জীবনের ঝুঁকি জেনেও তামাক চাষ ছাড়ছে না কৃষক

তামাকের নিকোটিন শরীরে প্রবেশ করে নানাবিধ মরণব্যাধি রোগে আক্রান্ত হওয়া সম্ভাবনা শতভাগ জেনেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তামাক চাষ করছে কৃষকরা। বিশেষ করে তিস্তার চরাঞ্চলের কৃষকরা অধিক মুনাফা লাভের আশায় তামাক চাষ ছাড়ছে না। সরকারিভাবে তামাক চাষের উপর বিধি নিষেধ জারি থাকলেও আজও তামাক চাষাবাদ বন্ধ হয়নি। উপজেলার কৃষি কর্মকর্তাগণ তামাক চাষে কৃষকদেরকে অনুৎসাহিত করলেও আজও গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় শতভাগ তামাক চাষ বন্ধ করতে পারেনি। গুটি কয়েক তামাক চাষি ও তামাক শ্রমিকরা দিনের পর দিন তামাক চাষ করে আসছে। সরকারিভাবে তামাক চাষাবাদের কোন প্রকার হিসাব পাওয়া যায়নি উপজেলা কৃষি অফিস হতে। তবে উপজেলায় ১৫ হতে ২০ হেক্টর জমিতে তামাক চাষাবাদ হচ্ছে। এর বেশি ভাগেই চরাঞ্চলে। বেলকা ইউনিয়নের তামাক চাষি আব্দুর রহমান জানান, অন্যান্য ফসলের চেয়ে তামাকে দ্বিগুণ লাভ। এক বিঘা জমিতে তামাক চাষাবাদে খরচ হয় ৩ হতে ৪ হাজার টাকা। যদি ফলন ভালো হয় বা এ গ্রেডের তামাক উৎপাদন হয় তাহলে এক বিঘা জমির তামাক বিক্রি করে ২০ হতে ৩০ হাজার টাকা আয় হবে। এছাড়া তামাক চাষাবাদে বেশি শ্রমিকের প্রয়োজন হয় না। পরিবারের সদস্যরা মিলে এর পরিচর্যা করা যায়। তিনি নিজে তামাক চাষ এবং পরিচর্যার কাজ করে থাকেন। তিনি আরও বলেন, উপজেলার মীরগঞ্জ, বেলকা, হরিপুর, পাঁচপীর বাজারে হাতে গোনা ৫০ জন তামাক শ্রমিক রয়েছে। সব শ্রমিকরা তামাক পরিচর্যার কাজ করে না। কারণ তামাক পরিচর্যা করলে চর্ম রোগ, পেটের পীড়া, কাঁশি, হাঁপানি, য²া, ক্যান্সারসহ বিভিন্ন মরণব্যাধি রোগ হবার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমান বাজারে প্রতি মণ তামাক গ্রেড অনুযায়ী ৬ হাজার হতে ১৫ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে মৌসুমের সময় এর দাম কম। হরিপুর ইউপি চেয়ারম্যান নাফিউল ইসলাম জিমি জানান, তিস্তা নদী মরে যাওয়ায় চরাঞ্চলে তামাকসহ নানাবিধ ফসলের চাষাবাদ করছে কৃষকরা। চরাঞ্চলের মাটি অত্যন্ত উর্বর হওয়ায় ফলনও ভালো হচ্ছে। অল্প শ্রম এবং খরচে অধিক মুনাফা লাভের আশায় এখনো বিভিন্ন চরাঞ্চলে বেশ কিছু সংখ্যক কৃষক তামাক চাষ করে আসছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার আশরাফুজ্জামান জানান, তামাকের নিকোটিন মারাত্মক ক্ষতিকর। তাছাড়া সে সমস্ত ব্যক্তি তামাক পরিচর্যা ও সেবন করেন তারা অল্প সময়ের মধ্যে কোন না কোন রোগে আক্রান্ত হয়ে যান। সে কারণেই তামাক পরিচর্যা এবং সেবন থেকে দুরে থাকা শ্রেয়। উপজেলা অফিসার কৃষিবিদ সৈয়দ রেজা-ই-মাহমুদ জানান, বর্তমানে উপজেলায় তামাক চাষাবাদ নেই বললেই চলে। চরাঞ্চলের গুটি কয়েক কৃষক তামাক চাষ করে আসছে। আশা করছি অল্প কিছু দিনের মধ্যই সম্পূর্ণরূপে তামাক চাষাবাদ বন্ধ হয়ে যাবে।