প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একুশের বই মেলাকে বইমেলা বলেন আর গ্রন্থমেলা বলেন। তবে বইমেলা বলতেই একটু আপন আপন মনে হয় বেশি। বই মেলা আমাদের প্রাণের মেলা। বই মেলায় আসতে ভালো লাগে।
রবিবার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, সত্যি কথা বলতে এখন দুঃখ লাগে। এখন আর সেই স্বাধীনতা পাই না। আগে ছাত্র জীবনে এখানে দিনের পর দিন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটাতাম। ঘুরে বেড়াতাম বই মেলায়। পুরো সময়টা পারলে থাকতাম। সেটা আর এখন হয়ে উঠে না। এই একটা দুঃখ এখনও থেকে যাচ্ছে। সেই স্বাধীনতা আর পাচ্ছি না। তারপরও বলবো বই মেলায় আসতে ভালো লাগে।
এর আগে বাংলা একাডেমিতে জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিকথা নিয়ে লেখা ‘আমার দেখা নয়া চীন’ নামক তৃতীয় বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেছেন প্রধানমন্ত্রী ।
বইটিতে জাতির পিতার স্মৃতি তুলে ধরে তিনি বলেন, ১৯৫২ সালে পাকিস্তানের প্রতিনিধি হিসেবে চীনের একটি শান্তি সম্মেলনে প্রথম বাংলা ভাষায় বক্তব্য দিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান । মনোজ বসু তার বইতে লিখেছিলেন, একজন যুবক প্রথম বাংলা ভাষা বক্তব্য দিলো। বাংলাভাষাকে বিশ্ব দরবারে নিয়ে যাওয়া, এটা ১৯৫২ সালেই প্রথম বঙ্গবন্ধু করেছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর চীন সফর নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা শুধু চীনে গিয়ে ঘুরে আসেননি । তিনি সেই সঙ্গে নয়া চীনের মানুষের আর্থ সামাজিক অবস্থা, তাদের ভিতরে কী পরিবর্তন আসলো বা সরকার কী কী করেছে, সেখানকার কৃষক শ্রমিক ও ছোট ছোট শিশু কী কী করে সব দেখেছেন। একজন সাধারণ মানুষ কী কী করেন তাও তিনি তুলে ধরেছেন। তিনি শুধু একজন পর্যটক ছিলেন না একজন সমালোচকও ছিলেন, শুধু পর্যটক ছিলেন না একজন পর্যবেক্ষকও ছিলেন। তিনি নারী ক্ষমতায়নের কথা বলেছিলেন। একটি রিকশায় ভ্রমণ করে সেটাও তিনি চমৎকার ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। অর্থাৎ পাকিস্তানের শাসকদের হাতে প্রায় আড়াই বছর বন্দি থাকার পর তিনি যখন চীনে যান এবং সব কিছু ভালোভাবে দেখেছেন । তখন তিনি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন, অনুধাবন করেছেন। পাশাপাশি আমাদের বাংলাদেশী মানুষের যে দুরবস্থার কথা, সেগুলো তিনি তুলে ধরেছেন তার লেখনীতে।
বইটি নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, সবচেয়ে নজর কেড়েছে, একজন রাজনৈতিক নেতা। দেশে এতো অত্যাচার ভোগ করে চীনে গেলেন, সেখানে তিনি দেশের এসব অত্যাচারের কথা কাউকে বলেননি। বরং তিনি বলেছেন, আমাদের দেশে যা হচ্ছে সেটাতো হচ্ছেই। আমরা তো বিদেশে এসে বদনাম করতে পারি না। কিন্তু আমরা এখন দেখি অনেকেই বিদেশে গিয়ে দেশের বদনাম করতে গেলে আরও একটু উৎসাহ নিয়ে বলেন। যা না ঘটে তা একটু বেশি করে বলেন। এই প্রবণতাটা আমরা দেখি। আমি দীর্ঘদিন বঙ্গবন্ধুর আমার দেখা নয়া চীন বইটি নিয়ে কাজ করেছি। বইটি পড়ার পর আমি কয়েকবার চীনে গিয়েছি। আমি দেখি, এই বইয়ে তিনি চীন সম্পর্কে যে ভবিষ্যৎ বাণী করেছেন, আজকের চীন ঠিক সেই জায়গায় উন্নতি করেছে।
তিনি বলেন, আমরা যা কিছু অর্জন করেছি, তা কিন্তু আমাদের রক্ত দিয়েই অর্জন করতে হয়েছে। এটা হলো বাস্তবতা। আমাদের ভাষা কেড়ে নেওয়ার অনেক চেষ্টা করা হয়েছে। এক সময় রবীন্দ্রনাথ কে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কবিতা নিষিদ্ধ হয়েছে। কিন্তু বাংলা ভাষা আজকে বিশ্ব স্বীকৃতি পেয়েছে। ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ২১ ফেব্রুয়ারিকে শহিদ দিবস হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল ১৯৫৬ সালে যখন প্রথম আওয়ামী লীগ প্রথম সরকার গঠন করে। শহীদ মিনার করার প্রকল্পও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে। ইউনেস্কো কর্তৃক বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃত দেওয়ায় আমাদের সময়ে হয়েছে। ভাষা আন্দোলন থেকে মূলত স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু। আর এই স্বাধীনতা আমাদের বড় অর্জন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের চেষ্টা বাংলাদেশকে একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করা। আমি দাবি করে বলতে পারি, গত দশ বছর ক্ষমতায় থেকে এখন বাংলাদেশ কেউ ছোট চোখে দেখতে পারে না। বাংলাদেশকে এখন উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে দেখে। যে জাতি রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা নিয়ে আসে, সে জাতিকে কেউ হেয় বা ছোট করে দেখবে সেটা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য না। আমরা বিজয়ী জাতি, বিশ্ব দরবারে মাতা উঁচু করে চলবো, বিজয়ের বেশে চলবো এবং সেই ভাবে আমরা দেশকে গড়ে তুলতে চাই। জাতির পিতার স্বপ্ন ক্ষুধা মুক্ত দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই।