প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমরা সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এবং দুর্নীতির হাত থেকে রক্ষা করে দেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। দেশের মানুষ শান্তিতে থাকুক, নিরাপদে থাকুক, উন্নত জীবন পাক- সেই লক্ষ্যই আমরা বাস্তবায়ন করছি।’
প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার দুপুরে নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার স্বর্ণদ্বীপে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শীতকালীন মহড়া উপলক্ষে আয়োজিত প্রীতিভোজে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। এর আগে তিনি দ্বীপটিতে প্রশিক্ষণ অনুশীলন ‘অপারেশন বিজয় গৌরব’ প্রত্যক্ষ করেন।
সেনাবাহিনীর ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের তত্ত্বাবধানে ৬৬ পদাতিক ডিভিশন এ আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ স্বাগত বক্তব্য দেন।
প্রধানমন্ত্রী বক্তৃতাকালে সেনা সদস্যদের কর্তব্য, নিষ্ঠা ও দেশপ্রেম সম্পর্কে সচেতন করতে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির প্রথম কোর্স সমাপনীতে ক্যাডেটদের উদ্দেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের চুম্বক অংশ তুলে ধরেন। জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা এনেছি, এই স্বাধীনতা নিশ্চয়ই ইনশাআল্লাহ থাকবে, কেউ ধ্বংস করতে পারবে না। তবে স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে, যদি বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে না পারো। সেই জন্য তোমাদের কাছে আবেদন রইল সৎ পথে থেকো।’
জাতির পিতার কন্যা বলেন, ‘জাতির পিতা সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের লক্ষ করে এ কথা বলেছিলেন। তবে এটা শুধু সশস্ত্রবাহিনীর জন্য নয়, সমগ্র জাতির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।’
স্বাধীন দেশে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার গুরুদায়িত্ব সশস্ত্র বাহিনীর উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনী যেন স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলতে পারে এবং বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে পারে, সেভাইে আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। যার শুভফল ইতোমধ্যেই সবাই পাচ্ছেন। বহুদেশে শান্তি স্থাপনে বিশেষ ভূমিকা রাখার পাশাপাশি সামাজিক কাজেও যথেষ্ট আন্তরিকতার সঙ্গে সশস্ত্রবাহিনী ও পুলিশ বাহিনী ভূমিকা রাখছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক উন্নয়নের কাজ তাদের দিয়ে আমরা করাতে পারছি এবং তারা করে যাচ্ছে। এভাবে একদিকে যেমন দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা হচ্ছে, অন্যদিকে দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রেও অনেক অবদান রেখে যাচ্ছেন আমাদের সেনা সদস্যরা। তিনি সব সেনা সদস্যকে এজন্য অভিনন্দন জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, অন্য কোনো দেশের সৈনিকরা ততটা মানবিকতা দেখায় না, যতটা আমরা বাঙালিরা দেখাতে পারি। কাজেই সেই দিক থেকে আমি মনে করি, প্রশিক্ষণ এবং সমরাস্ত্রের দিক থেকে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার উপযুক্ত আমাদের সশস্ত্রবাহিনী হবে। সে লক্ষ্য নিয়েই আমরা যথেষ্ট কাজ করেছি এবং উদ্যোগ নিয়েছি। শুধু এটুকুই বলব, আমাদের সীমিত সম্পদ দ্বারা যতটুকু সম্ভব, তা আমরা করে যাচ্ছি।
বাংলাদেশ রেজিমেন্টসহ তিনটি পদাতিক বাহিনী আওয়ামী লীগ সরকারই করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের দক্ষিণাঞ্চল একসময় অবহেলিত ছিল। সেখানে কোনো সেনানিবাস ছিল না। সেখানেও আমরা সেনানিবাস করে দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা ১৯৭৪ সালে যে প্রতিরক্ষা নীতিমালা প্রণয়ন করেন, এর আলোকে তার সরকার ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ প্রণয়ন করে সশস্ত্রবাহিনীর উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সদস্যরাও এ মহড়ায় অংশ নেন। আধুনিক ট্যাংক, এপিসিএস, মিগ ফাইটার প্লেন ও তিন সশস্ত্রবাহিনীর এমআই হেলিকপ্টার অনুশীলনে অংশ নেয়। যেখানে বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনী ও শত্রুবাহিনীর মধ্যে ছদ্মযুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়। সশস্ত্রবাহিনীর বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে মহড়া শেষ হয়। ২২২ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুব শত্রুদের বিরুদ্ধে সশস্ত্রবাহিনীর বিজয় অর্জনের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে জানান।
স্থানীয় সংসদ সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধান, প্রধানমন্ত্রীর সচিব এবং উচ্চপদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে ছিলেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণদ্বীপে (পূর্বের নাম জাহাইজ্জার চর) পৌঁছলে সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, ৬৬ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল নজরুল ইসলাম এবং ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল আহমেদ তাবরেজ শামস চৌধুরী তাকে স্বাগত জানান।
পরে সেনাবাহিনীর কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. শামসুল হক ও প্রকৌশল বিভাগের প্রধান মেজর জেনারেল ইবনে ফজল শায়েখুজ্জামান দ্বীপের উন্নয়ন সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন।
প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণদ্বীপে সেনাবাহিনীর সদস্যদের মাধ্যমে নির্মিত ও বাস্তবায়িত তিনটি বহুমুখী সাইক্লোন শেল্টার, পরিকল্পিত বনায়ন প্রকল্প এবং এক মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প উদ্বোধন করেন।
এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা সব থেকে বেশি প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। কেননা একটি আধুনিক বাহিনী গড়ে তোলায় এটি সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ।’
এজন্যই অতীতে জলদস্যুপ্রবণ এ দ্বীপটিকে সেনাবাহিনীর উন্নত প্রশিক্ষণ এবং খোলামেলাভাবে মহড়া করার জন্য ২০১৩ সাল থেকে বরাদ্দ করেছেন এবং এর নামও পরিবর্তন করে দিয়েছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, জাহাইজ্জার চরকে স্বর্ণদ্বীপে রূপান্তরিত করার জন্য আমি সেনা সদস্যদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। এখানে যা যা করণীয়, তা করা হচ্ছে। আমরা তা করব।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের তিন বাহিনীর জন্যই প্রত্যেকটি হেডকোয়ার্টারে আমরা একটি করে বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স করে দিয়েছি এবং সেখানে প্রশিক্ষণের আরও সুযোগ করে দিয়েছি। শিক্ষা-দীক্ষা, প্রশিক্ষণ- সবদিক থেকেই আমাদের সশস্ত্রবাহিনী আরও উন্নত হোক, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নেই আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি।