মৌলভীবাজারে পিডিবির বৈদ্যুতিক তার যেন এখন
মৃত্যুর ফাঁদে পরিনত হয়েছে। পরপর ঘটছে দূর্ঘটনা। কর্র্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে
সম্পূর্ণ উদাসীন। শহরের সেন্ট্রাল রোড অন্যতম বাণিজ্যিক সড়ক। এখানে
প্রতিদিন যাতায়াত করেন জেলার বিভিন্ন প্রান্ত হতে আসা কয়েক লক্ষাধিক
মানুষ। দূর্ঘটনার পরপরই পিডিবি কর্তৃপক্ষ তাদের দোষ চাপা দিতে দায়ী করছে
গ্যাসের সিলিন্ডার অথবা অন্য কোন কারণ দেখান। শহরের এম সাইফুর রহমান সড়কের
পিংকি সু-ষ্টোরের স্মরণকারের ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে একই
পরিবারের তিনজনসহ মোট ৫জন নিহত হন। দুর্ঘটনার কারণ জানতে গঠন করা হয়
তদন্ত কমিটি। অদৃশ্য কারনে রিপোর্টটি ফাইল চাপা পড়ে যায়। সর্বশেষ গতকাল
১৫ই ফেব্রুয়ারী বিকেলে শহরের পশ্চিমবাজারের বাটা শোরুমের অগ্নিকান্ডের
ঘটনা ঘটে। যদিও আগুন ছড়ানোর আগে ফায়ার সার্ভিসের দক্ষতার কারনে সেটি
নিয়ন্ত্রনে আসে। শহরের অন্যতম এই বাণিজ্যিক সড়কের ব্যবসায়ীদের আতংক
যেনো কিছুতেই কাটছেনা। ঘটনার পর থেকে পুরোটা শহরের দৃষ্টি সেই
বাণিজ্যিক এলাকা পশ্চিমবাজার ও সাইফুর রহমান সড়কের পাশে বাণিজ্যিক ভবন
ঘেঁষে রয়েছে পিডিবির তারের জঞ্জাল নিয়ে। যা থেকে যেকোন মূহুর্তে ঘটতে
পারে পিংকি ষ্টোরের থেকেও বড় ধরনের ঘটনা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ,শহরের
এম সাইফুর রহমান সড়ক ও পশ্চিমবাজার সড়কে পিডিবির বৈদ্যুতিক খুঁটি
দিয়ে এলোমেলো বৈদ্যুতিক তারের জটলা একই সাথে রয়েছে ক্যাবল নেটওয়ার্কের
তারসহ বিভিন্ন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সংযোগ। এছাড়াও প্রতিটি খুঁটি
ঘিরে একাধিক প্রতিষ্ঠানের সংযোগ লাইন থাকার কারনে দুর্ঘটনার আশঙ্কা
মাথায় নিয়ে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা পরিচালনা করছেন। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ- শহরের
স্যালিনি জুয়েলার্সের সামনে ও রাজিয়া ক্লথ ষ্টোরের সামনে অর্থাৎ দুই
জায়গায় দুটি খুঁটির মধ্যখানে পিডিবির যে ট্রান্সফরমার রয়েছে সেখানের
সংযোগ লাইনে বৃষ্টির পানি লাগা মাত্রই অনেক সময় বৈদ্যুতিক শর্ট লেগে
আগুনের স্ফুলিং তৈরি হয়। যার কারনে সড়কে চলাচলকারী সাধারণ মানুষ ও
ব্যবসায়ীদের সব সময় আতঙ্কে থাকতে হয়। শুধু ট্রান্সফরমার’ই নয় প্রতিটি ভবন
ঘেষে যে বৈদ্যতিক খুঁটি রয়েছে তাতে অতিরিক্ত তারের জঞ্জাল থাকার কারনে
যেকোন সময় ঘটতে পারে ভয়াবহ অগ্নি দুর্ঘটনা। মালিক এন্টারপ্রাইজ এর
স্বত্তাধিকারী বলেন- একাধিকবার পিডিবির কর্তৃপক্ষকে লিখিত ও মৌখিক ভাবে
জানানো হলেও কোন সমাধান দিচ্ছেনা। ঝুঁকিপূর্ণ লাইনের কারনে আমরা খুব
বিপদের মধ্যে আছি। যেকোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ব্যাবসায়ী মাহফুজ
আহমদ বলেন- খুঁটির মধ্যে এলোমেলো তারের জঞ্জাল থাকলেও কোন নজরদারি নেই
বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের। এম সাইফুর রহমান সড়কের নতুন সোনালী ব্যাংকের বিপরীত
পাশ্বের ৩লা বিল্ডিয়ের বারান্দার পাশদিয়ে মেইন লাইনের তারের সংযোগ লাইন গেছে।
বিল্ডিংয়ের বারান্দা দূরত্ব এক ফুট হবে। বিল্ডিংয়ের ৩য় তলায় রয়েছে মৌলভীবাজার
অনলাইন প্রেসকøাবের অফিস। যদি কোনভাবে কারো হাত সেখানে লেগে যায়
তাহলে মৃত্যু অবধারিত। মৌলভীবাজার চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির সাবেক
প্রেসিডেন্ট ও এম,বি কøথ ষ্টোরের স্বত্তাধীকারী ডাঃ এম.এ আহাদ বলেন, বিদ্যুৎ
কর্তৃপক্ষ সংযোগ দিয়েই নিজেদের কাজ শেষ, পরবর্তীতে তাদের কোন নজরদারি
নেই। তিনি আরো বলেন, প্রতিটি বৈদ্যতিক খুঁটি থেকে বিদ্যুৎ লাইনের
পাশাপাশি একই সাথে ইন্টারনেট ও ক্যবল নেটওয়ার্কের তার রয়েছে এগুলো দ্রুত
অপসারণ প্রয়োজন নতুবা এই তারের জঞ্জালে যে কোন সময় অনেক বড় রকমের
দূর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। বিলাস ডিপার্টমেন্টাল ষ্টোরের স্বত্তাধীকারী মো:
সুমন আহমদ বলেন, আমরা পৌরসভা ও পিডিবির সাথে বিষয়টি নিয়ে আলাপ
করেছি আশা করি বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে। মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র ফজলুর
রহমান বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা উদ্যোগ নেবো। যাতে তার গুলো নিয়ন্ত্রিত
থাকে, সবার সাথে আলাপ আলোচনা করেই বিষয়টি সমাধানের দিকে যাবে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) নির্বাহী প্রকৌশলী হাবিবুল বাহার
জানান, এবিষয় নিয়ে আমাদের নিকট কেউ কোন আবেদন করেননি। তবে খুঁটি
গুলোতে অনিয়ন্ত্রিত তারের কারনে শহরের সৌন্দর্যহানী হলে এটি পৌরসভা দেখার
কথা। তিনি জানান সামনে পৌরসভার সাথে বৈঠকে বিষয়টি পৌরসভার মেয়রের
সাথে আলোচনা করা হবে। এদিকে শুধু সেন্ট্রাল রোড’ই নয়। শহরের আরেক
গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট চৌমুহনা চত্বর সহ শহরের আদালত সড়কের বিভিন্ন ভবনের
সামনেও খুঁটিতে তারের এলোমেলো লাইন দেখা গেছে।