ সনের মামলা নিষ্পত্তির (২০১৮ খ্রিঃ সনে নিষ্পত্তি ৯৭১১টি) চেয়ে ২০১৯ খ্রিঃ সনে মামলা নিষ্পত্তির (২০১৯ খ্রিঃ সনে নিষ্পত্তি ১০৫০৯টি) হার ১০৮% বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষত: ২০১৮ খ্রিঃ সনে পাঁচ ও দশ বছরের অধিক পুরাতন ৪শত ৪১টি ও ২০১৯ খ্রিঃ সনে ৪শত ৪৯ টি মামলা নিষ্পত্তি করা হয়। অর্থাৎ নিষ্পত্তির হার ১০২%। মৌলভীবাজারে পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেসি কনফারেন্স আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ সব তথ্য নিশ্চিত করা হয়। চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহম্মদ আলী আহসান এর সভাপতিত্বে আদালত সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানে হয়। মৌলভীবাজারে পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেসি কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- মৌলভীবাজার অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ বাহাউদ্দিন কাজী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ জিয়াউর রহমান, মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিস্ট হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটগণ, সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা, জেল সুপারের প্রতিনিধি জেলার, প্রবেশন অফিসার, পরিদর্শক মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, বিভাগীয় বন কর্মকর্তার প্রতিনিধি রেঞ্জ অফিসার, কোর্ট ইন্সপেক্টও, ইন্সপেক্টর, সিআইডি ইন্সপেক্টর, পিবিআই এবং জেলার বিভিন্ন থানার অফিসার ইনচার্জ, জেলা গোয়েন্দা শাখার ইনচার্জ। কনফারেন্সের শুরুতে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহম্মদ আলী আহসান ১৯৫২ সনের ২১ ফেব্রæয়ারির ভাষা শহীদদের বিদেহী আত্মার শান্তি ও মাগফিরাত কামনা করেন এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও মুজিব বর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে স্বাগত বক্তব্যে জেলার বিভিন্ন থানায় তদন্তাধীন থাকা মামলার তদন্ত কার্য দ্রæততা ও দক্ষতার সাথে আইনের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করে আদালতে প্রতিবেদন প্রেরণ, যথাসময়ে মামলার সাক্ষী উপস্থাপন নিশ্চিত করত: তাদের নিরাপত্তা বিধান, গ্রেফতারের পর আইনের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আদালতে সোপর্দ করার, পরোয়ানা জারির ক্ষেত্রে আরও তৎপর হওয়ার এবং চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারাধীন মামলাসমূহের সুষ্ঠু বিচার প্রক্রিয়া দ্রæত সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালনের জন্য বিচারক ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে বিভিন্ন ধরনের দিক নির্দেশনা প্রদান করেন। চীফ জুডিসিয়ার ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশ বিভাগ, মৌলভীবাজার আইনজীবী সমিতির সদস্যবৃন্দ ও স্বাস্থ্য বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিভাগের ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। এছাড়াও, বক্তাগণ দ্রæত গ্রেফতারী পরোয়ানা, হুলিয়া, ক্রোকী পরেয়ানা তামিল ও সমন জারীর ব্যবস্থা গ্রহণ, তদন্ত কার্যে বিদ্যমান সমস্যা সমাধান, তদন্তে দীর্ঘসূত্রিতা পরিহার, হয়রানী বন্ধ,পিএম রির্পোট ও এমসি রির্পোট প্রদানের ক্ষেত্রে সর্তকতা অবলম্বন, নকলখানা হতে স্বল্পতম সময়ে নকল সরবরাহের ব্যবস্থা করা, মামলার আলামত সংরক্ষণ ও সঠিক নিয়মে নিষ্পত্তি, মামলা দ্রæত নিষ্পত্তি ও নিষ্পত্তিকৃত নথি দ্রæত রেকর্ডরুমে প্রেরণ, আদালত ও বিচার সংশ্লিষ্ট সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণসহ নানাবিধ বিষয়ে তাদের গুরুত্বপূর্ণ মতামতসমূহ তুলে ধরেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ জিয়াউর রহমান তার বক্তব্যে আলামত জব্দের পর আইনানুযায়ী জব্দ তালিকা তৈরি করার এবং থানার মালখানায় থাকা আলামত আইনানুযায়ী নিষ্পত্তির বিষয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। বিভিন্ন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ তাদের বক্তব্যে উল্লেখ করেন- যে, ডাক্তার ও স্টাফদের অবহেলার কারণে সিলেট এম.এ.জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হতে যথাসময়ে আঘাতের বিষয়ে মেডিকেল সার্টিফিকেট পাওয়া যায় না। ফলে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আদালতে পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেন না। চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বিভিন্ন থানা থেকে আগত থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যান্য উপস্থিতি কর্র্তৃক উত্থাপিত বিভিন্ন সমস্যার আইনি সমাধান, প্রশ্নোত্তর প্রদান এবং পরবর্তী কর্মপন্থা নির্ধারণ করত: সমাপনী বক্তব্যে বলেন- ফৌজদারী বিচার ব্যবস্থায় বিচার প্রশাসন, নির্বাহী প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগ একে অপরের পরিপূরক। মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের আস্থা বৃদ্ধি ও ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আন্তরিকতা ও সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগকে একযোগে ব্যক্তি স্বার্থের উর্ধ্বে উঠে বিচার প্রার্থী মানুষের কল্যাণে নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে হবে। এক্ষেত্রে কারও অবহেলা কাম্য নয়। সামনের দিনগুলোতে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর পারষ্পরিক সমন্বয়ের মাধ্যমে ফৌজদারী বিচার ব্যবস্থায় আরো গতিশীলতা আসবে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এবং গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ হারে মামলা নিষ্পত্তি করার অঙ্গীকার করেন। আগত সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে কনফারেন্সের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।