দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার ভেড়ভেড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ ২ ইউপি সদস্য ও চাল ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ভিজিডির ৪২৩ বস্তা সরকারি চাল বদল করে বাজার থেকে নি¤œমানের চাল বিতরণের অভিযোগ উঠেছে।
নি¤œমানের চাল দেওয়ার বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি খানসামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ করেন আর সেই অভিযোগের স‚ত্র ধরে খানসামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করলে তারা বিষয়টির সত্যতা পেয়েছেন বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে এবং তদন্ত কমিটির চার দিনের তদন্তে উঠে আসে চাল নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যানের চালবাজি । ভিজিডির সুবিধাভোগী একাধিক নারী অভিযোগ করে বলেন, এর আগে যতবার চাল পেয়েছি সব চালই ভালো ছিল। এবার এমন চাল দিয়েছে সেই চালের ভাতই খাওয়া যাচ্ছে না। খুব গন্ধযুক্ত চাল দিয়েছে এবার। বাজারে বিক্রি করলেও এই চাল কেউ কিনবে না। অনুসন্ধানে জানা গেছে, চলতি বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর খানসামা খাদ্য গুদাম হতে ৪২৩ বস্তা আমন গুটি স্বর্ণ জাতের চাল উত্তোলন করেন ভেড়ভেড়ী ইউপি চেয়ারম্যান হাফিজ সরকার। পরদিন ২৫ সেপ্টেম্বর গুটি স্বর্ণ চালের পরিবর্তে বোরো মৌসুমের হাইব্রিড মোটা জাতের চাল বিতরণের সত্যতা সুবিধাভোগীদের বাড়িতে গিয়ে পাওয়া যায়। আমন গুটি স্বর্ণ জাতের চাল প্রতি কেজির দাম সরকারিভাবে নির্ধারণ করা ছিল ৩৬ টাকা। অন্যদিকে চেয়ারম্যানের বিতরণকৃত বাজার থেকে কেনা চালের দাম প্রতি কেজি সর্বোচ্চ ১৮ টাকা হতে পারে বলে জানান তদন্ত কমিটির সদস্যরা। তারা আরো জানান, গত ২৫ সেপ্টেম্বর ভিজিডির চাল বিতরণের সময় ইউপি চেয়ারম্যান হাফিজ সরকারের সহযোগী হিসেবে ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোজাহারুল ইসলাম বাবুল এবং ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রানা, একজন হাসকিং মিল মালিক উপস্থিত ছিলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্ত কমিটির একজন কর্মকর্তা বলেন, গত ২৪ সেপ্টেম্বর ভেড়ভেড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজ সরকার ৪২৩ বস্তা চাল খানসামা খাদ্য গুদাম থেকে ভিজিডির সুবিধাপ্রাপ্ত নারীদের মাঝে বিতরণ করার জন্য নিয়ে যান।তিনি আরো বলেন, সরকারি ক্রয়কৃত ৩৬ টাকা ম‚ল্যের চাল তিনি ওই দিনই স্থানীয় টংগুয়া বাজারের রফিকুল ইসলামের হাসকিং মিলে নিয়ে গেছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের একজন জানান। পরে ওই মিল থেকেই বাজারের নি¤œমানের ও কম দামের চাল পরবর্তীতে ভিজিডির চাল হিসেবে বিতরণ করা হয়।
অভিযুক্ত ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফজলে রাব্বী রানা বলেন, সরকারি গোডাউন থেকে চেয়ারম্যানের নামে ডিও হয় এবং সেই চাল খাদ্য গুদাম থেকে গ্রাম পুলিশরা উত্তোলন করে নিয়ে আসেন। এখানে আমাদের দুর্নীতি করার কোনো সুযোগ নেই। এছাড়াও ট্যাগ অফিসারের প্রতিনিধির উপস্থিতিতেই চাল বিতরণ করা হয়েছিল।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ভেড়ভেড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হাফিজ সরকার বলেন, আমি যে চাল গোডাউন থেকে নিয়ে এসেছি, সেই চালই সবাইকে দিয়েছি। এবিষয়ে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা আমার কাছে জানতে চেয়েছিলেন। আমি তাকে লিখিতভাবে আমার জবাব দিয়েছি।
অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছেন জানিয়ে খানসামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহমেদ মাহবুব-উল ইসলাম বলেন, নি¤œমানের ও কম দামের চাল বিতরণের বিষয়ে ভেড়ভেড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, দুজন ইউপি সদস্য ও একজন মিল মালিকের জড়িত থাকার বিষয়ে মোবাইল ফোনে একাধিক ব্যক্তির অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগ পাওয়ার পর আমি তাৎক্ষণিক উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে আহŸায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি করে দিই। কমিটি চার দিন তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের শতভাগ সত্যতা পায়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরও বলেন, চাল নিয়ে অনিয়মে জড়িত বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।