ব্লাষ্ট রোগ প্রতিরোধে সার্বক্ষনিক তদারকি আটঘরিয়ায় গমের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা

পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভায় চলতি রবি মৌসুমে আধুনিক উন্নত জাতের গম চাষ হয়েছে। খরচে কম ও স্বল্প পরিশ্রমে গতবার অধিক ফলন ও ভাল দাম পাওয়ায় এই জনপদের চাষীরা এবার আগ্রহী হয়েছেন গম আবাদে। বাম্পার ফলনের সম্ভাবনায় গম চাষিদের মুখে ফুটেছে হাসি।

আটঘরিয়ায় উপজেলায় চলতি মৌসুমে গম চাষ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২২০০ হেক্টর। তার বিপরীতে আবাদ হয়েছে ২৫৩০ হেক্টর জমিতে। অর্থাৎ গত মৌসুমের তুলনায় এবার প্রায় ৩শ’ ৩০ হেক্টর জমিতে গমের আবাদ বেশি হয়েছে।

এবার আবাদকৃত গমের আধুনিক উন্নত জাতের মধ্যে বারী গম-২৫, বারী গম-২৬, বারী গম-২৮, বারী গম-৩০, বারী গম-৩১ এর আবাদ হয়েছে। আর এবার হেক্টর প্রতি ৩.৫ মেট্রিক টন গম উৎপাদন হতে পারে। সে হিসেবে গম উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ৮ হাজার ৮শ’ ৫৫ মেট্রিক টন।

উপজেলার আটঘরিয়া পৌরসভা, দেবোত্তর, একদন্ত, লক্ষীপুর, চাঁদভা, মাজপাড়া ইউনিয়নসহ সর্বত্যই গবের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে উপজেলার একদন্ত ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে।

আটঘরিয়া পৌরসভার উত্তরচক গ্রামের বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত গম চাষি মো. আব্দুল খালেক জানান, ধানের চেয়ে গম আবাদ লাভজনক। তাছাড়া গম কেটে তিল বা পাট চাষ করতে পারব। এ জন্য গত বছর প্রায় ৬ বিঘা জমিতে গম চাষ করেছিলাম। বিঘা প্রতি খরচ হয়েছিল ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় (৩৩ শতক হিসেবে) গড়ে ১৬ মন গম পেয়েছিলাম। বিঘা প্রতি উৎপাদিত গম বিক্রি করেছিলাম প্রায় ১৬ হাজার টাকা। ভালো লাভ হওয়ায় এবছর ৮ বিঘা জমিতে গম চাষ করেছি।

তিনি আরও জানান, উৎপাদিত গম সরকারি গুদামে বিক্রি করতে গেলে সমস্যার সম্মূখীন হতে হয়। এই সমস্যা দূর করে সকল গম যদি সরকারি গুদামে বিক্রি করতে পারি তবে আগামীতে আরো গম চাষ করব।

আটঘরিয়া উপজেলার উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো. সাফাজ উদ্দিন, মো. মনিরুজ্জামান মনির, মো. আব্দুর রব, মো. জাহিদুল ইসলাম জানান, সাধারণতঃ যে সব অঞ্চলে দোঁয়াশ মাটি বিদ্যমান, সেসব অঞ্চলই গম চাষের জন্য বেশি উপযোগী। শীত দীর্ঘ হলে গমের দানা ভাল হয়। গতবার অধিক ফলন এবং দাম পাওয়ায় এই জনপদের চাষীরা এবার গম আবাদে আরও আগ্রহী হয়েছেন। ২/৩টি সেচ দিয়ে গমের আবাদ করা যায়। তাছাড়া এই মৌসুমের প্রথম দিক থেকেই আবহাওয়া অনুকূলে ছিল বিধায় চাষাবাদ করা সম্ভব হয়েছে। তাছাড়া এবার গমের রোগ-বালাই কম মনে হচ্ছে। ফলনও ভালো হবে আশা করছি।

আটঘরিয়া উপজেলার উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষন কর্মকর্তা মো. আতাহার হোসেন জানান, উপজেলার সকল গমচাষীদের গমের বøাষ্ট রোগসহ বিভিন্ন প্রকার রোগ ও পোকামাকড় দমনে সার্বক্ষনিক পরামর্শ প্রদান করছেন সকল বøকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাবৃন্দ। বøাষ্ট রোগ গমের জন্য একটি ক্ষতিকর রোগ। এই রোগ দমনে নাটিভো ১০ গ্রাম ১৬ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করার পরার্ম প্রদান করছেন। আটঘরিয়ায় গমের আবাদ বাড়ার কারণ জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রোকশানা কামরুন্নাহার জানান, উৎপাদন প্যাটার্ণ অনুযায়ি উচ্চ ভূমি এবং মধ্য উচ্চভূমিতে গম চাষ করলে সেচ খরচ কম হওয়ায় ধানের চেয়ে কম খরচে একটি লাভজনক ফসল গম।

তাছাড়া সারের দাম অন্যান্য বারের চেয়ে কম ও কৃষি অধিদফতরের নিয়মিত পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রয়েছে। তাই কৃষকরা গম চাষে ঝুঁকছেন। সবমিলে সময় মত সার, বীজ পাওয়ায় কৃষি বিভাগের জুতসই পদক্ষেপ ও সঠিক সময়ে কৃষকদের পরামর্শ প্রদান, সুষম সার ব্যাবহার, প্রয়োজন মতো সেচ প্রদান এবং রোপনের পর এখন পর্যন্ত প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় রোপিত জমিতে গমের বাম্পার ফলনেরও সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।