বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: বিশ্বনাথে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে পপি
বেগম (১৯) নামের এক তরুণীর গণধর্ষণের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে
অভিযোগ পাওয়া গেছে। সে উপজেলার অলংকারী ইউনিয়নের লালটেক গ্রামের শুকুর আলীর
মেয়ে। ওই তরুণীর দাফনের দুইদিন পর নিহতের ব্যবহৃত ভ্যানেটি ব্যাগ থেকে তার
মা জোসনা বেগম একটি চিরকুট (সুইসাইড নোট) পান। এই চিরকুটে নিহত তরুণী
আত্বহত্যার কারণ বলে যায়। গত রবিবার বিশ্বনাথ থানা পুলিশের কাছে এই চিরকুট
(সুইসাইড নোট) নিহতের পরিবার দেয়। আজ সোমবার সন্ধ্যায় তরুনীর পিতা শুকুর
আলী বাদি হয়ে ৪জনের নাম উল্লেখ করে গণধর্ষণ মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং
৫।মামলা দায়েরের সত্যতা স্বীকার করে বিশ্বনাথ থানার
অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) শামীম মুসা বলেন, আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশ
তৎপর রয়েছে বলে তিনি জানান।প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার
নিজ বসত ঘরে তীরের সঙ্গে ওড়না পেচিয়ে আত্বহত্যা করে উপজেলার অলংকারি
ইউনিয়নের লালটেক গ্রামের শুকুর আলী মেয়ে পপি বেগম। এমন খবর পেয়ে থানা পুলিশ
ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে লাশটি উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করে। পরদিন ময়নাতদন্ত
শেষে ওই তরুণীকে নিজ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। ওই তরুণী গণধর্ষণের
শিকার হয়েই আত্মহত্যা করেছেন বিশ্বস্থ সূত্রে এমন তথ্য পেয়ে গত রবিবার
দুপুরে স্থানীয় সংবাদকর্মীরা নিহতের বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারের সদস্যদের
সঙ্গে আলাপ করে বিষয়টি নিশ্চিত হন।নিহতের পারিবারিক
সূত্রে জানা গেছে, পপি বেগম গত রবিবার (৬ অক্টোবর) বেড়াতে যায় বড় বোন হেপি
বেগমের স্বামীর বাড়ি দক্ষিণ সুরমা উপজেলার তেতলী ইউনিয়নের চেরাগী গ্রামে।
সেখান থেকে গতকাল রবিবার তাকে বাড়িতে নিয়ে আসার কথা থাকলেও গত বৃহস্পতিবার
সকালে পপি নিজ বাড়িতে চলে আসতে কান্না কাটি শুরু করে। একপর্যায়ে তাকে ওই
দিন দুপুরে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন ভগ্নিপতি ফয়জুল ইসলাম। এরই মধ্যে ফয়জুল
ইসলাম বড় ভাই নুরুল ইসলাম তেতলী পয়েন্টে গিয়ে লোকমূখে জানতে পারেন তার
ভাইয়ের শালিকা পপি সারা রাত বাহিরে পেয়ে স্থানীয় চেরাগী গ্রামের জাহাঙ্গীর
আলম (৩৫) নামের এক যুবক বাড়িতে পৌছে দেয় পপি বেগমকে। এমন সংবাদ পেয়ে
তাৎক্ষণিক লালটেক গ্রামের পপির বাড়িতে ছুটে আসেন নুরুল ইসলাম এবং তিনি পপির
সাথে একান্তে আলাপ করে রাতে কোনো ঘটনা ঘটেছে কি না তা জানতে চান। কিন্ত
পপি বেগম তাকে কিছুই না বলায় তিনি নিজ বাড়িতে ফিরে গিয়ে শুনতে পান পপি
আত্মহত্যা করেছে। নিহতের মা জোসনা বেগম সাংবাদিকদের জানান, গত রবিবার মেয়ে
পপি বেগমের ব্যবহৃত ভ্যানেটি ব্যাগ হাতে নিয়ে তিনি মেয়ের রেখে যাওয়া স্মৃতি
দেখতে গিয়ে ওই ব্যাগের মধ্যে পপির নিজ হাতে লেখা একটি কাগজ দেখতে পান।
এসময় তিনি প্রতিবেশী লোকজনকে ওই কাগজটি দেখান। তখন কাগজ পড়ে জানতে পারেন
গণধর্ষণের শিকার হয়ে লজ্জায় তার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে।জোসনা
বেগম আরো জানান, তার মেয়ে পপি বেগমের নিজ হাতে লেখা ওই কাগজ (সুইসাইড নোট)
পড়ে তিনি জানতে পারেন গত বুধবার দিবাগত রাতে বোনের বাড়িতে অবস্থানকালে
প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে পপি বেগম ঘরের বাহিরে যায়। তখন পূর্ব থেকে উৎ পেতে
থাকা দুই ব্যক্তি তাকে জোরপূর্বক উঠিয়ে নিয়ে যায় এবং তার মুখ, হাত ও পা
বেঁধে মারধর করে রাতভর পাশবিক নির্যাতন করে। এরপর ভোর রাতে পপিকে বোনের
বাড়িতে (যেখান থেকে উঠিয়ে নেওয়া হয়, সেই স্থানে) ফেলে রেখে যায় ওই দুই
ব্যক্তি। তবে ওই দুই জনকে পপি চিনতে পেরেছে এবং তাদের নামও সুইসাইড নোটে সে
উল্লেখ করেছে বলে সাংবাদিকদের জোসনা বেগম জানান।