বাচ্চাদের জন্য উপযুক্ত খাবার বাছাই বা তালিকা তৈরি করা খুবই চ্যালেঞ্জিং। আপনি যেহেতু প্রথমবারের মত তাদেরকে সবকিছু দিচ্ছেন তাই আপনি প্রথম পর্যায়ে কোন কিছুই বুঝতে পারবেন না যে কোন খাবার তাদের দেহে কি ধরণের প্রভাব ফেলবে। তাই শিশুদের খাবার বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত এবং কোন খাবার থেকে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যেমন- অ্যালার্জি বা অন্যকিছু দেখা দেয় কিনা সে বিষয়ে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। অবাক করা বিষয় হল, দুধও এমন একটি খাবার যা শিশুদের শরীরে অ্যালার্জির কারণ হতে পারে।
গরুর দুধে ২০ প্রকার প্রোটিন থাকে। এগুলোর মধ্যে বিটা ও আলফা ল্যাকটো গ্লোবুমিন, গামা গ্লোবুমিন, বোভাইম সিরাম এলবুমিন, কেসিন ইত্যাদি অ্যালার্জির জন্য বেশি দায়ী। এসকল প্রোটিন উপাদানই বাজারজাত বিভিন্ন প্রকার শিশুদুধের প্রধানভিত্তি এবং এটি শিশুর রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। প্রোটিনের পরিপাক প্রক্রিয়া শিশুদের শরীরে অ্যালার্জি অথবা চুলকানির সৃষ্টি করতে পারে এবং তা হিস্টামিনের (চুলকানির জন্য দায়ী রাসায়নিক) মত সারা শরিরে ছড়িয়ে পড়ে। এটিই দুধের অ্যালার্জি হিসাবে পরিচিত।
বাচ্চাদের মধ্যে দুধের অ্যালার্জি খুব বেশি দেখা যায় না। তবে অনেক ক্ষেত্রে বাচ্চাকে মায়ের দুধ থেকে গরুর দুধে অভ্যাস করানোর সময় এসব লক্ষণ প্রকাশ পায়। ১ বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের মাত্র ২% থেকে ৮% দুধের অ্যালার্জিজনিত সমস্যায় ভোগে। এ ধরণের অ্যালার্জি বেশিরভাগক্ষেত্রে ৩ বছর বয়সের পর স্বাভাবিকভাবে ভাল হয়ে যায়। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে এটি ৬ থেকে ৮ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। খুব কম সংখ্যায় এ সমস্যা বয়স্কদের মধ্যে থেকে যেতে পারে।
আরো পড়তে পারেন- শিশুর হাঁপানি, জেনে নিন লক্ষণ ও প্রতিকার
মায়ের বুকের দুধের মাধ্যমেও শিশুর শরীরে অ্যালার্জি দেখা দিতে পারে। বুকের দুধ খাওয়ানো অবস্থায় মা যদি অ্যালার্জিজাতীয় খাবার গ্রহণ করে, তাহলে বুকের দুধ পানের মাধ্যমে শিশুর শরীরেও অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে। যদিও সরাসরি খাবার খাওয়ানো থেকে এ ধরণের প্রক্রিয়ায় অ্যালার্জি হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
দুধে অ্যালার্জির কারণঃ
শিশুদের মধ্যে দুধ পানে অ্যালার্জির প্রধান কারণ হল সরাসরি গরুর দুধ পান, ফর্মুলা মিল্ক (যা গরুর দুধ থেকে তৈরি)। অন্যান্য কারণগুলো হল-
- বংশগত অ্যালার্জি
- অল্প বয়সেই বাচ্চাকে ফর্মুলা মিল্ক খাওয়ানো
- শিশুকে দেওয়া কয়েকটি ভ্যাকসিনের কারণেও অ্যালার্জি হতে পারে
- জন্মের সময়কার পরিস্থিতি, পদ্ধতি, খাবার, পুষ্টি বা কিছু অণুজীবের কারণেও এধরণের অ্যালার্জির সূত্রপাত হতে পারে।
শিশুর দুধের অ্যালার্জির লক্ষণঃ
বুকের দুধ খাওয়ানোর কয়েকদিনের মধ্যে অ্যালার্জির লক্ষণ দেখা দিতে পারে। বুকের দুধের পরিবর্তে ফর্মুলা মিল্ক খাওয়ালেও অ্যালার্জি দেখা দিতে পারে। শিশুদের মধ্যে অ্যালার্জির লক্ষণগুলো নিম্নরুপ
