রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বিগত ৯ বছর আগে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও প্রয়োজনীয় ডাক্তার,যন্ত্রপাতিসহ অন্যান্য জনবল না থাকায় এলাকাবাসী কাংক্ষিত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা সেবা নিতে আসা একাধিক রোগী ও রোগীর অভিভাবকেরা অভিযোগ তুলেছেন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকরা সময়মত আসলেও তারা মুঠোফোনে ফেসবুক নিয়ে ব্যস্ত থাকেন বলে রোগীর স্বজনেরা জানিয়েছেন। সরকারের কোটি টাকা ব্যয়ে রাজশাহীর সর্ব বৃহৎ বাগমারা উপজেলার চার লাখ জনসাধারনের জন্য ৩৩ শয্যা থেকে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি উন্নয়ন করেছিলেন। দেখভোলের কোন লোকজন না থাকায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির চিকিৎসা সেবা ব্যহৃত হচ্ছে বলে এলাকার সচেতন মানুষ মনে করছেন। সরজমিনে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে এমন দৃশ্য নজরে পড়ে। দুই একজন চিকিৎসক থাকলেও তারা বিভিন্ন ঔষুধ কোম্পানীর রিপ্রেন্টিভদের নিয়ে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রমেজান বেওয়া জানান, তিনি দীর্ঘ সময় ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। ঔষুধ কোম্পানীর লোকদের নিয়ে ডাক্তারেরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। ডাক্তারের টেবিলের চারি পার্শ্বে রোগীর ভিড় জমলেও তারা সেদিকে লক্ষ করছেন না। তারা ঔষুধ কোম্পানীর লোকজনদের সাথে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করছেন। এছাড়াও জরুরী বিভাগে রোগী ভর্তি হতে আসলে হাসপাতালে চিকিৎসক ও পরীক্ষা নিরীক্ষার যন্ত্রপাতি নেই বলে তাদেরকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। বিষয়টি জানার পর হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় গিয়ে কোন চিকিৎসককে দেখা যায় নি। নাম জানাতে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক কর্মচারী জানান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোন ধরনের চিকিৎসা হচ্ছে না। চিকিৎসকেরা ৯ টায় হাসপাতালে আসলে তারা বেলা ১১ টা থেকে ১২ টার দিকে যান। এক ঘন্টা থাকার পর তারা আবারো রাজশাহী অথবা অন্য কোন ক্লিনিকে কাজ করতে চলে যায় বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন। যার কারনেই হাসপাতাল থেকে রোগীরা ভাল চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। চিকিৎসকদের এমন চলাফিরার কারনে নার্সদের (সেবিকা) সেবার মান কমে গেছে। কোন কোন সময় নার্সরা রোগী ও রোগীর স্বজনদের সাথে খারাপ আচরন করেন। তাদের আচরনে অনেকেই রোগী নিয়ে বাহিরে ক্লিনিকে চিকিৎসা সেবা দিতে যায়। নার্স ও ওয়ার্ডবয় মুঠোফোনে ফ্রেসবুক নিয়ে ব্যস্ত থাকে। স্যালাইন দেয়া একাধিক স্যালাইন শেষ হয়ে রোগীর শরীর থেকে স্যালাইনে রক্ত ঢোকে যায় দেখার কেউ থাকে না। অধিকাংশ নার্সদের বাড়ি বাগমারায় হওয়ায় তারা রোগী ও রোগীর স্বজনদের সাথে এমন দুর্ব্যবহার করে থাকেন। এলাকাবাসী অভিযুক্ত নার্স ও চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। ভবানীগঞ্জ পৌরসভার কাউন্সিলর হাছেন আলী অভিযোগ করেন, তিনি তার এক আত্মীয় চিকিৎসার খোঁজ খবর নিতে হাসপাতালে এসেছিলেন। তার সঙ্গে চিকিৎসক ও নার্সরা খারাপ আচরন করেছেন বলে তিনি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হককে অবহিত ও ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ করবেন। কাউন্সিলর হাছেন আলী আরো অভিযোগ করেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ আনোয়ারুল কবির নিজ অফিসে বসে সময় কাটালেও তিনি কোন দিন উপরে রোগীদের কাছে যান না। সন্ধ্যায় লাগলেই নারী রোগীরা বিপাকে পড়ে যান। বাতরুম গুলোতে লাইটের ব্যবস্থা না থাকায় এমন সমস্যায় পড়তে হয় বলে চিকিৎসা নিতে আসা একাধি রোগী ও রোগীর স্বজনেরা জানান। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ আনোয়ারুল কবির জনবল সংকটের কারন দেখিয়ে তিনি সকল বিষয় এড়িয়ে যান। এলাকার সচেতন মানুষ হাসপাতালের এমন দৃশ্য দেখে হতবাগ হয়েছেন। তারা অবিলম্বে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বদলী ও অন্যান্য কর্মকচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার মাধ্যমে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা ফিরিয়ে আনতে স্থানীয় সংসদ সদস্যের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন।#