ত্বকে র্যাস বা লাল লাল দাগ
কাশি ও শ্বাসকষ্ট
বমিবমিভাব
ডায়রিয়া
মাথাব্যাথা
খবারে অনীহা
কিছু কিছু ক্ষেত্রে অ্যালার্জির ফলে অ্যনোফিলিক্স জাতীয় তীব্র অ্যালার্জির সৃষ্টি হতে পারে। যা শিশুর রক্তচাপ, ত্বক এবং শ্বাসের ধরণে বিরূপ পরিবর্তন আনতে পারে।
চিকিৎসাঃ
যদি আপনার শিশুর মাঝে উপরের কোন ধরণের লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ঘরে বানানো অর্থাৎ নিজে নিজে বাচ্চার জন্য ওষুধ তৈরি করতে যাবেন না। শিশুর খাবার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। রক্ত, ত্বক বা মলমূত্র পরীক্ষার মাধ্যমে সঠিকভাবে রোগ নির্ণয়ের পর চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খাওয়াতে হবে।
চিকিৎসক দুধের অ্যালার্জি দূর করার জন্য শিশুকে খাওয়ানোর বিকল্প কিছু পরামর্শ দিতে পারেন। চলুন দেখে নেই কি হতে পারে সেগুলো।
১। ফর্মুলা দুধের বিকল্পঃ যেহেতু ফর্মুলা মিল্ক বাচ্চার অ্যালার্জির অন্যতম কারণ তাই সেটা এড়িয়ে চলাই ভালো। বাচ্চার খাবারের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শে ফর্মুলা দুধের বিকল্প খুঁজে বের করতে পারেন।
২। একার্জি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলাঃ যারা সন্তানকে বুকের দুধ পান করাচ্ছেন তাদের খাদ্যাভাসে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। অ্যালার্জি জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে। বিশেষ করে দুগ্ধজাত খাদ্য পরিহার করতে হবে। এসময় পুষ্টির চাহিদা মেটাতে মাছ, মাংস, ডাল, ডিম খেতে পারেন।
৩। এক বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্যঃ এক বছরের বেশি বয়সী কোন বাচ্চার যদি অ্যালার্জি থেকে যায় তাহলে ডাক্তারের পরামর্শে কিছুদিন বুকের দুধ পান করানো বন্ধ রাখতে পারেন। অ্যালার্জির কোন উন্নতি হয়েছে কিনা খেয়াল করে পরবর্তী চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।
প্রতিরোধঃ
অ্যালার্জির ঝুঁকি কমাতে আপনার বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর সময় নিম্নলিখিত সাবধানতা অবলম্বন করতে পারেন।
*শিশুদের ছাগলের দুধ, বাদামের দুধ দেওয়া থেকে বিরত রাখুন কারণ এগুলি অনিরাপদ।
- ডাক্তার আপনাকে হাইপোলজিক ফর্মুলা ব্যবহারের জন্য পরামর্শ দিতে পারে যতদিন না আপনার সন্তান খাবার হিসাবে গরুর দুধের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারছে।
অনেকে অ্যালার্জি এড়াতে শিশুর খাবারে প্রোবায়োটিক এর কথা চিন্তা করেন। যদিও প্রোবায়োটিক শিশু স্বাস্থের উপকারি হিসাবে পরিচিত এবং তা অ্যালার্জি কমাতে সাহায্য করে তবুও এ বিষয়ে আরো বৈজ্ঞানিক গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। প্রচলিত খাবারের প্রতি বাচ্চার প্রতিক্রিয়া কেমন তা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে তবেই তার উপযোগী খাবার তালিকা তৈরি করতে হবে, যা আপনার সন্তানের সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার সহায়ক হিসাবে কাজ করবে।
তথ্যসূত্রঃ firstcry parenting